মেহেরপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারকে অজ্ঞান অবস্থায় মোহনগঞ্জে উদ্ধার

প্রকাশিত: ২:২০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২৩

মোঃ কামরুল ইসলাম রতনঃ
মেহেরপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হওয়া মেহেরপুর সদর হাসপাতালে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা: ফরহাদ পারভেজ (৩০)কে তিনদিন পরে অজ্ঞান অবস্থায় নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

নিখোঁজ চিকিৎসকের সন্ধান পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে তার বাবা ও ভাই মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে হাজির হয়েছেন। এর আগে গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে চিকিৎসক ফরহাদ পারভেজকে প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

তাঁর বাড়ি যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার দিঘল সিংগা গ্রামে। তাঁর বাবা নজরুল ইসলাম একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ফরহাদ পারভেজ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন।

ফরহাদ পারভেজের অবস্থা এখন অনেকটা ভালো বলে জানিয়েছেন মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা। তবে তার সাথে কি ঘটেছিল তা পুরোপুরি মনে করতে পারছেন না।

মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও ফরহাদ পারভেজের এক সময়ের মেডিকেলের সহপাঠী শাহরিয়ার জাহান ওসমানী জানান, ফরহাদ আমার সহপাঠী। মেডিকেলে এক সাথে পড়েছি। তাঁর সাথে সুসম্পর্ক আছে। আগেও একবার মোহনগঞ্জ সে এসেছে। বুধবার রাতে একজন রেনেটা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি রতন দেবনাথ ডাঃ ফরহাদকে প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। তাকে ভর্তি করার পর পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি জানানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরহাদের বাবা ও ভাই তাকে নিতে এসেছিলেন। ফরহাদ এখন কিছুটা সুস্থ হয়েছে। তবে তার সাথে ঠিক কি ঘটেছিল এটা এখনো মনে করতে পারছে না। ধারণা করা হচ্ছে- যাত্রা পথে কেউ হয়তো খাবারের সাথে নেশাজাতীয় বা অজ্ঞান হওয়ার মতো কিছু দ্রব্য খাইয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাঃ ফরহাদ কে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা ফরহাদ পারভেজ জানান, ১৩ নভেম্বর ডিউটি না থাকায় ঢাকার উদ্দেশে বের হই। গাড়িতে চা-নাস্তা খেয়েছি। হয়তো ওইসব খাবারে কেউ কিছু মিশিয়ে থাকতে পারে। তারপর দুইদিন কোথায় ছিলেন এটা তিনি মনে করতে পারছেন না। এমনকি মোহনগঞ্জ কিভাবে এলেন সেটাও তিনি জানেন না। মেহেরপুরে জরুরি বিভাগে ডিউটি করার সময় সেবা নিতে আসা উশৃংখল স্থানীয় কিছু পোলাপানের সাথ তার ঝগড়া হয়েছিল। প্রতিহিংসা স্বরুপ তারাও কৌশলে কিছু খাইয়ে থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।

ফরহাদ পারভেজের বড় ভাই সহকারী শিক্ষক রায়হান পারভেজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মোহনগঞ্জ হাসপাতালে আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, আমরা যশোর থাকি। আর ফরহাদ তার কর্মস্থল মেহেরপুরে থাকে। ১৪ নভেম্বর তার মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। কিন্তু কোথায়ও কোন তথ্য পাইনি। এদিকে তাকে না পেয়ে বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু করেছে পরিবারের লোকজন। পরে বুধবার রাতে খবর পাই ফরহাদ মোহনগঞ্জ হাসপাতালে রয়েছে। তাই তাকে নিতে এসেছি। এখন তাকে নিয়ে ঢাকা যাব। সেখানে চিকিৎসা শেষে পরে বাড়ি নিয়ে যাব।

ফরহাদের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলেকে খু্জে জীবিত অবস্থায় পেয়েছি এতেই আমি খুশি।

মেহেরপুর ও নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে গত ১৩ই নভেম্বর তার ডিউটি থাকলেও তিনি অন্য একজন চিকিৎসকের সঙ্গে সমন্বয় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ ছিল না। গত ১৪ নভেম্বর তার ডিউটি না থাকাতে বিষয়টি কারও নজরে আসেনি। পরদিন বুধবার তিনি কর্মস্থলে না আসায় বিষয়টি সকলের দৃষ্টিগোচর হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইমার্জেন্সি বিভাগের মেডিকেল অফিসারের রুমে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পায়। তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরিবার থেকেও জানানো হয় তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি। পরে তার পরিবার এবং মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকে অবগত করেন। মেহেরপুর সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, উনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। এমন মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি সম্পর্কে বলা যাবে।

মেহেরপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. জমির মো. হাসিবুর সাত্তার বলেন, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ফরহাদ হোসেন পাভেলের মিসিংয়ের বিষয়টি অবগত হওয়ার সাথে সাথে আমরা তার পরিবারসহ পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করি। পরে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেছে।

মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার পার্থ সরকার বলেন, তিনি গতকাল বুধবার রাতে একজনের সহায়তায় নিজেই এসে ভর্তি হন। পরে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে নেশা জাতীয় কোনো দ্রব্য খাওয়ানো হয়েছে। তিনি কিছুটা সুস্থ হলে জানান, ঢাকার কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে তিনি মোহনগঞ্জ চলে আসেন। বিষয়টি তার পরিবারের লোকজনকে জানালে বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিবারের সদস্যরা তাকে নিতে এসেছেন। এখনো পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ননি ফরহাদ। তার সাথে কি হয়েছি তাও মনে করতে পারছেন না। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা রেফার্ড করা হয়েছে।

মোহনগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে অবহিত করেনি ।