
মোহনগঞ্জ উপজেলা নেত্রকোণা বাটি বাংলার রাজধানী খ্যাত প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্যে অনন্য নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১৯৭৫ সালে মোহনগঞ্জ
পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১৬ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। অত্যন্ত জনবহুল এ পৌরসভায় লোকসংখ্যা প্রায় ২৭১৯৩ জন। বিপুল এ জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ হলো শিশু আর এই শিশুদের মেধা-মনন বিকাশের পাথেয় বিনোদনের জন্য অত্র অঞ্চলে কোন আধুনিক শিশুপার্ক না থাকায় এই শিশু পার্কটি তৈরীর আবশ্যকতা ছিল অনিবার্য।
এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব জনাব সাজ্জাদুল হাসান এ শিশু পার্কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পৌরসভার সর্বশ্রেণির মানুষ এতে ইতিবাচক সাড়া দেয়।
উল্লেখ্য যে, প্রস্তাবিত এই শিশু পার্কটির পরিকল্পনায় আধুনিকতা ও রুচিশীল নান্দনিকতার এক চমৎকার সম্মিলন রয়েছে যা উপজেলা পর্যায়ে তো বটেই এমনকি ময়মনসিংহ বিভাগের অন্যান্য জেলা পর্যায়েও বিরল। প্রকল্পের ডিজাইনে রাখা হয়েছে অত্যাধুনিক সব রাইড, বিভিন্ন প্রদর্শনী আইটেম ও মনোরম পরিবেশ সমৃদ্ধ উদ্যানময় সৌন্দর্য্য যা একে পরিনত করবে একটি চমৎকার পারিবারিক অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রে। পার্কটি নির্মিত হলে মোহনগঞ্জ উপজেলার কোমলমতি শিশুদের তো বটেই এমনকি পাশ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর এবং নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি, আটপাড়া, মদন ও বারহাট্টা অঞ্চলের শিশু কিশোরদের জন্যও এটি সুস্থ, বিনোদন ও সৃষ্টিশীল মানসিক বিকাশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হিসেবে অবদান রাখবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
শিশু পার্কটির মোট জমির পরিমাণ ৫.২৯ একর, যার সম্পূর্ণ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য ১০,৭১,১৫,১৫০.০০ (দশ কোটি একাত্তর লক্ষ পনের হাজার একশত পঞ্চাশ) টাকা। এছাড়াও স্থাপত্য নির্মাণ ব্যয় সব মিলিয়ে প্রায় ছয় কোটি টাকা। জনাব সাজ্জাদুল হাসান মহোদয় পার্কটি নির্মাণের গোড়া পত্তন থেকে শুরু করে প্রতিনিয়ত প্রকল্পের অগ্রগতির প্রত্যক্ষ খোঁজখবর ও তদারকি নিশ্চিত করছেন। ফলে এই প্রকল্পটির ইতোমধ্যেই যথেষ্ঠ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
এ যাবৎ অগ্রগতির বিবরণ:
প্রকল্পটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপে রয়েছে মাটি ভরাট ও বাউন্ডারী ওয়াল। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে স্ট্রাকচারাল অংশ ও তৃতীয় ধাপে রয়েছে রাইডসমূহ।
প্রথম ধাপ: সার্বিক অগ্রগতি শকতরা ৯৯ ভাগ।
১) বাউন্ডারী: গ্রীলসহ দেয়াল নির্মাণ সম্পন্ন। কেবল রঙকরণ বাকী। অগ্রগতি শতকরা ৯৮ ভাগ।
২) মাটি ভরাট: ১০০ ভাগ সম্পন্ন।
দ্বিতীয় ধাপ: সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৫০ ভাগ।
১) মুল ফটক: ঢালাই কাজ শেষ। রোড ওয়ার্কের কাজ চলমান। টালির কাজ ও ফিনিশিং ওয়ার্ক (প্লাস্টার, SS গ্রীল, রং প্রভৃতি) বাকী। সর্বমোট অগ্রগতি ৭০%
২) হেক্সাগোনাল শেড: মূল ঢালাইয়ের কাজ শেষ। ফিনিশিং কাজ বাকী রয়েছে। সর্বমোট অগ্রগতি প্রায় ৭০%
৩) মূল অফিস ভবন: ঢালাইয়ের কাজ শেষ। ভবনের মূল অংশের কাজ সমাপ্ত। প্লাস্টার, রঙ, টাইলস ও ফার্ণিচারের কাজ বাকী রয়েছে। অগ্রগতি ৬৫%
৪) ফুড কর্ণার ও ক্যাফে: ঢালাইয়ের কাজ শেষ। অগ্রগতি প্রায় ৭০%
৫) ওপেন সিটিং প্লেস: ফাউন্ডেশন ও গাঁথুনি শেষ। শেডসহ ফিনিশিং বাকী। সর্বমোট প্রায় ৩০ ভাগ সম্পন্ন।
৬) মনুমেন্ট: পাইলিং, গ্রেটবীম ও বেস তৈরী সম্পন্ন। উপরের ঢালাই ও ফিনিশিং কাজ বাকী। সার্বিক অগ্রগতি ৪০%
৭) ওয়াটার বডি/লেক: ঘাটলা নির্মান সমাপ্ত। ব্লক বসানো, নৌকা স্থাপন ও অন্যান্য কাজ বাকী। অগ্রগতি ৬০%
৮) টয়লেট: ঢালাই শেষ। অগ্রগতি প্রায় ৫০%
৯) বাগানের প্লানটেশন ও ইলেক্ট্রিক কাজ বাকী রয়েছে।
তৃতীয় ধাপ: রাইডসমূহ স্থাপন ও আভ্যন্তরীণ ব্রিজ।
টেন্ডার কার্যক্রম চলমান।
পার্কটি নির্মিত হলে শুধু শিশুরাই না কিশোর-কিশোরীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও তা পরিচিতি পাবে।শিশু পার্কটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া শিশু পার্কে বেশ কিছু কর্মপ্রত্যাশী মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পথ সুগম হবে বলেও ধারণা করা যাচ্ছে। মোহনগঞ্জ শহরের প্রবেশমুখেই নির্মানাধীন এই শিশু পার্কটি অত্র উপজেলার পর্যটন শিল্পেও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে বলে আশা করা যায়।