নেজা ডেস্ক:
সংবাদমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় অনির্বাণ এক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাংবাদিকদের জাতির বিবেকও বলা হয়। সংবাদপত্রের যাত্রা যথেষ্ট প্রাচীন হলেও বতর্মানেও সংবাদপত্র ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেশীয়ও আন্তজার্তিক পরিমণ্ডলে তাৎপর্যপূর্ন ভুমিকা পালন করছে। বাংলাদেশেও গণমাধ্যম তাৎপর্যপূর্ন ভুমিকা পালন করছে।
একটি দেশের গণমাধ্যম, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, গনতন্ত্র চর্চা, প্রশাসনের সুশাসনের জবাবদিহিতা থাকলে গণমাধ্যমে কোন প্রতিবন্ধকতার সম্ভাবনা থাকার কথা নয়। বতর্মানে আমাদের দেশে বাংলাদেশে গণমাধ্যম এর অবাধস্বাধীনতা বলতে অসংখ্য গণমাধ্যমের অনুমোদন দিয়েছে। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় বেশি গণমাধ্যমের অনুমোদন সরকার দিয়েছে এতটুকুই স্বাধীনতা।
অনুমোদন ছাড়া অনেক ভিডিও নিউজ প্রকাশ করছে।
এতে করে স্যোসালমিডিয়ায় ইউটিউব চ্যানেল, সব মিলে সাংবাদিকতার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। কেন্দ্রীয় শহর, রাজধানী শহর, বিভাগীয় শহর, জেলা শহর পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে প্রকাশনার সংখা। মফস্বল সাংবাদিকতা বেড়েছে হুহু করে। ব্যাপক বিস্তার লাভ করছে।
বিশেষ করে ১৯৯১ সাল থেকে সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চা পূনরায় চালু হয়ায় মিডিয়া ডিক্লেয়ারেশন সহজ হয়ছে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি এগিয়ে আসায় অসংখ্য পোর্টাল, ইউটিউবার গজিয়ে উঠেছে ব্যাংঙের ছাতার মত। বর্তমান সরকারের শতাধিক অনলাইন পোর্টালা নিবন্ধন এর আওতায় আনা হলেও অনিবন্ধিতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচছে দিন দিন। উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিক, এমন কি জেলা পর্যায়ের কোনো কোনো সাংবাদিককে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার বেতন ভাতা, সুযোগ সুবিধা দেন না। তবে তারা কোনো কোনো সময় অস্থায়ী নিয়োগ পত্র, নাম মাত্র একটি পরিচয়পত্র, পত্রিকার সৌজন্য কপি হাতে ধরিয়ে দিয়ে দায়িত্ব কর্তব্য শেষ করেন।
তার পরেও কোনো কোনো সময় গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ না পাঠানো হলে ধমক খেতে হয়। সাংবাদিকতা হারানো ভয় থাকে। তবে হাতে গোনা কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় নিয়োজিত সাংবাদিকদের মাত্র অনারিয়াম সহ অনান্য সুবিধা সহ প্রতিমাসে সম্মানী দিয়ে থাকেন। যারা উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিক সার্বক্ষণিক পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন তাদের করুনা দশা। তাদের নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা। আর যারা সাংবাদিককে নেশা বা দ্বিতীয় পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন তাদের কথা আলাদা।
জীবনযাপনের জন্য সার্বক্ষণিক সাংবাদিকদের আরও অনেক কিছু করতে হয়। স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সাংবাদিকদের অবস্থা আরও করুন। বেতন ভাতা, সুযোগ সুবিধাবিহীন নিয়োগকৃত সাংবাদিক পরিচয়পত্র বহনকারী ওই সব সাংবাদিকরা পরিচয়পত্র ভাঙ্গিয়ে খেতে তারা অভ্যস্ত। ওই সব সাংবাদিকরা বাধ্য হয়ে হলুদ সাংবাদিকতার পথ বেছে নেয়। তারা সারাক্ষণ থানায় কিছু কর্মকতাদের পেছন পেছন থাকে। কোনো ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিকে, হেরোইন, সহ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে চার্জসিট থেকে বাদ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় পুলিশ ও সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলের নেতা পাতিনেতাদের মিলে ভাগ বাটোয়ারা করে খাওয়া এসব অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে। মাদক সম্রাট, ইয়াবা, হেরোইন ব্যবসায়ীদের বাড়ি, তাদের পিছন পিছন ঘুরতে থাকে। কিছু অর্থিক সুবিধার জন্য। জনপ্রতিনিধি ও মাদক সম্রাটদের সাথেও সখ্যতা রেখে অবৈধ পথে কালো টাকা আয় করতেও দ্বিধা করে না।
ফলে জাতির বিবেক সাংবাদিকতা হয়ে যায় বিতর্কিত কলঙ্কিত, মহান পেশা সাংবাদিক থেকে হয়ে যায় সাংঘাতিক। এত কিছুর পরেও সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষ পত্রিকার প্রচার সংখ্যা বাড়ানো, বিজ্ঞাপনের জন্য বিনা বেতন ভাতায় মফস্বল এলাকায় সাংবাদিক নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেন।
