মোহনগঞ্জ হাওরে যুবক হত্যার ঘটনায় আরও দুই জন গ্রেপ্তার: পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
কামরুল ইসলাম রতনঃ
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের হাওরে সাইফুল ইসলাম (৪২) নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় পলাতক আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সুনামগঞ্জের দিরাই এলাকার সবুজ মিয়ার ছেলে মো. মাসুক মিয়া (২৯) ও ঢাকার ধামরাই এলাকার শহীদুল ইসলামের ছেলে আল-ইমরান ফয়সাল (৪৪)।
মাসুক রাজধানীর মিরপুর ১৪ এলাকায় বসবাস করতো। দিনে রাজমিস্ত্রীর করতো, আর সন্ধ্যায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রির আড়ালে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো। হত্যাকান্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে গ্রেপ্তার এড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপন করে। পরে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এদিকে ফয়সাল রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো। প্রতারণা করতে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেন তিনি। হত্যাকান্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপন করে। রোববার রাতে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সোমবার সকালে ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ এর উপ-পরিচালক অপারেশনস্ অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া ঘটনার পরদিন ১৫ মার্চ এর আগে অন্তর আহমেদ শান্ত (২১) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্তর নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার হারারকান্দি (সুলতানপুর) গ্রামের ছালেক মিয়ার ছেলে। এ হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আর হত্যার শিকার সাইফুল ইসলাম ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কাশীপুর-বিশ্বাসপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে। তিনি ঢাকার মিরপুরে থেকে ভাড়ায় মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং করতেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে উপজেলার ডিঙাপোতা হাওর থেকে অজ্ঞাত হিসেবে সাইফুল ইসলামের (৪০) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্বৃত্তরা গলা কেটে হত্যার পর পোশাক খুলে আগুন জ্বালিয়ে তার মুখ পুড়িয়ে দেয়। সেইসাথে সাইফুলের মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা আঙুলের ছাপে তার পরিচয় শনাক্ত করে।
পরে এ ঘটনায় পরদিন ভোরে খালিয়াজুরী থেকে অন্তরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে সাইফুলের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে।
তবে মূল আসামিরা পালিয়ে যায়। ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে পলাতক আসামিদের ধরতে র্যাব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের অনুসরণ করে। এক পযায়ে তাদের অবস্থান সনাক্ত করে রোববার রাতে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সরাইল থেকে মাসুককে ও রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় হত্যার শিকার সাইফুলের ভাই মো. সিফাত উল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মোহনগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার মাসুক ও ফয়সাল আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রের সদস্য। গত ১০-১৫ দিন আগে মাসুক তার ভাগ্নের জন্য একটি মোটরসাইকেল ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য ফয়সালকে ২৫ হাজার টাকা দেয়। মোটরসাইকেল দিতে না পারায় মাসুক তাকে চাপ দিতে থাকে। ফয়সাল মোটরসাইকেল ছিনতাই করে মাসুকের ভাগ্নেকে দেয়ার পরিকল্পনা করে। এরমধ্যে কয়েকবার মোটরসাইকেল ছিনতাই করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শেষে সাইফুলের মোটরসাইকেল ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সংবাদ সংগ্রহ ও ভিডিও চিত্র ধারণের জন্য নেত্রকোনায় যাওয়ার জন্য সাইফুলকে তিন হাজার টাকায় ভাড়া করে মাসুক। গত বুধবার বিকেল ৩টায় মিরপুর ১৪ থেকে সাইফুলের সাথে মোটরসাইকলে করে নেত্রকোণার উদ্দেশ্যে রওনা করে মাসুক। পথে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ফয়সাল তাদের মোটরসাইকেলে উঠে। তারা ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছালে মোটরসাইকেলে তিনজন যাত্রী বহনের কারণে ট্রাফিক পুলিশ তাদের মোটরসাইকেল আটকায়। তখন ফয়সাল নিজেকে দৈনিক শেষ খবর পত্রিকার ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় দিলে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। সন্ধ্যায় নেত্রকোণা শহরে পৌছে সংবাদের তথ্য সংগ্রহের অজুহাতে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। পরে রাত ৩টার দিকে মোহনগঞ্জের ডিঙাপোতা হাওরের দেওরাজান বালুচরে নিয়ে গিয়ে ফয়সাল পাথর দিয়ে সাইফুলের মাথায় জোরে আঘাত করে। এতে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায় সাইফূল।
এ সময় ছুরি দিয়ে সাইফুলের গলাকেট মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরিচয় গোপন করতে সাইফুলের পরিহিত শার্ট-প্যান্ট খুলে মোটরসাইকেলের পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে মুখমন্ডল পুড়িয়ে দেয়। পরে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও সাইফুলের মোবাইল ফোন পানিতে ফেলে দেয়। মোটরসাইকেলটি নিয়ে খালিয়াজুরীতে মাসুকের ভাগ্নে অন্তরের কাছে রেখে আত্মগোপনে চলে যায় তারা।
ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ এর উপ-পরিচালক অপারেশনস্ অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মোহনগঞ্জ থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন সন্ধ্যার পর জানান, আসামিদের আনার জন্য দুপুরে থানা থেকে একটি টিম রওনা দিয়েছে। আসামিদের নিয়ে আসার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।