মোহনগঞ্জে মসজিদের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ ওলামালীগ নেতার বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ১২:২২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪

মোঃ কামরুল ইসলাম রতনঃ
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে মসজিদের কোটি টাকার জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন ওলামালীগ নেতা সৈয়দ তপন।

দীর্ঘদিন ধরেই জায়গা ফেরত চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোন ফল পায়নি মসজিদ কমিটি।

উল্টো এমপির আত্মীয় পরিচয়ে মসজিদ কমিটির লোকজনকে হয়রানি করেছেন ওলামা লীগ নেতা সৈয়দ তোফায়েল আহমেদ তপন ।

এমন অভিযোগ করেছেন পৌরশহরের টেংগাপাড়া ( সৈয়দ বাড়ি মসজিদ) মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া শামীম।

অভিযুক্ত সৈয়দ তোফায়েল আহমেদ তপন পৌরশহরের টেংগাপাড়া এলাকার সৈয়দ বাড়ির বাসিন্দা। তবে প্রায় সময়ই তিনি ময়মনসিংহ থাকেন। তপন উপজেলা ওলামালীগের স্বঘোষিত সাবেক সভাপতি এবং সাবেক এমপি সাজ্জাদুল হাসানের আত্মীয়।

টেংগাপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া শামীম জানান, টেংগাপাড়া জামে মসজিদের নামে ২১ শতাংশ জায়গা রয়েছে। এরমধ্যে ১০ শতাংশ জায়গায় মসজিদ রয়েছে। বাকি ১১শতাংশ জায়গা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে মসজিদের আয় বর্ধনের কাজে ব্যবহার করার জন্য রাখা হয়। কিন্তু ওলামালীগ নেতা সৈয়দ তোফায়েল আহমেদ তপন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সেই জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে নিজের বলে দাবি করছেন। এ নিয়ে নানা দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাইনি। উল্টো তিনি মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে হয়রানি করেন। তপন নিজেকে এমপি সাজ্জাদুল হাসান এর মামা পরিচয় দেন বলে তাঁর দাপটে কেউ এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। শেষে গত জুনে মসজিদের জায়গাটি উদ্ধারে কমিটির পক্ষ থেকে সভাকরে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে রেজুলেশন করা হয়।

সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া শামীম আরও জানান, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জায়গাটি উদ্ধারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয় কমিটির পক্ষ থেকে। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে থানায় হুমকি-ধামকির অভিযোগ দেন তপন। ওই জায়গাটির বর্তমান বাজার দর কোটি টাকার বেশি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৮-৯ বছর ধরে টেংগাপাড়া মসজিদের জায়গাটিতে মার্কেট নির্মাণ করেছেন তপন। কাগজপত্র ঘেঁটে তিন-চার বছর আগে মসজিদ কমিটি তাদের জায়গাটির দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য তপনকে জানায়। তিনি জায়গা না ছেড়ে নানা তালবাহানা শুরু করেন। এমপির প্রভাব খাটিয়ে উল্টো কমিটির লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় হুমকি-ধমকির অভিযোগ করেন। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদককে বিএনপি নেতা উল্লেখ করে থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেন তপন। তবে থানা পুলিশ অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন। এদিকে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মসজিদের জায়গা ছেড় দিতে চাপ দেওয়ায় গত ৫-৬ মাস ধরে এলাকায় কম থাকেন এবং নিজের মোবাইফোন বন্ধ রাখেন তপন।

এ বিষয়ে জানতে টেংগাপাড়া এলাকায় সৈয়দ তোফায়েল আহমেদ তপনের বাড়িতে গত এক সপ্তাহ যাবৎ খুঁজে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এমনকি কল করে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইলফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর সাজ্জাদুল আলম শিবলি জানান, মসজিদের জায়গাটি দখলমুক্ত করার বিষয়ে কয়েক মাস আগে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আলোচনায় বসেছিলেন। তখন জায়গাটি ছেড়ে দেবেন বলেছিলেন সৈয়দ তপন। কিন্তু পরে আর তিনি জায়গাটি ছাড়েননি। তবে এরপর থেকে তপন এলাকায় কম আসেন, অনেক সময় মোবাইল বন্ধ রাখেন। এনিয়ে ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেছে মসজিদ কমিটি। বিষয়টি তদন্ত করছে উপজেলা প্রশাসন। আশা করছি সুষ্ঠু সমাধান হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ানা কবির বলেন, মসজিদের জায়গা দখলের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।