মানব সেবার অগ্রদূত ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক  :  বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু

১৯৬৪ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে কারাভোগ করেন

প্রকাশিত: ১:৪৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২৩
প্রচ্ছদ: অসীম

নেজা ডেস্ক :
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও নেত্রকোণায় আওয়ামীলীগের রাজনীতির ইতিহাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু এক অপরিহার্য নাম। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আশরাফ আলী খান এর জীবন ঘটনাবহুল ও বৈচিত্রময়। তিনি পরাধীন আমলে আয়ুব শাসনের রক্তচক্ষু আর দু:সহ নির্যাতন উপেক্ষা করে নেত্রকোণায় ছাত্রলীগের সংগঠন করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে জীবন বাজী রেখে লড়াই করেছেন, ছিনিয়ে এনেছেন সকলে মিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু ১৬ ফেব্রুয়ারি্, ২০২০ তারিখ থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

জন্ম:
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু নেত্রকোণা জেলা শহরের এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪৯ সালের ২২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নূরুল ইসলাম খান (এন আই খান) এবং মাতা মরহুমা হেনা ইসলাম। তাঁর পিতাও আওয়ামীলীগের একজন নেতা ওমুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন।

১৯৭১ সালে ২৩ মার্চ নেত্রকোণা মুক্তারপাড়া মাঠে জয়বাংলা বাহিনী কর্তৃক সালাম গ্রহণ করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খানের মাতা হেনা ইসলাম নেত্রকোণা মহকুমা আওয়ামীলীগের মহিলা সম্পাদিকা ছিলেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঘমারা রিফিউজি ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবিকা হিসেবে কাজ করেন তিনি। তাঁর সহধর্মিনী কামরুন্নেছা আশরাফ দীনা নেত্রকোণা জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। নেত্রকোণা জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য। তাঁর স্থায়ী ঠিকানা- এন আই খান ভবন, মোক্তার পাড়া, নেত্রকোণা।

শিক্ষাজীবন:
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু ঐতিহ্যবাহী দত্ত উচচ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক ও নেত্রকোণা সরকারি কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

রাজনৈতিক  জীবন:
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি শ্রমিকলীগ ও আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। ১৯৬২ সালে নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে মোঃ আশরাফ আলী খান খসরুর রাজনীতির পথ চলা শুরু হয়। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যান্য সদস্য যারা ছিলেন তারা হলেন সভাপতি  জনাব মেহের আলী ও সেক্রেটারী জনাব শামসুজ্জোহা,জনাব জামাল উদ্দিন আহম্মেদ, বিপ্লব চক্রবর্তী,হায়দার জাহান চৌধুরী, মতিয়র রহমান খান, শহিদ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল ওয়াহেদ, আ: মান্নান, আব্দুর রহমান, আলাউদ্দিন খান, ধীমান রঞ্জন বিশ্বাস (ভারত প্রবাসী)(জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন)।

১৯৬৪ সালে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রথম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম স্থপতিও  মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু । সব আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু দত্ত উচচ বিদ্যালয়ের উত্তর পশ্চিম কোণে কাচারি রোডের সংযোগস্থলে তিন রাস্তার মোড়ে বর্তমান শহীদ মিনারের প্রধান গেইটের জায়গায় তৎকালীন নেত্রকোণা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সর্বজনাব মেহের আলী, প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী শামসুজ্জোহা, জামাল উদ্দিন আহমেদ( জনাব মেহের আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবার পর সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়), হায়দার জাহান চৌধুরী, মতিউর রহমান খান,গাজী মোশারফ হোসেন, হাবিবুর রহমান খান(খসরু),সাখাওয়াত হোসেন এর নেতৃত্বে প্রথম শহীদ মিনারটি স্থাপিত হয়। তিনি ১৯৬৪ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে কারাভোগ করেন।

তিনি ১৯৬৬-৬৮ সাল পর্যন্ত নেত্রকোণা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, ১৯৬৮-৬৯ পর্যন্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৬৯-৭০ সাল পর্যন্ত নেত্রকোণা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে কম্পানী কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২-৭৩ সাল পর্যন্ত নেত্রকোণা জেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৬ সালে সামরিক সরকারের জরুরি অবস্থাকালীন এক বৎসর কারাভোগ করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদান করেন। তিনি ১৯৯৭-২০০৪ সাল পর্যন্ত নেত্রকোণা জেলা আওয়ামীলীগের  যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নেত্রকোণা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কর্তৃক পুনরায় তিনি নেত্রকোণা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে বিএনপি কর্তৃক তার বাড়িঘরে হামলা এবং পুলিশি নির্যাতন করা হয়। মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু ২০০৮ সালেও ১৫৮ নেত্রকোণা-২ (নেত্রকোণা সদর ও বারহাট্টা) এর জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন।

 সমাজসেবা:
তিনি নেত্রকোণা সদরের চল্লিশাস্থ হেনা ইসলাম মহাবিদ্যালয়, নেত্রকোণা সদরের রৌহা ইউনিয়নস্থ মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুধকুড়াস্থ কামরুন্নেছা আশরাফ প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠাতা এবং নেত্রকোণা পৌরসভাস্থ দি হলি চাইল্ড কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, নেত্রকোণা পাবলিক লাইব্রেরি, নেত্রকোণা রাইফেলস ক্লাব এবং শিল্পকলা একাডেমির আজীবন-সদস্য।

পুরষ্কার ও সম্মানণা:
তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে ৭ জানুয়ারি, ২০১৯ তারিখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি্, ২০২০ তারিখ থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

লেখকঃ আহমেদ সমিরুদ্দীন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, প্রাবন্ধিক।
[প্রখ্যাত সাহিত্যিক ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ননী গোপল সরকারের প্রবন্ধ অগ্নিযুগের সূর্যসৈনিক : বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মেহের আলী, মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সংগঠক : ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী , প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট সাবসেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিমুযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরীর মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোনা, মুক্তিযুদ্ধে মুজিববাহিনী, হায়দার জাহান চৌধুরীর প্রবন্ধ “শহীদ মেহের আলী একটি নাম, একটি ইতিহাস “, “ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি ও ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ , মহেষখলা ক্যাম্প, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক খালেকদাদ চৌধুরী ও মেহের আলী প্রসঙ্গ ,নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধু, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক,প্রাবন্ধিক সাবসেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিমুযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমানের মুক্তিসংগ্রামে নেত্রকোণা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসানের গ্রন্থ “ মুক্তিযুদ্ধে মোহনগন্জ-মহেষখলা ক্যাম্প ও ডাঃ আকলাখ হোসেন আহমদ “, ভাষা সংগ্রামের জন্যে রাষ্ট্রিকিট হওয়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ভাষা সৈনিক আজিম উদ্দীন আহমেদ সাহেবের প্রবন্ধ “,অসমাপ্ত গল্প, ভাষা সৈনিক আজিম উদ্দীন আহমেদ সাহেবের প্রবন্ধ “একাত্তরের রক্তঝরা দিনগুলো”-আমাদের ময়মনসিংহ, জাতীয় সাহিত্যিক একুশে পদক প্রাপ্ত প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক সানাউল্লাহ নূরী  সাহেবের বিবৃতি “ নেত্রকোণায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেহের আলীর স্মরণসভায় সানাউল্লাহ নূরী-  ২৬-০৬-১৯৯৪ দিনকাল, বিভিন্ন জাতীয় ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎাকার, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎাকার, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা, টিভি সংবাদ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ভিডিও, অডিও ও মেহের আলীর ডায়েরী অবলম্বনে লেখা হয়েছে।]

  1. এই লেখকের লেখা আরও পড়ুন……
    বাংলাদেশে নারী অধিকার আন্দোলনের প্রতীক : বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম
  2. ইতিহাসের সাক্ষী : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
  3. আরও পড়ুন……
    ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি ও ৭১’- র মুক্তিযুদ্ধ : বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
  4. শহীদ মেহের আলী একটি নাম, একটি ইতিহাস : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
  5. নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধু: বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
  6. মুক্তিযুদ্ধের স্মারক : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
  7. নেত্রকোণার রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ মরহুম জননেতা আব্দুল খালেক এমপি
  8. জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে শিশু সংগঠন কচি-কাঁচার মেলা : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
  9. নেত্রকোণা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ইতিহাস : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
  10. কথা সাহিত্যিক, মহেষখলা ক্যাম্প ট্রাইব্যুনাল তথা আদালতের বিচারপতি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকদাদ  চৌধুরী (পর্ব -১)
  11. কথা সাহিত্যিক, মহেষখলা ক্যাম্প ট্রাইবুনালের বিচারপতি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকদাদ  চৌধুরী (পর্ব -২)

    More read…

  12. নেত্রকোনার শহীদ বুদ্ধিজীবিবৃন্দ : ইন্জীনিয়ার জামান
  13. মুক্তিযোদ্ধার আত্মকথা : বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শামছুজ্জোহা- প্রিয়ঙ্কর বিশ্বাস তন্ময়

    আরও পড়ুন…..

  14. মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সংগঠক: ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ- অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার
  15. স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী  (পর্ব-১)
  16. স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী (পর্ব-২)
  17. স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী  (পর্ব-৩)
  18. স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী  (পর্ব-৪)
  19. স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী  [৫ম (শেষ) পর্ব]