কামরুল ইসলাম রতন:
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে হত্যা চেষ্টা মামলা থেকে রক্ষায় নিজেদের পরিত্যক্ত চায়ের দোকানে আগুন লাগিয়েছেন আসামিরা। পরে এর দোষ মামলার বাদী পক্ষের ওপর চাপাতে পাল্টা মামলা করা হয়েছে।
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের বড়তলী-বানিয়াহারী ইউনিয়নের বারঘর নোয়াগাঁও গ্রামে সম্প্রতি এ ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে আগুন লাগার বিষয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস, থানা পুুলিশ ও জনপ্রতিনিধি কেউই কিছু জানেন না।
মামলার অভিযোগ, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বারঘর নোয়াগাঁও গ্রামের কাইয়ুম জমি বিরোধে আ. মান্নানের ছেলে বাবলু মিয়াকে (৩৫) গত ৫ জুন ছুরিকাঘাত করে। এ নিয়ে বাবলুর চাচা শাহজাহান বাদী হয়ে থানায় কাইয়ুম, তার ভাই আবুল কালাম, খাইরুল ও চাচাতো ভাই মোজাম্মেল হকসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এদিকে গুরুতর আহত বাবলুকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরে মামলার হাত থেকে বাঁচতে কালামের বাড়ির সামনে থাকা ঝড়াঝীর্ণ চায়ের দোকানে প্রথমে লুটপাট হয়েছে বলে ১১ জুলাই আবুল কালাম বাদী হয়ে আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। এতে প্রতিপক্ষের হেলাল, সাখাওয়াতসহ ৩২ জনকে আসামি করা হয়। আদালতে অভিযোগটি তদন্তের জন্য মোহনগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দেন।
পরে গত বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দিবাগত রাতে ওই লুটপাট হওয়া দোকানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এর দায় প্রতিপক্ষের ওপর চাপায় কালামের পরিবার।
স্থানীয়রা জানায়, আগুন লাগার বিষয়টি হাস্যকর। এটি মামলা থেকে বাঁচার জন্য একটা কৌশল। কারণ বিকেলে বিদ্যুতের মিটার সরিয়ে পরে রাতে তারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অনেকে আগুন না লাগানোর জন্য কালামের পরিবারের লোকজনকে বলেছে। তারা কথা শুনেনি। পাল্টা মামলার নেশায় তারা নিজের ঘরে আগুন দিয়েছে।
মসজিদের মোতায়াল্লি মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, আগুন রাত তিনটার দিকে হয়তো লেগেছে। ফজরের নামাজ পড়ে গিয়ে দেখি কালামের পরিবারের লোকজন আগুনের সামনে দাড়ানো।
অবাক বিষয় হলো-প্রতিবেশী কেউ আগুন দেখে আসলো না কেন?
স্থানীয় মেম্বার মাসুদ মিয়া বলেন, আমাকে সাড়ে তিনটায় ফোন দিয়ে আগুনের বিষয়ে জানিয়েছে কালাম। গিয়ে দেখি আগুন প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে আশপাশের কাউকে সেখানে দেখিনি। বিদ্যুতের তার সরানোর বিষয়টিতে তিনি অবাক হন।
হত্যা চেষ্টা মামলার আসামিরা কেউ বাড়িতে না থাকায় কালামের বোন জেসমিন আক্তার বলেন, গ্রামের বাবলু নামে দুই ব্যক্তি আমাদের দোকানের সামনে ঝগড়া লাগে। আমার ভাই কালাম তাদের ঝগড়া থামায় ও তাদের অভিভাবকদের বিষয়টি জানায়। মান্নানের ছেলে বাবলুকে ছুরি মেরেছে আবাল হোসেনের ছেলে বাবলু। কিন্তু ঝগড়া থামানোর কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ভাই কালামসহ অন্য ভাইদের ওই মামলায় আসামি করা হয়। যে ছুরি মেরেছে সেই বাবলুকে আসামি করা হয়নি। কারণ আমাদের এলাকায় মামলা এমন উল্টোই হয়।
জেসমিন আক্তার আরও বলেন, রাত ১১টার দিকে দোকানে আগুন দেয় প্রতিপক্ষের লোকজন। আমরা নেভাতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাধা দেয়। এ সময় প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে আসেনি। এত রাতে বিধায় পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ কাউকেই জানানো হয়নি।
বড়তলী-বানিয়াহারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহাগ তালুকদার সোমবার বলেন, যাদের দোকান ঘরে আগুন লেগেছে তারা আজ পর্যন্ত আমাকে বিষয়টি জানায়নি। তবে ঘটনার পরদিন দুপুরে মেম্বার বিষয়টি আমাকে ফোনে জানিয়েছিল। আগুন লাগলে তো প্রতিবেশীরা শত্রু-মিত্র সবাই নেভাতে আসে। তাদের বেলায় কেউ আসেনি। বিষয়টি রহস্যজনক। আগুন লাগার বিষয়টি পাল্টা মামলা করার জন্য হতে পারে।
তিনি বলেন, আবুল কালামের ভাই বাবলুকে ছুর মেরেছে এ কথা সত্য। আহত বাবলু চিকিৎসাধীন এখনো পুরোপুরি সুস্থ্য হয়নি।
মোহনগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অফিসের ডিউটি অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুুপুরে জানান, নোয়াগাঁও গ্রামে দোকান ঘরে আগুন লাগার কোন ম্যাসেজ আমার পাইনি। গত ১৯ জুলাই পৌরশহরে বিদ্যুতের খুঁটিতে আগুন লেগেছিল। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত উপজেলার কোথাও কোন আগুন লাগার ম্যাসেজ পাইনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহনগঞ্জ থানার এস, আই তাজুল ইসলাম বলেন, আবুল কালাম ও কাইয়ুম এই দুই আসামি পলাতক রয়েছে। অন্য দুইজন জামিনে আছেন। আর ভিকটিম বাবলু ময়মনসিংহে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর আগুন লাগার বিষয়টি পরে জেনেছি। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।
মোহনগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, ৫ জুন ঘটনার পর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য একটি অপহরণ মামলা সাজানো হয়েছিল। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর অপহরণের মামলা থেকে সটকে পড়ে। আগুনে পোড়ার ঘটনাটি পুলিশ তদন্তে মিথ্যা এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য সাজানো মামলা বলে আমাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছে। পুরো মামলাটি সঠিক নয় বলে উচ্চ পর্যায়ে অবিহিত করব।