মোহনগঞ্জ পৌরসভায় জাল দলিলে হোসনে আরার বসতভিটা দখলের চেষ্টা
মোঃ কামরুল ইসলাম রতন:
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ পৌরসভায় বারবার হামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে এক নারীর বসতঘর দখলের চেষ্টা করছে স্থানীয় ভূমিদস্যুর একটি চক্র।
নানা জায়গায় প্রতিকার চেয়েও রক্ষা পাচ্ছেন না হোসনে আরা নামে এই নারী। তিনি মোহনগঞ্জ পৌরশহরের উত্তর দৌলতপুরের বাসিন্দা হোসনে আরা (৪৫ )। ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীর নাম মুক্তু খান।
প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম চাঁন মিয়া ও তাঁর সহযোগী প্রভাষক অখিল চন্দ্র নামে একজনসহ আরও কয়েকজন মিলে ওই নারীকে তাঁর বসতঘর থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে।
এক্ষেত্রে ওই চক্রটি জমির জাল দলিল তৈরি করে সেটি দেখিয়ে হোসনে আরাকে তাঁর ঘর থেকে উচ্ছেদ করতে হামলা-মামলা ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
এমন অভিযোগ করে হোসনে আরা বলেন, আমার গ্রামের সকল জায়গা জমি বিক্রি করে শহরে ১৫ শতাংশ জায়গা কিনেছি। জমি ক্রয় করার পর ক্ষয়কৃত জায়গা অনলাইনে খারিজ করে ভূমি কর দিয়ে নতুন হোল্ডিং খোলা হয়।
উক্ত জমির কাগজপত্র দিয়ে পৌরসভা থেকে বৈধভাবে অনুমোদন নিয়ে একটি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করেছি। কিন্তু প্রতিবেশী চাঁন মিয়া ওই জায়গার জাল দলিল তৈরি করে বসতঘরটি দখল করে নিতে চাইছে। প্রতিনিয়ত লোকজন দিয়ে আমাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। বসতঘর ভেঙে দিতে আসছে বারবার। আবার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এলাকার গণ্যমান্যদের কাছে বিচার দিয়েও এর কোন প্রতিকার পাইনি।
জমির কাগজপত্র ঘেঁটে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মোহনগঞ্জ পৌরশহরের উত্তর দৌলতপুর মৌজায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৫ শতাংশ জায়গা কিনেন হোসনে আরা। জমির মালিক এক সময় দৌলতপুরে থাকতেন। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করলেও জমি কেনাবেচার সুবিধার্থে এলাকায় তিন ব্যক্তিকে পাওয়ার অব এ্যাটোর্নি দেন । জমির মালিকের মনোনিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত ওই তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ১৫ শতাংশ জমি বৈধভাবে দলিল করে নেন হোসনে আরা।
জমি কেনার পরপরই খারিজও করে নেন হোসনে আরা। কিন্তু একটি ভূমিদস্যু চক্র পাশের সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ৭ আগস্ট ১৯৯১ সালে আবদুল আজিজ একটি জাল দলিল করেন। ওই জাল দলিলে ২ একর ৯১ শতাংশ জমি দলিল করে নেয়।
পরবর্তীতে ভুয়া দলিলের জমিসহ ৫ একর ৩২ শতাংশ জমি দাবি করে ১৯৯৮ সালে নেত্রকোনা আদালতে মামলা করেন আব্দুল আজিজ। মামলা-নং ২২০। পরে ২০০৯ সালে জমির মূল মালিক আব্দুল হক ওয়ারিশানদের পক্ষে নেত্রকোনা আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ নুরনাহার বেগম শিউলি ডিক্রী রায় প্রদান করেন। ভূমিদস্যু চক্রের প্রতিনিধি দৌলতপুরের রফিকুল ইসলাম চাঁন মিয়া, প্রভাষক অখিল কুমার সরকার সহ তাদের লোকজন সেই ভুয়া দলিল দেখিয়ে হোসনে আরা ও তার স্বামীকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে হোসনে আরা নেত্রকোণা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক বিএনপির উপজেলা শাখার সভাপতি আ খ ম শফিকুল হক জানান, চান মিয়া একটা ভয়ংকর লোক। প্রকৃত মালিক ধর্মপাশার সুখাইড় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যাইনি। ভুয়া ব্যক্তি দিয়ে একটি ভুয়া দলিল করে এই চক্রটি জমির মালিক সেজেছে। চান মিয়া আমার বিরুদ্ধেও একটি চাঁদাবাজির মামলা করেছে। আমার বৈধ জমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা অব্যাহত রেখেছে । চান মিয়া একজন মামলাবাজ ব্যক্তি । চান মিয়ার সাথে যুক্ত হয়েছে মহিলা কলেজের প্রভাষক অখিল কুমার সরকার।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম চাঁন মিয়ার মোবাইলফোনে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়
অপর অভিযুক্ত প্রভাষক অখিল কুমার সরকার জানান, আমি জমি এখানে আগে কিনেছি। এসব সমস্যা নিয়ে মামলা চলছে। আদালতের মাধ্যমেই সেটা সমাধান হবে।