মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সংগঠক: ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ
বঙ্গবন্ধু ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত মোট ৬ বার নেত্রকোণায় এসেছিলেন- দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে। একবার ভাটি-বাংলার প্রাণকেন্দ্র মোহনগঞ্জে (only once)বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে যাঁরা বঙ্গবন্ধুর পাশে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ অন্যতম। তিনি বঙ্গবন্ধুকে ধ্যানে-জ্ঞানে-আদর্শ- নৈতিকতায় মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করতেন
নেজা ডেস্ক :
জল-হিজলের গ্রাম। হাটনাইয়া তার নাম। অপরূপ তার সুষমা। দীর্ঘ বর্ষায় যেমতি জলমগ্ন, শুকনো মৌসুমে তেমনি বোরো ধানের গন্ধে আমোদিত। ডিঙ্গাপোতা হাওর পাড়ে কতোকাল আগে এখানে ছিলো হাট, আর নৌকা বেয়ে নাইয়ারা আসতো ভাটিয়ালী সুরে সুরে; সে ইতিহাস আজ কালের গর্ভে নিমজ্জিত। আশেপাশের গ্রামগুলো কতই না আপন। সুয়াইর, ভাটিয়া, করচাপুর,বরান্তর, এবং আদর্শনগর। ধলাই ও অপর একটি নদীর মিলনস্থল ত্রিমোহণী থেকে দক্ষিণে এগুলেই এক পাড়ে হাটনাইয়া, খলাপাড়া এইসব গ্রাম। অপর পাড়ে মেন্দিপুর, সাতগাঁও, বলরামপুর, ইছাপুর, বোয়ালী হয়ে খালিয়াজুরীর বিস্তীর্ণ প্রান্তর। স্থানে স্থানে কান্দা, দুই দিকে সবুজ ফসলের মাঠ, হিজল-তমাল-করচের সারি; কোথাও বা দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হিসেবে বৃদ্ধ বট।
এইসব লক্ষীবন্ত গ্রামের মানুষেরা করে গান, ফসল ফলায় রোদ প্রকৃতির খেলায়। কঠোর সংগ্রামী তাদের জীবন। তারা শান্তি চায়। মিলে-মিশে, উৎসবে-পার্বণে সবুজ কান্দার মাঠে তাদের যতো সুখ – যতো আনন্দ। এমনি এক গ্রাম হাটনাইয়া। পৌরাণিক কিংবদন্তি জড়িত ডিঙাপোতা হাওরের দক্ষিণে নিবিড় গ্রাম হাটনাইয়া। এই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২৬ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছিলেন ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ। পিতার নাম মরহুম আহমেদ হোসাইন তালুকদার এবং মাতা ছিলেন মরহুম আয়েশা আক্তার চৌধুরী।
তিনি সহিলদেও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। অতপর নেত্রকোণা আঞ্জুমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং ময়মনসিংহ মৃত্যুঞ্জয় হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেমান পাসের পর আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে ঢাকা মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল থেকে ডাক্তারী বিদ্যা পাস করেন। শিক্ষা জীবন সমাপ্তির পর একজন ডাক্তার হিসেবে তিনি সরকারি চাকুরীতে নিযুক্ত হন। ঘুরেছেন বিভিন্ন হসপিটাল এবং চ্যারিটেব্ল ডিস্পেনসারিতে। রোগে-শোকে কাতর মানুষের পাশে একজন ডাক্তার হিসেবে তাঁর সেবা আজও ভাটি-বাংলার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। হয়তো তাই পরাধীন আমলে মানুষের রোগ মুক্তির পাশাপাশি তিনি তাদের রাজনৈতিক মুক্তিও কামনা করতেন। আর যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সত্তরে নির্বাচনের ডাক দিলেন, তখন বঙ্গবন্ধু প্রেমিক ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ সাথে সাথে সরকারি চাকুরী ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। উল্লেখ্য ১৯৬৯ সালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং নেত্রকোণার আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল খালেক সহযোগিতায় আঙয়ামীলীগ পরিবারের সদস্য হয়েছিলেন। শুরু হয় তাঁর জীবনে রাজনীতির নতুন অধ্যায়।
বঙ্গবন্ধু ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত মোট ৬ বার নেত্রকোণায় এসেছিলেন- দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে। একবার ভাটি-বাংলার প্রাণকেন্দ্র মোহনগঞ্জে (only once)বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে যাঁরা বঙ্গবন্ধুর পাশে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ অন্যতম। তিনি বঙ্গবন্ধুকে ধ্যানে-জ্ঞানে-আদর্শ- নৈতিকতায় মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করতেন।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে বাঙালি ছাত্র-জনতার অগ্নিঝরা আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী আয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার স্থলাভিষিক্ত হয় কুখ্যাত নরখাদক জেনারেল এহিয়া খান। শেষ পর্যন্ত ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে একযোগে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ঘোষণা করা হয়- Legal Frame Work order (আইনগত কাঠামো আদেশ)’। এতে জাতীয় পরিষদে নেত্রকোণার জন্য ৩টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের জন্য ৬টি আসন নির্ধারিত হয়। নির্বাচন প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন,“এবারের নির্বাচন, ৬দফার প্রতি জনগণের রায় ঘোষণার নির্বাচন।” ৬ দফা ও ১১ দফার মিলিত বিশাল ঐক্যে তেতুলিয়া টু টেকনাফে ‘নৌকা’-র বিপুল বিজয় অর্জিত হয়।
জাতীয় পরিষদে নেত্রকোণার ৩টি আসনে যথাক্রমে সর্বজনাব আব্দুল মমিন, জুবেদ আলী এবং এডভোকেট সাদির উদ্দিন আহমেদ নির্বাচিত হন। আর প্রাদেশিক প্ররিষদের ৬টি আসনে নির্বাচিত হন যথাক্রমে – সর্বজনাব হাদিস উদ্দিন চৌধুরী, ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ, আব্বাস আলী খান, আব্দুল মজিদ তারা মিয়া এবং নজমুল হুদা। ইনারা সবাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সৈনিক এবং আওয়ামীলীগের নেতা ও সংগঠক।
উল্লেখ্য, সত্তরের নির্বাচনে নেত্রকোণায় সবকটি আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীরা শতাধিক সভায় বক্তব্য প্রদান করেন। ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ একজন সুবক্তাও ছিলেন। মোহনগঞ্জসহ ভাটি-বাংলায় বিভিন্ন সভা-সমিতি, মিটিং-মিছিলে তিনি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সকলে মিলে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইস্তেহার এবং বঙ্গবন্ধুর আহবান তাঁরা গ্রামে-গ্রামে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন। ইতোমধ্যেই আওয়ামীলীগ জনগণের প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নির্বাচনকে ঘিরে পুরো একটি জাতীয় জনসমাজ একতাবদ্ধ হবার নজির খুব কমই আছে। এতে বেজে উঠে পাকিস্তানের মৃত্যু ঘন্টা। সঙ্গত কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ড. রওনক জাহান বলেছেন,‘সত্তরের নির্বাচনে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে, কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বি-খন্ডিত হবার অপেক্ষায় থাকে।’ মহান মুক্তিযুদ্ধে চুড়ান্তভাবে এ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
৯৩ হাজার পরাজিত পাকিস্তানি আর্মির আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পূরণ হয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন; পূরণ হয় বাঙালির স্বাধীনতা লাভের আখাক্সক্ষা। বঙ্গবন্ধু যাঁদেরকে নিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন, তাঁদেররই একজন ছিলেন ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ। বঙ্গবন্ধু আগেই জানতেন সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিজয়ী হলেও এহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। এ জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালে ইংল্যান্ডে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মি: এডোয়ার্ড হিথের এক সরকারি বাসভবনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সাথে এক গোপনীয় বৈঠকে বাংলাদেশের ছেলেদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার কথা বলেছিলেন। মুজিব বাহিনী ও মুক্তি বাহিনী গঠন এবং মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার মূলসূত্র এখানেই নিহিত। এ জন্যই বঙ্গবন্ধু সারা দেশ জুড়ে তাঁর একান্ত সংগঠকদের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এখানেই এসে বুঝা যায়- ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যেমনটি বলেছিলেন,“আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ঘরে-ঘরে দুর্গ গড়ে তুলো।” মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদেরও একজন ছিলেন ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ।
এহিয়া খান তালবাহানা করে শেষ পর্যন্ত ১লা মার্চ ঘোষণা দেয় যে, ৩রা মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করা হলো। এহিয়ার এই ঘোষণায় সারা বাংলা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধু তখন নির্বাচিত সাংসদদের নিয়ে হোটেল পূর্বাণীতে একটি সভা করছিলেন। সেখান থেকেই তিনি বলেছিলেন,“এটা বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেওয়া হবে না।” তিনি ৬ দিন ব্যাপী এক কর্মসূচী ঘোষণা করেন এবং ৭ই মার্চ রেসকোর্সের জনসভায় পরবর্তী কর্মসূচী করবেন বলে জানিয়ে দেন। এখানে স্মরণীয় যে, ১৯৬০-৬২ সাল থেকে প্রক্রিয়া শুরু করে ১৯৬৪ সালে আব্দুর রাজ্জাক, সিরাজুল আলম খান এবং কাজী আরেফ আহমেদ মিলে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে একটি ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ গঠন করা হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু শেষ পর্যন্ত চারজন ছাত্রনেতার উপর বিশেষভাবে নির্ভর করেছিলেন। উক্ত তিনজনের সাথে শেখ ফজলুল হক মনি এবং এক পর্যায়ে তোফায়েল আহমদ যুক্ত হয়েছিলেন। তাঁদের সাথে মহেষখলা ক্যাম্পে ডাক্তার সাহেবের যোগাযোগ হয়েছিলো।
এদিকে বঙ্গবন্ধু অনেক আগেই কলকাতা অবস্থানরত চিত্তরঞ্জন সূতারের সাথে গোপনীয় যোগাযোগ করে রেখেছিলেন এবং উক্ত ছাত্র নেতাদেরকে মুক্তিযুদ্ধ এবং গেরিলা বাহিনী গঠনের জন্য তাঁদেরকে গোপনে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এসকল বিষয় জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বা আওয়ামীলীগের অন্যান্য সিনিয়র নেতারাও জানতেন না। সে কারণে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে বি.এল.এফ বা মুজিব বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর মাঝে একটি ঠান্ডা যুদ্ধ পরিলক্ষিত হয়েছিলো। ক্রমে তাজউদ্দিন আহমদের সাথে আব্দুর রাজ্জাকের বিরোধ বৃদ্ধি পায়। কেননা, তাজউদ্দিন আহমদ এ সকল ছাত্র নেতাদের সাথে কোনোরূপ আলোচনা না করে নিজেকে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রীরূপে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রনেতারা চাইতেন ৫ বছরের জন্য সংসদীয় টাইপের একটি বিপ্লবী সরকার গঠন করা হবে- যার প্রধান থাকবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদিকে সিরাজুল আলম খান অত্যন্ত গোপনীয় ও অজানা কারণে চীনপন্থি চরম নকশালবাদীদের সাথে আঁতাত করেছিলেন। পরবর্তীকালে সিরাজুল আলম খান স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক রহস্যময় পুরুষ হিসেবে আবির্ভূত হন। এমনকি ছাত্রলীগ ভেঙ্গে জাসদ ছাত্রলীগের জন্ম হয়। শুরু হয়েছিলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘোর অমানিশার কাল। উল্লেখ্য জনাব রাজ্জাক-গ্রæপ মস্কোপন্থি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। এসব ঘটনারাজি মুক্তিযুদ্ধের বীর সংগঠকেরাও জানতেন না। ১৯৭৯ সালে ২রা জুন একজন সাংবাদিককে দেওয়া- জনাব আব্দুর রাজ্জাকের টেপকৃত রেকর্ড থেকে উপরোক্ত তথ্যগুলো জানা যায়।
এদিকে ৭ই মার্চের ভাষণের পর বঙ্গবন্ধুর অনুসারি নেতা-কর্মীগণ প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা পেয়ে যান। ভাষণে বঙ্গবন্ধু যা যা যেভাবে ইঙ্গিতে-অকপটে বলেছিলেন, তার ভিত্তিতে নেতা-কর্মীগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। নেত্রকোণাতেও শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি। মোহনগঞ্জ এলাকার এমপি ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এঁর নেতৃত্বে মোহনগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতা সর্বজনাব আব্দুল কদ্দুছ আজাদ, মীর্জা গণি, আমির উদ্দিন আহমেদসহ নেত্রকোণা মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলামএরশাদুর রহামান,মীর্জা তাজুল ইসলাম,রফিকুল ইসলাম, মন্তাজ উদ্দিন আরো কয়েকজন মিলে নৌকাযোগে মোহনগঞ্জের ভাটি এলাকার গ্রামে-গ্রামে ঘুরে-ঘুরে জনগণকে সংগ্রাম কমিটির সাথে ঐক্যবদ্ধ করেন। এ ক্ষেত্রে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এর ভমিকা ছিলো অনবদ্য।
২৯ এপ্রিল’৭১ পাকিস্তানি আর্মি প্রথম নেত্রকোণায় প্রবেশ করে এবং ক্রমে খালিয়াজুরী থানা ব্যতীত সকল থানায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ভারতের মেঘালয় সীমান্তে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাঘমারা, রংঢ়া, মহাদেও ও মহেশখলা এই চারটি স্থানে নেত্রকোণার মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রটিং ও ইউথ ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়। মহেশখলা ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন জনাব আব্দুল হেকিম চৌধুরী ও ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ। তবে চৌধুরী সাহেব সুনামগঞ্জের এমপি বিধায় নেত্রকোণার ভাটি অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা রিক্রটমেন্টের মূল দায়িত্ব পালন করেন ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ। এমন কি মহেষখলায় মুজিব বাহিনীর একটি ক্যাম্পও খোলা হয়। ফলে মহেষখলা ক্যাম্পে আগত প্রায় তিন লক্ষ শরণার্থী, মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার গুরু দায়িত্ব পালন করতে হয় ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ ও তাঁর সহযোগীদেরকে। মহেষখলা ক্যাম্পে যাঁরা সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা হলেন সর্বজনাব এড্ভোকেট কে এম ফজলুল কাদের, খালেকদাদ চৌধুরী, মেহের আলী,মারাজ মিয়া, আ: কদ্দুছ আজাদ,নুরুজ্জামান চিশতি, ইনসান উদ্দিন খান, ডা: জগদীশ দত্ত, অধ্যাপক মানিক সরকার প্রমুখ।মহেষখলা ক্যাম্পে নেত্রকোণার ব্যাংক লুটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো। সেকান্দর নুরী সাহেব ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে অহেতুক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
এক পর্যায়ে আওয়ামীলীগের অত্যন্ত সৎ ও নির্ভীক কর্মী,নেত্রকোনা মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ও মহেষখলা ইয়ুথ ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য(ছাত্র ও যুবনেতাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত),নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি(জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন), জেলা শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, নেত্রকোনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম স্থপতি, মধুমাছি কচিকাঁচার মেলার প্রধান উদ্যেক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক এবং জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ‘৭১(ষাটের দশকে ছাত্রদের পর শ্রমিক ও কৃষক গোষ্ঠী সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। এই দুটি গোষ্ঠী নেত্রকোনায় স্বাধীকার আন্দোলন,সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে) জনাব মেহের আলীকে ব্যাংক লুটের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সেকান্দর নুরীর লোকেরা হত্যা করে । মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে তিনি অন্যতম যিনি প্রথম ১৯৭১ সালের ১৭ই মে মহেষখলায় শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের খরচ ও যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে জাতীয় প্রয়োজনে জয়বাংলা বাহিনীর প্রধান কোম্পানী কমান্ডার সাবেক আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মো: শামসুজ্জোহার নেতৃত্তে বীরমুক্তিযোদ্ধা বুলবুল ইপিআর সদস্যসহ অন্যান্যদরকে নিয়ে পুলিশের অস্ত্রাগার ও ব্যাংক লুট করেন (“মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোনা” বইটিতে সাবসেক্টর কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন)। এই ঘটনার সাথে শহীদ মেহের আলীর বিন্দুমাত্র সমৃক্ততা ছিলনা । অথচ নিরপরাদ মানুষটিকে হত্যা করা হলো।মেহের আলীকে হত্যার পরপরই বীরমুক্তিযোদ্ধা মো: শামসুজ্জোহা ও সাবেক আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমরিুল ইসলামকেও গ্রেফতার করা হয় হত্যার জন্যে। সৌভাগ্যক্রমে তারা প্রাণে বেচে যান। স্মরণীয় যে, স্বাধীনতা লাভের মাত্র ৭ দিনের মধ্যে পরবর্তীকালে সেকান্দর নুরী নিহত হয়েছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি ছিলো জনাব মেহের আলী হত্যার অনিবার্য পরিণতি। এরূপ প্রেক্ষাপটে উদ্ভত জটিল পরিস্থিতিকে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ অত্যন্ত মেধা ও ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। এক্ষেত্রে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এঁর নেতৃত্বের দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়।
মহেষখলা ইয়ুথ ক্যাম্প অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয়েছিলো। বিশেষ করে নেত্রকোণা এবং সুনামগঞ্জের ভাটি এলাকার অগণিত মুক্তিযোদ্ধা এই ক্যাম্পের মাধ্যমে রিক্রটেড হয়েছিলেন। ক্যাম্প পরিচালকগণ এইসব বাছাইকৃত যুবকদেরকে বাঘমারা জনাব এন আই খান পরিচালিত ট্রানজিট ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিতেন। সেখান থেকে তাদেরকে তুরা জেলায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো। স্বল্প সময়ে এসকল কাজ সঠিকভাবে নিষ্পন্ন করা অবশ্যই কষ্ট সাধ্য ছিলো। মহেষখলা ফরেস্ট অফিসের নিকট স্থাপন করা হয়েছিলো মুজিব বাহিনী ক্যাম্প। সেখানে একটি ট্রেনিং সেন্টারও খোলা হয়েছিলো। আনসার, পুলিশ, বিডিআর (বিজিবি) সমন্বয়ে জনাব মোবারক আলী খান একটি অস্থায়ী বাহিনী গঠন করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে সেকান্দর নুরী, আনসার কমান্ডার দারগ আলী, আনসার ইন্সট্রাক্টর আ: হামিদ, আনসার কমান্ডার আলী ওসমান তালুকদার এবং আওয়ামীলীগ নেতা আ: জব্বার আনসারী সেখানে দায়িত্ব পালন করতেন। তবে বরাবরই সেকান্দর নুরী ছিলেন বিতর্কিত ও সন্দেহভাজন। এসকল ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন, নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনার গুরু দায়িত্ব পালন করেছিলেন ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এবং সহযোগী নেতৃবৃন্দ। বস্তুত তখন উত্তেজনা প্রশমনে সমন্বয়ের কোনো বিকল্প ছিলোনা; যখন মূল লক্ষ্য ছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধ।
সাউথ গারোহিলের এই মহেষখলা ক্যাম্প থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। একদিকে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং এবং অপরদিকে ভাটি অঞ্চলসহ নেত্রকোণার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ পরিচালনা করা ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য ও রসদ সংগ্রহের ব্যাপারে দায়িত্ব পালন করতেন ক্যাম্প কমিটি। জলমগ্ন ভাটি এলাকায় পাক-আর্মিরা সহজে চলাফেরা করতো না। বস্তুত: এসব এলাকা মুক্তাঞ্চল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে ছিলো। এই সকল এলাকার হাট-বাজার সপ্তাহ ভিত্তিতে ইজারা দিতেন ক্যাম্প কমিটি। ইজারার টাকা জমা নেওয়া এবং হিসাব রক্ষণ পূর্বক পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করাটাও একটি জটিল দায়িত্ব ছিলো। অপর একটি কাজ ছিলো ট্রাইব্যুনাল বিষয়ক। যে সকল রাজাকার-আলবদর বা পাক-আর্মিদের ধরে আনা হতো এদের বিচার কার্য ক্যাম্প কমিটি একটি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পরিচালনা করতেন। এ প্রসঙ্গে ‘মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোণা’ গ্রন্থে বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। উল্লেখ্য জনাব ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ তাঁকেও ট্রাইব্যুনালের একজন সদস্য নিযুক্ত করেছিলেন। সাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরী ‘শতাব্দীর দুই দিগন্ত’ গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মহেষখলা ক্যাম্পের পরিচালনা কমিটির কার্যক্রমের বিবরণ দিয়েছেন। যথা- প্রশাসনিক কার্যক্রম, শরণার্থীদের আগমন ও পুনর্বাসন, ত্রাণ বিতরণ, মুক্তিযোদ্ধা রিক্রটমেন্ট, দালাল ও অপরাধী বন্দীদের বিচার, রোগ-শোকে চিকিৎসা সেবা প্রদান ইত্যাদি। এ সকল কার্যক্রমে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, ডাক্তার সাহেবের পুত্র-পরিজন গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। তাঁর তিন পুত্র ও স্ত্রী অনেকদিন গ্রামের বাড়িতে থেকে উনার লিখা চিঠি অনুযায়ী এক পর্যায়ে গ্রাম ছেড়ে আত্মীয় বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করেন। ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এঁর সুযোগ্য সহধর্মিণী মিসেস হোসনে আরা চৌধুরী এবং তাঁর তিন পুত্র ওবায়দুল হাসান (পরবর্তীকালে মাননীয় বিচারপতি), সাজ্জাদুল হাসান (পরবর্তীকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব) এবং সাইফুল হাসান সোহেল (পরবর্তীকালে গ্রামীণ ফোনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা)কে গ্রামের বাড়িতে রেখে তিনি কতটা দুশ্চিন্তায় ছিলেন তা সহজে অনুমেয়। সন্তানেরা সবাই তখন ছোট- ছোট। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন। তথাপি মুক্তিযুদ্ধে তাঁর উপর অর্পিত গুরু দায়িত্ব পালনে তিনি কুন্ঠিত হননি। এমনি জটিল পরিস্থিতিতে মহেষখলা ক্যাম্পের দায়িত্ব তিনি সুসম্পন্ন করেছিলেন। ডাক্তার সাহেবের সুযোগ্য পুত্র জনাব সাজ্জাদুল হাসান এ ব্যাপারে তাঁর লিখা ‘আমার বাবা ও ৭১-র অম্লান স্মৃতিময় স্থান’- নামক প্রবন্ধে তাঁর মাতার কাছে তাঁর বাবার লিখা একটি পত্রে কিছু অংশ তুলে ধরেছেন। যেমন, “ তোমরা বাড়ী থেকে সরে গেছো কি – না জানিনা। তোমাদের উপর আক্রমণ আসতে পারে, তাই পূর্ব পত্রে লিখেছিলাম বাড়ী থেকে সরে যেতে। কোথায় আছো তা যেনো অন্য লোক না জানে।
…. স্বাধীন বাংলা বেতারের খবর নিশ্চয় শুনেছো যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ীও আক্রমণ করতে ছাড়েনি। সুতরাং সাবধান।” তিনি বাড়ীতে পুত্র-পরিজন রেখে ভীষণ উৎকন্ঠায় মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আহবানে নিজ দায়িত্ব দু:সাহসিকতার সাথে পালন করে যাচ্ছিলেন। মহেষখলা, মহাদেও, রংঢ়া এবং তোরার দুর্গম পথে দায়িত্ব পালনের জন্য কোথাও পায়ে হেঁটে কোথাও জীপে চড়ে গমনাগমন করতেন। তবে তাঁর মূল দায়িত্ব ছিলো মহেষখলা ক্যাম্পে।
স্মরণীয় যে, মহেষখলা ক্যাম্পে জটিল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় লামার বাজারে একটি ঢপ যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। মূল উদ্যোক্তা ছিলেন- আ: কদ্দুছ আজাদ, হায়দার জাহান চৌধুরী এবং আমার গ্রাম ধীতপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ওস্তাদ সুরেশ দাস। এতে এই দু:খ-কষ্টের জীবনে শরণার্থীরা কিছুটা হলেও বিনোদন পেয়েছিলেন। আরও একটি কথা এখানে উল্লেখযোগ্য- নেত্রকোণার সমাজ সেবক বলে পরিচিত অবণী বাবু এবং সেখানকার মসজিদের ইমাম সাহেব যে সকল শরণার্থী মারা যেতেন তাঁদের অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া ও দাফন কার্য সম্পন্ন করতেন।
১৬ই ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হয়। মহেষখলা থেকে বিজয় গর্বে নেতৃবৃন্দ ফিরে আসেন নেত্রকোণায় নিজ নিজ আবাস স্থলে। দেশে এসেও ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ বেশকিছু গুরু দায়িত্ব পালন করেন। ৯ই ডিসেম্বর নেত্রকোণা শত্রু মুক্ত হয়। ১২ই ডিসেম্বর গণআদালতের মাধ্যমে দালাল-রাজাকারদের বিচার কার্যে তিনি ছিলেন প্রধান বিচারক। উল্লেখ্য, মোহনগঞ্জ উপজেলায় দালাল-রাজাকারেরা অগ্নি সংযোগ, হত্যা, ধর্ষণসহ হিন্দু অধ্যুসিত মাইলোরা, দেওতান, দৌলতপুর, খুরশিমূল-এসব ৬টি গ্রামে পাঁচ শতাধিক হিন্দু বাড়িতে ব্যাপক লুটতরাজ করে এবং তাদের বসত-ভিটা দখল করে নেয়। এলাকায় তাদের বিচারের জন্য জোর দাবী উঠে। অবশেষে ১২ই ডিসেম্বর লোহিয়ার মাঠে (বর্তমানে শহীদ উসমান পার্ক) হাজারো জনতার উপস্থিতিতে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ গণআদালতে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমান, মীর্জা তাজুল ইসলাম, আমির উদ্দিন উক্ত গণআদালতে রাজাকার-আলবদরদের কৃত অমানবিক ও নারকীয় নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। উপস্থিত হাজারো জনতা চিৎকার করে তাদের মৃত্যুদন্ডের দাবী করেন। তখন গণআদালত থেকে ১৩ জন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হয়। এসব অপরাধীরা ছিলো-যথাক্রমে নজরুল শেখ, নরু শেখ, সম্রাট, আ: খালেক, নান্নু, নুরুল ইসলাম, লাল হোসেন, সব্দু মিয়া, ইব্রাহিম, চাঁন মিয়া এবং গিয়াস উদ্দিন। স্মরণীয় যে, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই ছিলো প্রথম গণআদালত। এই বিচার কার্যের ৪৫ বছর পর ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এঁর সুযোগ্য পুত্র মাননীয় বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসান শাহিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। মাননীয় বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসান শাহিন এবং সিনিয়র সচিব জনাব সাজ্জাদুল হাসান সম্প্রতি তাঁদের লেখায় ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এঁর তথ্যবহুল ও জ্ঞানগর্ভ স্মৃতিচারণ করেছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে এইসব অবদান সামান্য একটি প্রবন্ধে লিখে শেষ করা যায় না। ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসীম সাহসিকতা ও দায়িত্ব পালনের জন্য ইতিহাসে চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন। ২০১২ সালের ২৮ আগস্ট এই মহান কর্মবীরের জীবনাবসান ঘটে ! বর্তমানে তাঁর সুযোগ্য সন্তানেরা মোহনগঞ্জে তাঁর ভক্ত অনুসারীদের নিয়ে গঠন করেছেন,“ ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।” ইতিহাসের পাতায় চিরঞ্জীব রইলেন- মহান মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সংগঠক জনাব ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ। পরিশেষে তাঁর সন্তানদের দেওয়া তারই একটি উক্তি দিয়ে সমাপ্তি টানতে চাই- কেননা এই উপদেশটি সকল সন্তানের জন্য প্রযোজ্য;“ ভাষা শিখতে হবে। ভাষা শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কি বাংলা, কি ইংরেজি; দুটি ভাষাতেই পারদর্শী হতে হবে।”
লেখক: অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার।
প্রান্ধিক, ঐপন্যাসিক, গল্পকার ও কবি। সভাপতি: রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি, সম্পাদক: বিজয় ৭১ (ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা)
আরও পড়ুন……
ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি ও ৭১’- র মুক্তিযুদ্ধ : বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
শহীদ মেহের আলী একটি নাম, একটি ইতিহাস : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধু: বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
নেত্রকোণার রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ মরহুম জননেতা আব্দুল খালেক এমপি