মোহনগঞ্জে নার্সের অবহেলায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

প্রকাশিত: ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৮, ২০২৩

কামরুল ইসলাম রতনঃ
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নার্সের অবহেলায় মাহিন নামে নয় মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাহিনের।

এ ঘটনায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স উম্মে হাবিবার বিরুদ্ধে চিকিৎসা সেবায় অবহেলার অভিযোগ তুলেছেল শিশুর পরিবারের লোকজন। মাহিন উপজেলার বড়কাশিয়া-বিরামপুর ইউনিয়নের বামেরচর গ্রামের জাহাঙ্গীরের ছেলে।

নার্সের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে শিশুটির পরিবারের লোকজন নার্স উম্মে হাবিবাসহ অন্য নার্সদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে মারমুখী হয়ে উঠে। উপস্থিত লোকদের চিৎকার চেঁচামেচিতে হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতাল থেকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার থানা পুলিশ কে খবর দেয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে এসে উত্তেজিত জনতাকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

শিশু মাহিনের বাবা জাহাঙ্গীর জানান, ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত মাহিনকে শুক্রবার ভোর চারটার দিকে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। জরুরি বিভাগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক জ্বর কমাতে সাপেজিটরি স্টিক লিখে দেন। জ্বর কমলে স্যালাইন দিতে বলেন চিকিৎসক। কিন্তু ওই সময়ে কোন ফার্সেমি খোলা পাওয়া না থাকায় সাপেজিটরি স্টিক কেনা যায়নি। পরে ছায়টার দিকে সাপেজিটরি স্টিক কিনে এনে ব্যবহার করার কিছুক্ষণ পর জ্বর কমে যায়। তবে জ্বর কমার পর দায়িত্বরত নার্স উম্মে হাবিবাকে স্যালাইন পুশ করতে বললে তিনি না দেখেই বলেন জ্বর এখনো কমেনি। জ্বর কমেছে এ কথা বারবার বলার পরও তিনি আমাদের কারো কথা পাত্তা দেননি। উল্টো আরও খারাপ আচরণ করেছেন। শেষে সাড়ে আটটার দিকে মাহিনের মৃত্যু হয়। যথাসময়ে স্যালাইন দিলে এমন ঘটনা হয়তো ঘটতো না। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

শিশু মাহিনের নানা মো. ফয়েজ উদ্দিন বলেন, নার্সের অবহেলাতেই আমার নাতির মৃত্যু হয়েছে। যথাসময়ে স্যালাইন দিলে এমনটা হতো না। বারবার বলার পরও নার্স তার কথায় পাত্তা দেয়নি।

অভিযুক্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স উম্মে হাবিবা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিশুটিকে মুমূর্ষ অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল। গায়ে ভীষণ জ্বর থাকায় ওই সময় স্যালাইন দেওয়া হয়নি। সেটা তাদের বুঝিয়ে বলেছি। কিন্তু স্বজনরা সেটা বুঝতে রাজি নয়। আমরা সবটুকু চেষ্টা দিয়ে একজন রোগীকে সেবা দেই। রোগী শিশু হলে তো বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অসুখের কারণে রোগী মারা যেতে পারে. এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু রোগী মারা গেলে স্বজনরা হামলা করতে এলে নার্সরা কিভাবে ডিউিটি করবে। নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. পার্থ সরকার বলেন, ওই শিশুটির ডায়রিয়া হয় তিনদিন আগে। পরিবারের লোকজন তিনদিন পর্যন্ত বাড়িতে রেখে অন্য চিকিৎসা করেছেন। এতে অবস্থা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। পরে যখন হাসপাতলে নিয়ে আসে তখন অবস্থা মুমূর্ষ ছিল। গায়ে চার ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর ছিল। ঘণ ঘণ পাতলা পায়খানার কারণে অবস্থা জটিল হয়ে পড়ে শিশুর। এদিকে জ্বর থাকায় স্যালাইন দেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে নার্সের কিছু করার ছিল না। সেবার ক্ষেত্রে নার্সের হয়ত কিছুটা আন্তরিকতার অভাব থাকতে পারে। শিশুটি মারা যাওয়ার পর স্বজনেরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেহানা পারভীন বলেন, বিষয়টি অবহিত হয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।