মোহনগঞ্জে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মামলা তুলে নিতে অপর স্বর্ণ ব্যবসায়ীর হুমকি
কামরুল ইসলাম রতনঃ
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে অপর স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।
শনিবার সকালে আমাদের প্রতিনিধির কাছে
ছিনতাইকারীর আত্মীয় স্বজনরা এসব হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুজন দত্ত। হুমকির বিষয়টি উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ব্যবসায়ী সুজন দত্ত।
শনিবার দুপুরে অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহনগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান। এরআগে গত ২৬ নভেম্বর সুজন দত্ত হুমকির বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেন।
গত ৩০ অক্টোবর রাতে উপজেলার দেওথান গ্রামের হিমেল বণিক (২৬) নামে এক যুবক সুজন দত্তকে কুপিয়ে জখম করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেন সুজন দত্ত। কয়েকদিন বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থেকে পরে আদালত থেকে জামিনে আসে হিরা বণিক।
তবে ছিনতাইকারী প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা তুলে নিতে সুজন দত্তকে হুমকি দিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ব্যবসায়ী সুজন দত্ত উপজেলার বার্ত্তারগাতী গ্রামের মৃত সুবোধ দত্তের ছেলে। আর অভিযুক্ত হিমেল বণিক একই উপজেলার দেওথান গ্রামের হীরা বণিকের ছেলে।
মামলার অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, মোহনগঞ্জ শহরের পোদ্দার পট্টিতে সুজন দত্তের একটি স্বর্নের দোকান রয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর রাতে ৬ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে দোকার থেকে বাসায় যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের শিকার হন সুজন দত্ত। থানার অদূরে মার্কাজ রোডে অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা মুখোশ পড়া ছিনতাইকারী সুজন দত্তের শরীরে চা পাতি কুপিয়ে জখম করে স্বর্ণ ও টাকার ব্যাগ নিয়ে নেয়। তবে সুজন দত্তের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করে তার পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ছিনতাইকারী হিরা বণিক বলে উপস্থিত লোকজন সনাক্ত করে। এদিকে সুজন দ্ত্ত হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে থানায় দুইদিন পর থানায় মামলা করেন। তার শরীরে বেশ কয়েক জায়গায় চা পাতির কুপ লাগে।
মামলার পর আত্মগোপনে চলে যায় হিমেল বণিক। কয়েকদিন নানা জায়গায় লুকিয়ে থেকে পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় ফেরেন।
এদিকে মামলা তুলে নিতে সুজন দত্তকে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্ত হিমেল বণিকের বাবা হীরা বণিক, চাচা রুপন বণিক ও নানা দীপক বণিক। মামলা তুলে না নিলে সুজন দত্তকে ব্যবসায়ীকভাবে এক ঘরে করা হবে বলেও তারা হুমকি দেন। কারণ হুমকি দাতারা সবাই স্বর্ণ ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সুজন দত্ত থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সুজন দত্ত জানান, হিমেল বণিক জামিনে আসার পরপরই তার বাবা, চাচা ও নানা মিলে আমাকে দোকানে এসে মামলা তুলে নেওয়া হুমকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পাশপাশি দোকানে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছি। স্বর্ন ব্যবসায়ীরা প্রায় সবাই বণিক। এদিকে ছিনতাইকারী বণিক হওয়ায় তারা তাদের পক্ষে একত্র হয়েছে। অভিযুক্তের নানা দীপক বণিক জুয়েলারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় মামলা তুলে না নিলে আমাকে ব্যবসায়ীকভাবে এক ঘরে করার হুমকিও দিয়েছেন।
তবে হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত হিমেল বণিকের বাবা হীরা বণিক। তিনি বলেন, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমরা কোন হুমকি দেইনি। মামলা হয়েছে বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে।
মোহনগঞ্জ জুয়েলারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও অভিযুক্তের নানা দীপক বণিক হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ওই ঘটনাটি কোন ছিনতাই ছিল না। সুজন দত্তের কাছে টাকা পাওনা ছিল হিমেলের। প্রয়োজনের সময় টাকা না দেওয়ায় ধাক্কাধাক্কা হয়েছে দুজনের মধ্যে। এটিকে সুজন দত্ত ছিনতাই বলে প্রচার করে মামলা করেছে। বিষয়টি নিজেরা সমাধান করব বলেছিলাম কিন্তু আমাদের কথা না শুনে সুজন দত্ত মামলা করেছে। মামলা যেহেতেু করেছে তো বিষয়টি আইনিভাবে সমাধান হবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা আমার একসাথে মিলে মিশে থাকি। সবাই অনুরোধ করার পরও মামলা করায় কারিগরেরা এখন সুজন দত্তের কাজ করতে চাইছে না। যদিও আমি কারিগরদের বলেছি কাজ করে দেওয়ার জন্য।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহনগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান বলেন, মামলায় হিমেল বণিকসহ দুইজন আসামিই জামিনে আছে। মামলাটি তদন্তের পাশাপাশি হুমকির অভিযোগটিও তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য- গত ২৭ অক্টোবর থানার ২০০ গজ দূরে ঝলমল সরকার নামের এক ব্যবসায়ীকে একই কায়দায় ছুরিকাঘাত করে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ করেন। তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।