মদন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: চারজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন ২ লাখ মানুষের, ৫০ শয্যার ৩১টিই অকেজো
জাকির আহমেদঃ
মদন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যার মধ্যে ৩১টিই অকেজো। অপরদিকে চিকিৎসক, অবকাঠামো সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। হাসপাতালে ২৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন মাত্র ১০ জন। বাকি ১৯ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। ১০ জন চিকিৎসকের মধ্যে অন্য হাসপাতালে সংযুক্তিতে ৬ জন কর্মরত। ৪ জন চিকিৎসক প্রায় ২ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন।
চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চিকিৎসক দেখাতে না পেরে বাধ্য হয়ে শহর বা ক্লিনিকমুখো হচ্ছেন। প্রতিদিন আউটডোরে ৩৫০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। উপজেলায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল।
এছাড়াও আশপাশের উপজেলা আটপাড়া, খালিয়াজুরি থেকেও এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন অনেক রোগী। এত সংখ্যক জনগণের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারী ৩০ পদের মধ্যে আছেন ২০ জন। ১০টি পদ শূন্য, নার্স ৩০ পদের বিপরীতে আছেন ২১ জন। ৯টি পদই শূন্য। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৬ জনের মধ্যে ৩টি শূন্য। স্বাস্থ্য পরিদর্শকের দুটি পদই শূন্য। আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, এক্সরে, প্যাথলজিও জনবল সংকটে বন্ধ রয়েছে। এদিকে ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে কার্যক্রম চলছে মাত্র ১৯ শয্যায়। ৩১ শয্যা অকেজো।
মদন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভার ২ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল এটি। চিকিৎসাসেবা চলছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে কার্যক্রম চলছে মাত্র ১৯ শয্যায়। ৩১ শয্যার ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকলেও একে ভালো করার কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ রোগীসহ স্থানীয়দের। ফলে ঝুঁকিতেই সেবা নিতে আসছেন হাওড় জনপদের মানুষ। অনুসন্ধানে জানা যায়, হাওড়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
কিন্তু এক দশক ধরে দেওয়াল ধসে পড়াসহ জরাজীর্ণ অবস্থা আর পলেস্তারা খসে পড়ায় মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসা রোগীসহ স্বাস্থ্য সেবা দানকারী সবাই। এদিকে ২০১৫ সালে সেবার মান উন্নত করার লক্ষ্যে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে ১৯ শয্যার নতুন ভবন নির্মাণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। ফলে ওই ভবনে এখন আশ্রয় হয়েছে সবার।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূরুল হুদা খান বলেন, চিকিৎসক ও ভবন সংকট নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার প্রতিবেদন দাখিল করেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা এখনো হয়নি।
নেত্রকোনা সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য জানান, ভবন সংকট নিয়ে বারবার বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে আসছি। তাছাড়া চিকিৎসক সংকট নিয়েও আমরা তথ্য দিয়েছি। তবে যারা ডেপুটেশনে আছেন, তাদের স্ব স্ব কর্মস্থলে আসতে হবে-এমন নির্দেশনাও রয়েছে। জনবল সংকট অচিরেই নিরসন হবে।