মোহনগঞ্জে আইসি-ভিজিডি প্রকল্পে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: ২:৪৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২৩

কামরুল ইসলাম রতনঃ
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে আইসি-ভিজিডি প্রকল্পে সরকারি সহায়তার বিপরীতে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অত্র উপজেলার ৩ নং তেতুলিয়া ইউনিয়নের এক ও দুই নম্বর ওয়ার্ডের ৪৪ জন উপকারভোগীদের অধিকাংশদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপকারভোগীরা।

শনিবার বিকালে তেতুলিয়া এলাকায় গেলে উপকারভোগীরা এমন অভিযোগ করেন। পদক্ষেপ নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে উপকারভোগীদের নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এ বিষয়ের সার্বিক তত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন। হতদরিদ্র উপকারভোগীরা জানিয়েছেন, পদক্ষেপ নামের একটি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) একজন কর্মকর্তা ও দুই ওয়ার্ডের মেম্বারদের কাছে তারা দুই হাজার টাকা করে ঘুষ দিয়েছেন। টাকা না দিলে উপকারভোগীর তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়া হবে এমন হুমকি দেওয়ার পর তারা টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান। টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দুই মেম্বার ও এনজিও কর্মকর্তা। তবে এনিজও কর্মকর্তা বলছেন- ঘুষের টাকা ওই দুই মেম্বার নিয়েছেন। আর দুই মেম্বার বলছেন- তাদের মাধ্যম দিয়ে এনজিও কর্মকর্তা ঘুষ নিয়েছেন।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্বের ভিজিডি কার্ডধারী উপকারভোগীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কিছু সংখ্যককে আইসি-ভিজিডি প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রকল্পে মোহনগঞ্জ উপজেলায় এক হাজার ৪০০ জন তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাদের স্বাবলম্বী করতে পদক্ষেপ নামে একটি এনজিও সংস্থার অধীনে ব্যবসায়ীক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৪১ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেককে ২০ হাজার করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া প্রশিক্ষণের জন্য কিছু নাস্তা খরচও দেওয়া হবে। সমস্ত টাকাই উপকারভোগীদের একাউন্টে দেওয়া হবে। পুরো প্রকল্প তত্বাবধান করবে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়। তেতুলিয়া ইউনিয়নের তেুতলিয়া গ্রামের উপকারভোগী (দুই নম্বর ওয়ার্ড) নুরুন্নাহার আক্তার, রিনা বেগম, আঙ্গুরা আক্তার ও পান্না আক্তার জানায়, মেম্বার বলেছে দুই হাজার টাকা না দিলে তালিকা থেকে আমাদের নাম কেটে দেওয়া হবে। তখন আমরা কোন সহায়তা পাব না। আমরা ধার দেনা করে দুই হাজার টাকা সংগ্রহ করে মেম্বারের কাছে দিতে হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে ভাতা, আরও বিভিন্ন সহায়তার দেওয়া হকে বলেও তারা আশ্বাস দিয়েছেন। এনজিও’র কর্মকর্তা মাহবুব প্রথমে বলেছে সহায়তা পাওয়ার জন্য কাউকে টাকা দিতে হবে না।

পরে তিনিই কল করে বলেছেন দুই হাজার টাকা দেওয়ার জন্য। একই গ্রামের মাফিয়া আক্তার, ফাতেমা আক্তার ও স্মৃতি আক্তার জানায়, এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জুয়েল ও দুই নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বজলুর রহমানের কাছেই আমরা প্রত্যেকে দুই হাজার টাকা করে জমা দিয়েছি। টাকা না নেওয়ার জন্য কত অনুরোধ করেছি কিন্তু তারা এসবে পাত্তা দেয়নি। বলেছে-টাকা না দিলে নাম কাটা যাবে। পরে ঋণ করে এনে টাকা দিয়েছি। তেতুলিয়া গ্রামের এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেসমিন আক্তার জানান, আমরা সবাই দুই হাজার করে টাকা দিয়েছি মেম্বারদের হাতে। দুই ওয়ার্ডে ৪৪ জন সুবিধাভোগীর প্রায় সবাই দুই হাজার টাকা দিয়েছে। আমরা সবাই এক জায়গায় ৪ দিন প্রশিক্ষণ করেছি। টাকাও সবাই একত্রে দুই মেম্বারের কাছে দিয়েছি। এ বিষয়ে তেুতলিয়া ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জুয়েল মিয়া বলেন, এনজিও কর্মকর্তা মাহবুব আমাদের মাধ্যম দিয়ে উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সব টাকা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রমাণ আছে আমাদের কাছে। আর আমার ওয়ার্ডে কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি। দুই নম্বর ওয়ার্ডের লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। দুই নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বজলুর রহমান বলেন, আমরা কোন টাকা নেইনি। টাকা নিয়েছে এনজিও কর্মকর্তা। তিনি উপকারভোগীদের ফোন করে বলেছেন আমাদের কাছে টাকা জমা রাখতে।

পদক্ষেপ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাঠ কর্মী ও তেতুলিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাঠকর্মী মাহবুব মিয়া বলেন, আমি উপকারভোগীদের কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি। টাকা নিয়েছে মেম্বাররা। এখন বিপদ দেখে আমাকে ফাঁসিয়ে দিতে চাইছে। তাদের চাপ দিচ্ছি টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। আগামী শনিবার টাকা ফেরত দিবে বলেছে। বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুমানা রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ প্রকল্পকে যারা ক্ষতিগ্রস্থ বা বাধাগ্রস্ত করবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। শিগগির এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে বিস্তারিত জানাতে বলেছি। প্রমাণ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তেতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহনগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের সাবেক ডিপি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের তালুকদার মিলন বলেন, ইহা এক প্রকার দুর্নীতি। গরিব লোকের টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম চৌধুরী জহর বলেন, আপনার কাছ থেকে এই প্রথম শুনলাম। উক্ত প্রকল্পে দুর্নীতি করে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমিও জোর দাবি জানাচ্ছি।