মুক্তিপণে ছাড়া পেলেন ঢাকায় অপহৃত কেন্দুয়ার দুই সাংবাদিক
মজিবুর রহমান :
ঢাকায় অপহৃত নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার দুই সাংবাদিককে ৫ঘন্টা পর মুক্তিপণে ছাড়া পেয়েছেন।
এঘটনাটি বৃহস্পতিবার ২১ (নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহের মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ঘটে।
অপহৃতের শিকার সাংবাদিকরা হলেন দৈনিক আমাদের সময় কেন্দুয়া উপজেলা প্রতিনিধি ও কেন্দুয়া পৌরশহরের কান্দিউড়া গ্রামের রাখাল বিশ্বাস এবং দৈনিক মানবকন্ঠ কেন্দুয়া উপজেলা প্রতিনিধি ও পৌরশহরে টেঙ্গুরী গ্রামের হরিয়ামালা মহল্লার বাসিন্দা রোকন উদ্দিন।
অপহৃত সাংবাদিকরা জানান, ৩দিন ব্যাপী সাংবাদিকতা বিষয়ে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিতে গত ১৯ নভেম্বর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে যায়। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড বাসে উঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন এমন সময় অপহরণকারী চক্রের এক সদস্য যুবক এসে তাদের সাথী হয়ে একটি প্রাইভেটকারে ওঠে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
সন্ধ্যার পর রাজেন্দ্রপুর এলাকায় এসে তাদেরকে পিস্তল ঠেকিয়ে দুই হাত ও চোখ বেঁধে সাথে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য জিনিশপত্র হাতিয়ে নেয়। পরে তাদের মোবাইল ফোন দিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে টাকা দাবী করে। টাকা দিতে দেরী হওয়ায় তাদেরকে বেধড়ক মারপিট করে। এক পর্যায়ে সাড়ে ১০ টার দিকে সাংবাদিক রাখাল বিশ্বাসের পরিবারের কাছ থেকে বিকাশে ৬০ হাজার টাকা ও রোকন উদ্দিনের পরিবারের কাছ থেকে দুই দফায় ৮৩ হাজার নিয়ে তাদেরকে রাস্তা পাশে ফেলে দিয়ে অপহরণকারী চলে যায়।
অপহৃত সাংবাদিক রাখাল বিশ্বাস জানান, অপহরণকারীদের বিকাশে ৬০ হাজার টাকাসহ সাথে নগদ ২৫ হাজার টাকা, দুইটি মোবাইল ফোন, স্বর্ণের ১টি ও রোপার ২টি আংটিসহ অন্যান্য জিনিষপত্র নিয়ে গেছে। সব মিলে তার দুই লক্ষ টাকা খোয়া গেছে।
সাংবাদিক রোকন উদ্দিন জানান, তার সাথে থাকা নগদ ২০/২২ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন অন্যান্য জিনিষপত্র চিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছে থেকে মোবাইল নাম্বার নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে দুইবারে ৮৩ হাজার টাকা বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে পাঠালে তাদেরকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।
পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাসে ময়মনসিংহ পৌঁছেন এবং রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে শুক্রবার ভোরে বাড়িতে যান। তাদের হাতে ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাতুরি দিয়ে বেধড়ক পিঠিয়েছে। তার প্রায় দুই লক্ষ টাকা মতো খোয়া গেছে।
এদিকে তাদের অপহরণের খবর পেয়ে পরিবারে, স্বজনদের মাঝে, স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল শুক্রবার ভোরে বাড়ি এলে তাদেরকে ভিড় জমায় শুভাকাঙ্ক্ষী ও প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ।
এব্যাপারে কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই সেলিম বলেন, আমরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারসহ তাদের লুণ্ঠিত টাকা ও মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য জিনিষপত্র গুলো উদ্ধারের দাবী জানাই এবং আহত সাংবাদিকদের সুস্থতার জন্য সকলের দোয়া চাই।