
ইসলামিক জার্নাল ডেস্ক:
মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, ইন্নালিল্লাহসহ কিছুি নিত্য ব্যাবহার্য্য শব্দের সঠিক অর্থ ও ব্যাবহার ও কিছু আরবী শব্দের বাংলা অর্থ যা আমরা প্রতিদিন বলি। আসুন কিছু ভুল থেকে বাঁচি, সঠিকটা জানি। কিছু সন্দেহের নিরসন করি।
”মাশাআল্লাহ” একটি আরবি শব্দ । এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তাই হয় ।
কখন এটা বলতে হয়ঃ
১। সুন্দর কোন কিছু দেখলে ।
২। কেউ কোন ভালো কাজ করলে ।
৩। কারো সফলতা দেখলে ।
আমরা অনেকেই জানি না, কখন মাশাআল্লাহ বলতে হয় আর কখন সুবহানাল্লাহ বলতে হয় ।
১)মাশাআল্লাহঃ মাশাআল্লাহ শব্দের অর্থ- আল্লাহ যেমন চেয়েছেন। এটি আলহামদুলিল্লাহ শব্দের মতোই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে কোনো সুন্দর এবং ভালো ব্যাপারে এটি বলা হয়। যেমন- মাশাআল্লাহ তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো।
২) সুবহানাল্লাহঃ সুবহানাল্লাহ শব্দের অর্থ- আল্লাহ পবিত্র ও সুমহান। আশ্চর্যজনক ভালো কোন কাজ হতে দেখলে সাধারণত এটি বলা হয়ে থাকে। যেমন- সুবহানাল্লাহ! আগুনে পুরো ঘর পুরে গেলেও কুরআন শরীফ অক্ষত আছে।
৩) নাউযুবিল্লাহঃ নাউযুবিল্লাহ শব্দের অর্থ- আমরা মহান আল্লাহর কাছে এ থেকে আশ্রয় চাই।
যে কোনো মন্দ ও গুনাহের কাজ দেখলে তার থেকে নিজেকে আত্মরক্ষার্থে এটি বলা হয়ে থাকে।
৪) আসতাগফিরুল্লাহঃ আসতাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ- আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
অনাকাঙ্খিত কোন অন্যায় বা গুনাহ হয়ে গেলে আমরা এটি বলবো।
৫) ইন্নালিল্লাহ বা ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জিউনঃ এটার অর্থ- নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁর দিকেই ফিরে যাবো। যে কোনো দুঃসংবাদ বা বিপদের সময় আমরা এটি বলবো।
৬) লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহঃ এর অর্থ- মহান আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তা ছাড়া আর কোন আশ্রয় ও সাহায্য নেই। শয়তানের কোন ওয়াসওয়াসা বা দূরভিসন্ধিমূলক কোন প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য এটি পড়া উচিত।
এছাড়াও আমরা আরো কিছু বাক্য প্রয়োগ করতে পারিঃ কারো সাথে দেখা হলে- আসসালামু আলাইকুম (আপনার উপর মহান আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) বলা। কিংবা কেউ আপনার কোন উপকার করলে- জাযাকাল্লাহু খাইরান (মহান আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন) বলা। অথবা, কারো কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময়- আল্লাহ হাফেজ (মহান আল্লাহ সর্বোত্তম হিফাজতকারী) অথবা ফি আমানিল্লাহ বলা।
✪ মাশাল্লাহ নাকি মাশাআল্লাহ?
মাশাল্লাহ নয়, মাশাআল্লাহ্ বলুন। এর অর্থ ‘আল্লাহ্ যা চান/ইচ্ছা করেন।’
মাশাআল্লাহ্ এর শাব্দিক বিশ্লেষণ এরূপ:
মা = যা
শা(আ) = ইচ্ছা করেন/চান
আল্লাহ = আল্লাহ
ভেঙে ভেঙে ‘মা শা আল্লাহ’ এভাবেও বলতে পারেন। মূল আরবি: مَا شَاءَ اللّٰه
একইভাবে, ‘ইনশাল্লাহ’ না বলে বলুন ‘ইনশাআল্লাহ’। এর অর্থ ‘যদি আল্লাহ্ চান/ইচ্ছা করেন।’ ভেঙে ভেঙে ‘ইন শা আল্লাহ’ বললেও অসুবিধা নেই। এর শাব্দিক বিশ্লেষণ এরূপ:
ইন = যদি
শা(আ) = ইচ্ছা করেন (চান)
আল্লাহ্ = আল্লাহ্। মূল আরবি: إِنْ شَاءَ اللّٰه
✪মোহাম্মদ নাকি মুহাম্মাদ?
‘মোহাম্মদ’ বললে সঠিক উচ্চারণ হয় না। তাই, বলুন ও লিখুন ‘মুহাম্মাদ’। এর অর্থ ‘প্রশংসিত।’ মূল আরবি: مُحَمَّد
✪ রাব্বাতুল বাইত নাকি রাব্বিয়াতুল বাইত?
আরবিতে গৃহীণীকে বলা হয় ‘রাব্বাতুল বাইত’। এর অর্থ: ঘরের পরিচালিকা, প্রতিপালিকা, অভিভাবিকা। অনেকেই এর ভুল অনুবাদ করেন, ‘ঘরের রানি’, এই অনুবাদ ভুল। আবার অনেকেই ‘রাব্বাতুল বাইত’ না বলে ‘রাব্বিয়াতুল বাইত’ বলেন। এটিও ভুল। মূল আরবি: رَبَّةُ الْبَيْت
✪ আস্তাগফিরুল্লাহ নাকি আস্তাকফিরুল্লাহ?
এখানে সঠিক শব্দ ‘আস্তাগফিরুল্লাহ্’। এর অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই/চাচ্ছি। ‘আস্তাকফিরুল্লাহ’ শব্দটি অর্থহীন। আরবিতে এমন কোনো শব্দ হয় না। মূল আরবি: أَسْتَغْفِرُ اللّٰه
✪ সঠিক কোনটি—বরকত নাকি বারাকাহ? আরবি মূল শব্দটির একদম পারফেক্ট উচ্চারণ হলো ‘বারাকাহ্’। এর অর্থ: প্রাচুর্য, কল্যাণ। তবে, ‘বরকত’ শব্দটিও সঠিক, এটিও বলা যাবে। এটি বাংলার প্রভাবে এমন হয়েছে। ‘বরকত’ বললেও অর্থের হেরফের হবে না। মূল আরবি: بَرَكَةٌ তেমনি পারফেক্ট উচ্চারণ হলো, ‘রাহমাহ’, যার অর্থ: দয়া, অনুগ্রহ। তবে ‘রহমত’ বললেও অসুবিধা নেই। অর্থের হেরফের হবে না। মূল আরবি: رَحْمَةٌ
✪ যুহ্দ নাকি যুহুদ? সঠিক শব্দ ‘যুহ্দ’, যার মানে উপেক্ষা বা দুনিয়াবিমুখতা; দুনিয়ার প্রতি যার আকর্ষণ নেই। অনেকেই ‘যুহুদ’ লিখেন। এটি আসলে সঠিক নয়। মূল আরবি: زُهْدٌ
✪ ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম’ কি সঠিক? জি না। সালামের সঠিক জবাব হলো, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’। মূল আরবি: وَعَلَيْكُمُ ٱلسَّلَامُ
✪ আল্লাহু আকবার নাকি আল্লাহু আকবর? এই ভুলটি অনেকেই করেন। আরবিতে স্পষ্টভাবেই ‘বা’ হরফের উপর যবর রয়েছে। তাই, সঠিক হলো, ‘আকবার’। এর অর্থ: সবার বড় বা সর্বশ্রেষ্ঠ। মূল আরবি: اَللّٰهُ أَكْبَر
আরও পাড়ুন: চন্দ্রগ্রহণ কি আপনার শিশুর বা গর্ভাবস্থার ক্ষতি করতে পারে?
মাওঃ আবু তাহের নেত্রকোনী।
প্রতিষ্ঠাতা, দারুল উলুম ক্বাওমি মাদ্রাসা।
ভূগী (উত্তর পাড়া), পূর্বধলা, নেত্রকোণা।
নিয়মিত লেখকঃ ইসলামিক জার্নাল বিভাগ,
নেত্রকোণা জার্নাল ডটকম পত্রিকা।