তবে হাতেগনা কয়ক জন ছাড়া মফস্বল সাংবাদিকদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞা, মেধা, প্রতিভা যা থাকা দরকার তা কোন অংশে কম নেই অথচ তারা মর্যদা ও আর্থিক সুযোগ সুবিধা পান না। সাংবাদিকতা সবচেয়ে ঝঁকিপূর্ণ পেশা। এ পেশায় দৈহিক নিরাপত্তার ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনী আছে অর্থনৈতিক ঝুঁকিও। এ উভয় ঝঁকি তুলনামূলকভাবে মফস্বল সাংবাদিকের বেশী। অথচ আর্থিক তেমন সুযোগ সুবিধা নেই। দেশ ও জনস্বার্থে অবৈধ মাদক, চোরাকারবারী, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সরকারি জমি দখল, শোষণ জুলুম ইত্যাদি সম্পর্কে বস্তনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে গেলে কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলের বিরাগ ভাজন হতে হয়।
প্রতিটি রিপোর্টের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ থাকেই। পুলিশ, ডিবি পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, পৌর মেয়র, চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রীদের রিপোর্ট করলেই হতে হয় হয়রানির শিকার। মিথ্যা ধর্ষণ, হত্যা, চাঁদাবাজি প্রভৃতি মামলার আসামি। যেতে হয় জেলাখানায়, অন্যথায় ঘরবাড়ি, পরিবার পরিজন ত্যাগ করে মাথায় হুলিয়া নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। অকালে হারাতে হয় প্রাণ, পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়, মামলা হামলাসহ চোরাচালানী মাদক ব্যবসা, পুলিশ, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে হয়।
স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় নিয়োগকৃত সাংবাদিকদের বেতন ভাতা তো দূরের কথা প্রতিষ্ঠিত জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে নিয়োগকৃত সাংবাদিকরা কোন বেতন ভাতা পান না। এমন অনেক দৈনিক সংবাদপত্র আছে যারা তাদের উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র সরবারাহ করেই সব কাজ আদায় করে নেন। বেতন ভাতা তো দূরের কথা তাদের নিয়োগপত্র পর্যন্ত দেওয়া হয় না। যারা সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন, তারা নিয়োগ পত্র না পেয়ে বেতন ভাতা না পেয়ে কিভাবে চলেন, কিভাবে জীবনজীবিকা নির্বাহ করেন সেটা একটা বড় প্রশ্ন থেকেই যায়।
আগেই বলা হয়েছে সাংবাদিকতা করেন অনেকে পেশা হিসেবে, মফস্বল এলাকায় এমন কতকগুলো সাংবাদিক রয়েছে যাদের কোন একাডেমিক সনদপত্র নেই। ওই সব সাংবাদিকরা সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। তারা সাংবাদিকতার পরিচয় পত্রকে ভাঙ্গিয়ে চলেন সারাদিন চষে বেড়ান থানা, উপজেলা, পৌরসভা, সহ গ্রামে।
স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা গুলো শুধু সরকারী বিজ্ঞানের আশায় প্রকাশ করে। কতিপয় পত্রিকার মালিকগণ লাভবান হয়। অন্য দিকে শুধু সরকারি বিজ্ঞাপন কালেকশন করার জন্যে সাংবাদিক নিয়োগ দিয়ে থাকে পত্রিকাগুলো। পড়াশুনা বা অন্য যোগ্যতার কোন বিবেচনায় আসে না।
বর্তমানে এসবকারণেইঅপসাংবাদিকতার সৃষ্টি হচ্ছে। সংবাদপত্রের মালিক জনগণ, জনগণের জন্যই প্রচারিত গণমাধ্যম তাদের কাছেও সাংবাদিকতা পেশার আকর্ষিত হচ্ছে ও বিশ্বস্ত হচ্ছে। অসাংবাদিকতা বেড়ে প্রকৃত সংবাদ কর্মী গন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, জেলা প্রশাসন বিষয়গুলো ওয়াকিবহাল হলেও স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকতার মানদণ্ডে ফিরিয়ে আনতে পারছে না। আমাদের সুপারিশ থাকবে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এর মাধ্যমে সঠিক যাচাই বাচাই করে প্রকৃত গণমাধ্যম ও প্রকৃত সংবাদ কর্মীদের তালিকা প্রনয়ন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার সুস্থ পরিবেশ ফিরে আনবে। (লেখক: দিলওয়ার খান প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এআরএফবি, জেষ্ঠ্য সাংবাদিক, ইমেইল arfbd2011@gmail)
সম্পাদক ও প্রকাশক- মুহা. জহিরুল ইসলাম অসীম
অস্থায়ী কার্যালয় : এআরএফবি ভবন, নেত্রকোণা - ময়মনসিংহ রোড, সাকুয়া বাজার মোড়, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা-২৪০০। ফোনঃ ০১৭৩৫-০৭৪ ৬০৪, বিজ্ঞাপন: ০১৬৪৫-৮৮ ৪০ ৫০, ই-মেইল: netrokonajournal@gmail.com
সম্পাদক কর্তৃক এআরএফবি ভবন, ময়মনসিংহ রোড, সাকুয়া বাজার, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত..... [সর্বাধিক পঠিত নেত্রকোণার একটি আঞ্চলিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম]