মে দিবস—শ্রমিকের ন্যায্য অধিকারের জন্য নতুন অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ৩:০৩ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২৫

মে দিবস—একটি দিনের নাম নয়, এটি একটি আন্দোলনের নাম; একটি সংগ্রামের নাম। বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির অধিকারের জন্য রক্ত দিয়ে গড়া ইতিহাসের নাম। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে “আট ঘণ্টা শ্রম” দাবিতে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় আজ বিশ্বজুড়ে মে দিবস পালিত হয়। সেই দিন শ্রমিকেরা শুধুমাত্র কাজের সময় নির্ধারণ চায়নি, তারা চেয়েছিল মানবিক মর্যাদা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য পারিশ্রমিক।

আজ ২০২৫ সালে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে, এই দাবিগুলোর কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে? কতটা উন্নয়ন হয়েছে শ্রমজীবী মানুষের জীবনে? বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশে?

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি গার্মেন্টস, নির্মাণ, কৃষি ও পরিবহন খাত। এই খাতগুলোর পিছনে রয়েছে কোটি শ্রমিকের ঘাম ও পরিশ্রম। অথচ প্রায়ই দেখা যায়, শ্রমিকদের তাদের প্রাপ্য বেতন, ওভারটাইম, ঈদ বোনাস কিংবা অবসর ভাতা আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে হয়। অনেক সময় তারা আন্দোলনে আ/হ/ত, এমনকি নি/হ/তও হন।

গত ঈদুল ফিতরের সময়ও আমাদের কাঙ্খিত বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের যৌক্তিক পাওনা আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়েছে, লা/ঞ্ছি/ত, আ/হ/ত হতে হয়েছে।

সাভার ট্র্যাজেডির মতো ঘটনার পরেও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি অনেক প্রতিষ্ঠানে। একটি দেশে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পেতে জীবন বাজি রাখতে হয়—এটি সভ্যতার জন্য লজ্জাজনক।

অথচ আমাদের ধর্ম ইসলামে শ্রমিকের অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— “ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৪৩০)

এই হাদিসে একদিকে যেমন শ্রমিকের অধিকার দ্রুত বুঝিয়ে দেওয়ার আদেশ আছে, অন্যদিকে রয়েছে মালিকদের প্রতি নৈতিক দায়িত্বের আহ্বান। ইসলাম, আইন এবং মানবতাবোধ—সবই শ্রমিকের পাশে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কেন বাস্তবে শ্রমিককে প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার হতে হয়?

বাংলাদেশের শ্রম বাজারে বারবার দেখা যাচ্ছে মালিকপক্ষের অনিয়ম, শ্রম আইনের অপ্রয়োগ এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা শ্রমিকদের জন্য অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করছে। অনেক শ্রমিক বছরের পর বছর কাজ করে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেওয়ার সময় কিছুই পান না। শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার পেলেও অনেক ক্ষেত্রে তা বাধাগ্রস্ত হয়।

মে দিবসের শিক্ষা শুধু অতীতের স্মরণ নয়—এটি একটি চলমান দায়িত্ব। আজ প্রয়োজন শ্রমনীতি সংস্কার, শক্তিশালী শ্রম আদালত, স্বচ্ছ ট্রেড ইউনিয়ন ও মালিক-শ্রমিকের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো শ্রমিকের পাশে দাঁড়ানো, ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া, এবং জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এই মে দিবসে আমরা যেন শুধু লাল পতাকা উড়িয়ে থেমে না যাই, বরং প্রতিজ্ঞা করি— শ্রমিক যেন আর র*ক্ত দিতে না হয় তার অধিকার আদায়ের জন্য। ঘাম শুকানোর আগেই যেন তার ন্যায্য মজুরি তার হাতে পৌঁছে যায়।শ্রমিকের অধিকার মানেই দেশের সম্মান!

লেখক: দেলোয়ার হোসেন মাসুদ, যুগ্ম-সম্পাদক,  (কেন্দ্রীয়) মানবাধিকার ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ।