মোহনগঞ্জে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ আনা সেই প্রতিযোগীর আত্মহত্যার চেষ্টা
কামরুল ইসলাম রতনঃ
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ আনা সেই শিক্ষার্থী মম তালুকদার (১৪) হারপিক ও সেম্পু পানে আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টায় এখন মোহনগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তার পিতা মোঃ মহসিন মোহনগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। ডাঃ মুসা আহমাদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এখন একটু ভালোর দিকে। বিষয়টি অবশ্যই তলিয়ে দেখা হবে।
উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মম তালুকদার যাচাই-বাছাইয়ে প্রথম হয়। তবে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে একই স্কুলের শরীর চর্চা শিক্ষক পাপী রানী দেবীর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সম্পূর্ণা পন্ডিতকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়।
অনিয়মের বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মম তালুকদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ানা কবিরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলেও পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন কর্তৃপক্ষ। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মম তালুকদার।বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ানা কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৮-২৯ এপ্রিল শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। এতে যাচাই বাচাইয়ে সবচেয়ে বেশি নাম্বার পেয়ে পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনির ছাত্রী মম তালুকদার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়। একই স্কুলের শরীর চর্চা শিক্ষক পাপী রানী দেবীর মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী সম্পূর্ণা পন্ডিত কাছাকাছি নাম্বার পায়। শিক্ষক পাপী রানীর মেয়েকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী করতে অনিয়মের আশ্রয় নেন প্রধান শিক্ষক। প্রথমে মমর স্কাউটের সনদে স্বাক্ষর করলেও পরে সেই সনদ বাতিল করে দুইজনের নাম্বার সমান করে ফেলেন প্রধান শিক্ষক। শেষে লটারি করে সম্পূর্ণা পন্ডিতকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী ঘোষণা করা হয়। এমন অনিয়মের বিচার চেয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী মম তালুকদার। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পান ইউএনও। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কয়েক ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ইউএনও কার্যালয়ে সহকারী ঘোষণা করা হয়। বৈঠকে অনিয়মের জন্য প্রধান শিক্ষককে তিরষ্কার করলে পূর্বের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন তিনি।
পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজী) আনেয়ার হোসেন বলেন, সকল বিবেচনায় মম তালুকদার বেশি নাম্বার পাওয়ায় তাকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী ঘোষণা করা হয়। পরে নানা চাপের কারণে মমর প্রত্যয়ন করা স্কাউট সনদকে ভুল বলে চালিয়ে দিয়ে তার ৫ নম্বর কেটে দেওয়া হয়। এতেও মম ও সম্পূর্ণা পন্ডিতের নম্বর সমান হয়। পরে লটারি করে সম্পূর্ণাকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী ঘোষণা করা হয়। এটি পুরোপুরি অনিয়ম। যেহেতু সম্পূর্ণা পন্ডিতের মা স্কুলের শরীর চর্চা শিক্ষক, এদিকে স্কুলের স্কাউটের কোন খাতাপত্র ঠিক নেই। তিনি ইচ্ছে করলেই যাকে খুশি স্কাউট সদস্য দেখাতে পারেন। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা যদি তাদের স্কুলে নিজের শিক্ষকদের কাছে অবিচারের-অনিয়মের শিকার হয়। তাহলে শিক্ষকদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ উঠে যাবে।
বৈঠকে থাকা জেলা পরিষদ সদস্য সোহেল রানা জানান, এটা একদম পরিষ্কার যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিয়ম করে সম্পূর্ণাকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী ঘোষণা করেছেন। নিজের স্বাক্ষরিত সনদকেই অস্বীকার করে বলছেন- এটা তিনি ভুলে স্বাক্ষর করেছেন। এমন অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না।
শিক্ষিকা পাপী রানী দেবী জানান, প্রথমে হিসেবে ভুল হয়েছিল। পরে সঠিক হিসেব করায় সম্পূর্ণা ও মমর পয়েট সমান হয়েছে। তবে স্কাউট শিক্ষার্থীদের কোন খাতাপত্র নেই। কে কখন স্কাউটে যোগদিল তারও কোন তথ্য নেই বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা জানান, অনিয়ম করে নাম বাদ দেওয়ার মম খুবই ভেঙে পড়েছে। ভয়ে আছি কোন দুর্ঘটনা করে বসে কিনা। আমি অনিয়মের বিচার চাই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা সবগুলো প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে পয়েন্ট অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী ঘোষণা করি। অভিযোগ পেয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে যোগাযোগ করে জেনেছি- তাঁদের নির্বাচন সঠিক ছিল।
পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খায়রুল বাশার বলেন, প্রথম ঘোষণা ভুল ছিল। পরে সঠিক হিসাব করে দুইজনের নাম্বার সমান হওয়ায় লটারিতে নির্বাচন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ানা কবির বলেন, ভুলে মমর স্কাউট সনদ প্রত্যয়ন করেছেন বলে জানিয়েছেন করা হয়েছে প্রধান শিক্ষক। যদিও এক্ষেত্রে ভুল প্রত্যয়নের সুযোগ নেই। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্যদের সাথে বসে মিমাংসা করা হয়েছে। এতে পূর্বের সিদ্ধান্তই বহাল রয়েছে। স্কুলের স্কাউট বিষয়ে যোগদান, প্রশিক্ষণসহ শিক্ষার্থীদের খাতাপত্র সঠিক নেই। কে স্কাউট সদস্য তা জানারও সুযোগ নেই। সবকিছুই শিক্ষকের মনগড়া। এ বিষয়টি সঠিক জায়গায় নিয়ে আসা হবে। আমাদের প্রতিনিধি দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় অবস্থানকালে ক্রিয়া শিক্ষিকার মেয়ের পক্ষে ইউএনও মহোদয়ের নিকট মোবাইল করতে শোনা যায়। শিক্ষিকা পাপি রানী তার মেয়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী ঠিক রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।