মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীঃ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ইনস্টিটিউট, অস্ট্রেলিয়া
বাংলাদেশ শহীদ স্মৃতি গবেষণা কেন্দ্র (Bangladesh Muktijudho Research Institute, Australia” – এর সহযোগী প্রতষ্ঠিান) – মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য আন্দোলন, সংগ্রামের শহীদ ও জীবিত বীরযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্যে “Bangladesh Muktijudho Research Institute,Australia”-কে “বিজয় একাত্তর সম্মাননা -২০২২ – প্রদান করা হয়।
প্রতিষ্ঠাঃ
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ইন্জীনিয়ার জামান “Bangladesh Muktijudho Research Institute, Australia” – প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন। ইন্জীনিয়ার জামান ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের Computer Science and Engineering বিভাগ হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন। এরপর তিনি অষ্ট্রেলিয়ার সিডনী বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন। অষ্ট্রেলিয়াতে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানীতে দীর্ঘদিন সুনামের কাজ করার পর বর্তমানে অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে নিযুক্ত আছেন। আইটি ব্যবসার পাশাপাশি বিশ্বমানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় আন্তর্জাতিক সংস্থা Red Cross, Amnesty International ও Green Peace -এর সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইন্জীনিয়ার জামান ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ে পড়াকালীন ১৯৯৪ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা শুরু করেন। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সেমিনার, সিম্পজিয়ামের আয়োজন করতে থাকেন। এরপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গবেষণার কাজ শুরু করার জন্যে ২০১৫ সালে “Bangladesh Muktijudho Research Institute, Australia” and “Bangladesh Martyrs Memorial Research Center” – প্রতিষ্ঠান দুটি গড়ে তুলেন। প্রতিষ্ঠান দুটির মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা, জাতির বীর সন্তানদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে সহায়তা ও তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে কাজ করার পাশাপাশি দরীদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা সহায়তা ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠান দুটির মাধ্যমে জনাব জামান বহু দরীদ্র পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন যারা আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত।
উদ্দেশ্য:
“Bangladesh Muktijudho Research Institute, Australia(BMRI)- এর উদ্দেশ্য সমূহঃ
১। বাঙ্গালী জাতির সূর্য সন্তান, যারা আত্মত্যাগ অথবা জীবনের ঝুকি নিয়ে জাতিকে মুক্ত অথবা বাঙ্গালী জাতির অধিকার আদায় করেছেন তাদেরকে খুঁজে বের করা।
২। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে ও দেশের জন্যে তাদের মহীমান্বিত কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের নামে রাস্তা, লাইব্রেরী, সরকারি/আধা সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার নাম করণের জন্যে সরকার তথা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আহবান জানানো।
৩। তাদের জীবনীসহ বুক, ফলক (সংক্ষিপ্তজীবনী) ঐ সকল রাস্তা বা স্থাপনার পাশে স্থাপন করা যাতে পরবর্তী প্রজন্ম তাদের বীর সন্তানদের বীরত্বগাথা জানতে পারে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতির উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারে।
৪।মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই পদাধীকার বলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও সকুল, কলেজ,মসজদি মাদ্রাসা ও বিশবিদ্যালয়ের এর ব্যবস্থাপনা কমিটিতে বীরযোদ্ধাদের অথবা তাদের পরিবারের যোগ্য সদস্যদের সম্মানীত আজীবন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্তির জন্যে সরকারের নিকট দাবি উপস্থাপন ও তা বাস্তবায়নের জন্যে চেষ্ঠা করা।
৫। বীর সন্তানদের জীবনী নিয়ে Digital Documentary এবং একটি কেন্দ্রীয় Virtual Museum প্রতিষ্ঠাকরণ যাতে বিশ্ববাসী আমাদের বীর সন্তানদের বীরত্বগাঁথা জানতে পারে।
৬। তাদের পরিবারের দুঃস্থ সদস্যদের (যদি থাকে) বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ,প্রদান ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করণে সহায়তা প্রদান।
৭। তাছাড়া অন্যান্য অসহায় সাধারণ পরিবারের মেধাবী সন্তানদেরকে বৃত্তিমূলক কাজের প্রশিক্ষণ প্রদান, শিক্ষা বৃত্তি, ধর্মীয় শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলায় উদ্বুদ্ধ করণ সহ সম্ভব সব ধরণের সহযোগিতা প্রদান।
৮। দেশের জন্যে এলাকার জন্যে যারা সম্মান বয়ে আনবে তাদেরকে সম্মাননা প্রদান করা যাতে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হতে পারে, সুযোগ্য নাগরিক হয়ে দেশ গঠনে অংশ গ্রহণ করতে পারে।
জেলা পর্যায়ে কার্যক্রমঃ
সারাদেশে এই ল্ক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দ্যেশে প্রতিষ্ঠানটি নেত্রকোনা জেলা থেকে কাজ শুরু করেছে। জনাব জামান জানতে পারেন যে, ১৯৯৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনক্রমে নেত্রকোনা সদর পৌরসভা তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে তিনটি রাস্তার নামকরনের পরও তা বাস্তবায়িত হয়নি। জনাব জামান বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন মেয়র প্রশন্ত কুমার রায়ের সাথে কথা বলেন। জনাব প্রশন্ত খুবই আন্তরিক ছিলেন এবং তৎক্ষনাত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু পরে জানা যায় যে, অফিসে থাকা নথি হারিয়ে গেছে। জনাব প্রশান্ত ঢাকা থেকে পুনরায় নির্দেশনা নিয়ে আসতে বলেন। জনাব জামান মন্ত্রনালয় থেকে নির্দেশনা পত্র (নং-৪৬.০৬৩.০৩১.০১.০০.০১২.২০১৪-১৭১৫) নিয়ে আসার পর মেয়র সাহেব রাস্তাগুলোর সীমানা নির্ধারণ সহ নামফলক উন্মোচনের নির্দেশ দেন [স্মারক নং- নেত্র/পৌর/সাধাঃ/১৫/৪৮(১০০)]।
পরবর্তীতে প্যানেল মেয়র-১ জনাব নজরূল ইসলাম রাস্তাগুলোর নামফলক উন্মোচন করেন এবং প্রতিটি দোকান বাড়ীতে রাস্তার নামসহ ঠিকানা সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। এই সকল কাজের জন্য লক্ষাধিক টাকা খরচ হয় যার পুরোটাই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ রিসার্চ ইন্সটিটিউট-থেকে দেয়া হয়।
জাতীয় পর্যায়ে কার্যক্রমঃ
নেত্রকোণাতে সফল হওয়ার পর জনাব জামান ২০১৫ সাল থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লবিং করতে থাকেন যেন সরকারী বেসরকারী সকল স্থাপনা ও রাস্তাঘাটের নাম বীরমুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবিদের নামে নামকরণ এবং সারাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবিদের তালিকা প্রনয়ন করা হয়। ২০২০ সালের ১৫ই অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয় সরকারী বেসরকারী সকল স্থাপনা ও রাস্তাঘাটের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণের জন্যে এক প্রজ্ঞাপণ জারী কর যার স্মারক নম্বর ৪৮.০০.০০০০.০০৫.২০-১৬৯/২৯/১০/২০২০।
২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয় সারাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবিদের তালিকা প্রনয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করে দেয় এবং শহীদ বুদ্ধিজীবিদের একটি সংজ্ঞা প্রদান করে।
সংজ্ঞাটি নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংজ্ঞা অনুযায়ী যেসব সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক-সংগীত ও শিল্পকলার অন্যান্য শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, যাঁরা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং ১৯৭১ সালে শহীদ কিংবা চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন । এই দুটি ঘটনা বীরমুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবিদের স্মৃতি রক্ষার্থে জাতির ইতিহাসে মাইল ফলক হিসেবে চিন্হিত হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ রিসার্চ ইন্সটিটিউট তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নীরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবিদের তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রমঃ
সারাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবিদের তালিকা প্রণয়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর পক্ষ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংজ্ঞা অনুযায়ী নেত্রকোনার ইতিহাসে প্রথম ২০২২ সালে জেলার শহীদ বুদ্ধিজীবিদের তালিকা প্রকাশ করেন। তালিকা অনুযায়ী মোট ১৭জন বুদ্ধিজীবি ১৯৭১ সালে শহীদ হন। পরবর্তীতে তালিকাটিকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ রিসার্চ ইন্সটিটিউট এবং প্রখ্যাত সাহিত্যিক ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক,নেত্রকোনা রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ননী গোপল সরকার কর্তৃক সম্পাদিত সাহিত্য ও গবেষণাধর্মী জাতীয় পত্রিকা “বিজয় একাত্তর” – এর যৌথ উদ্যেগে পোষ্টার ও ক্যালেন্ডার আকারে বিলি করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনের কার্যক্রমঃ
বাংলাদেশের জাতীয় কথা সাহিত্যিক বাংলা একাডেমী ও একুশে পদক প্রাপ্ত লেখক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকদাদ চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসান, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ননী গোপল সরকার,জাতীয় সাহিত্যিক একুশে পদক প্রাপ্ত প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক সানাউল্লাহ নূরী, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার বীর মুক্তিমুযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী , প্রখ্যাত লোকসাহিত্যিক ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক,প্রাবন্ধিক সাবসেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিমুযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমান, ভাষা সংগ্রামের জন্যে রাষ্ট্রিকিট হওয়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ভাষা সৈনিক আজিম উদ্দীন আহমেদ, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আহমেদ সমিরুদ্দীনের লেখা বই, প্রবন্ধ এবং বিভিন্ন জাতীয় ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎাকার, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎাকার, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা, টিভি সংবাদ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ভিডিও হতে সংগৃহীত তথ্যানুসারে ১৯৭১ সালের এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে মেজর মোত্তালিব (পরবর্তীতে যিনি সাব সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন) ও ক্যাপ্টেন গণী এবং জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে ক্যাপ্টেন মান্নানের নেতৃত্তে ৪৫০ জন সামরিক ও কয়েকশ বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর থানার দুগনৈ গ্রামে আসলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিমুযোদ্ধা মেহের আলীর নেতৃত্বে,মধ্যনগর থানা মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ ও দুগনৈ গ্রাম মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্ববৃন্দ স্থানীয় এলাকাবাসীদের নিয়ে তাদের সকলের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং নিরাপদে ট্রেনিংয়ের জন্য ইন্ডিয়াতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
এছাড়াও রহমত আলী তালুকদার. আক্কেল তালুকদার, রউফ চৌধুরী ও গ্রামবাসীদের বাড়ী থেকে শত শত মণ ধান, চাল, অন্যান্য সামগ্রী মহেষখলা ক্যাম্পে পাঠান যাহা ক্যাম্প পরিচালণায় অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর ছাত্রনেতা, নেত্রকোণা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, নেত্রকোণায় মহকুমা মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের অত্যন্ত প্রভাবশালী সদস্য, মহেষখলা ইয়ুৎ ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য (ছাত্র ও যুবনেতাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত), নেত্রকোণার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে একমাত্র শহীদ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে অন্যতম (সরকার নির্ধারিত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংজ্ঞা অনুযায়ী), জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন বীর মুক্তিমুযোদ্ধা মেহের আলী ১৯৭১ সালের ১৭ই মে মহেষখলা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন কালে আততায়ীর গুলিতে শহীদ হন ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী শহীদ হওয়ার পরপরই মহেষখলাতে জয় বাংলা বাহিনীর নেত্রকোনা শাখার প্রধান,কোম্পানী কমান্ডার,জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি,সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১, নেত্রকোণা জেলা- সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মো: শামছুজ্জোহা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মাহমুদ(বুলবুল)সহ প্রমুখকে গ্রেফতার করে হত্যা করার জন্য। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তারা বেঁচে যায়। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী শহীদ হওয়ার পর দুগনৈ গ্রামে তার শ্বশুর বাড়ীটি দুই দুই বার লুট করা হয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার অপরাধে ও পূর্বশত্রুতার জেরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাতজন বীর সহযোদ্ধাকে দুষকৃতিকারীরা (যাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় লুন্ঠন ও নিরাপরাধ মানুষদেরকে হত্যার বহু অভিযোগ ছিল) হত্যা করে। দুগনৈ গ্রামের যে সকল বীর সহযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তারা হলেন – শহীদ তাজনুর,শহীদ কাচা আবু,শহীদ সল্লুক চৌধুরী, শহীদ লাল চান, শহীদ আব্দুল লতিফ, শহীদ আব্দুল হাসিম, শহীদ আব্দুল বাহার।
দুগনৈ গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত স্থান সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে Bangladesh Muktijudho Research Institute,Australia সেখানে “মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পাঠাগার ” ও “মুক্তিযোদ্ধা স্পোর্টিং ক্লাব” নামক দুটি প্রতিষ্ঠানের কারযক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মান্না এবং আর্থিক অনুদানের প্রকল্প গ্রহন করেছে।
“Bangladesh Muktijudho Research Institute, Australia সম্মাননাঃ
ষাটের দশকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায় অবদানের জন্য “Bangladesh Muktijudho Research Institute Silver Award-2022” প্রদান করা হয়। যাদেরকে সম্মান্না প্রদান করা হয়েছে তারা হলেন – ভাষা সৈনিক মোঃ আবুল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনজুর উল হক, প্রফেসর ননী গোপাল সরকার(ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায়), জনাব মো. ইকবাল হাসান তপু(ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায়)।
ভাষা আন্দোলন, ষাটের দশকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য “Bangladesh Muktijudho Research Institute Silver Award-2023” সম্মাননা প্রদানের জন্যে যাদেরকে মনোনীত করা হয় তারা হলেন – বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকদাদ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শামছুজ্জোহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আব্বাস খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমীন খান(এন আই খান), বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ফজলুর রহমান খান।
পুরষ্কার ও সম্মাননাঃ
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্যে ইন্জীনিয়ার জামান ও “Bangladesh Muktijudho Research Institute, Australia” -কে “বিজয় একাত্তর সম্মাননা -২০২২” এবং ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন কলেজ ও লোকসাহিত্য গবেষণা একাডেমী, নেত্রকোনা কর্তৃক ইন্জীনিয়ার জামানকে বীরমুক্তিযোদ্ধা মালিক খসরু মিলিনিয়াম সম্মাননা-২০২২” ও “ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন কলেজ ও লোকসাহিত্য গবেষণা একাডেমী সম্মাননা-২০২২”- প্রদান করা হয়।
লেখকঃ বীর মুক্তিমুযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, সাংবাদিক ও লেখক।