ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি ও ৭১’- র মুক্তিযুদ্ধ : বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী

১৯৫০ ও ‘৬০-এর দশকে তৎকালীন পূর্ববাংলার রাজনীতি ছিল প্রধানত আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের দাবীকে কেন্দ্র করে, যার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছিল শেখ মুজিবের ছয় দফা দাবীকে কেন্দ্র করে

প্রকাশিত: ২:৪০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৯, ২০২৩

নেজা ডেস্ক:
মহান ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা ছাত্র গণআন্দোলন তৎকালীন পাকিস্তানি উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ববাংলার মানুষকে স্বদেশীকতা ও স্বজাত্যবোধ জাগ্রত করে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সূচনা হয়। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের ষাটের দশক এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৫৮ সালে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলা (পূর্বপাকিস্তান) ছাত্র সমাজ প্রাথমিক পর্যায়ে আইয়ুব খানের মার্শাল-ল’ বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়।

১৯৬২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবস হইতে ছাত্র সমাজ আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত থাকলেও ১৯৬২ সালে ৩০ জানুয়ারি করাচিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন যৌথভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সমাজ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবীতে ১ লা ফেব্রুয়ারীর ছাত্র ধর্মঘটের মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলন শুরু করে। সামরিক শাসনের পরে পূর্ববাংলায় ইহাই ছিল প্রথম মার্শাল-ল’ বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন। তিন বৎসর সামরিক শাসন ও জুলুম নির্যাতনের ফলে আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দেখতে দেখতে সারা পূর্ব বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। পূর্ববাংলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সমাজের মাধ্যমে গড়ে উঠা এই আন্দোলন তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনকে আন্দোলিত করে।

পরবর্তীতে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যদিয়েই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। দীর্ঘদিনের নিরবতা ভেঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের মার্শাল-ল’ জারী হওয়ার পর থেকে পূর্বপাকিস্তানের ছাত্র রাজনীতিসহ জাতীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ হয়ে যায়, ফলে রাজনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসে। সেইসাথে সকল রাজনীতিবিদদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং জনমত গড়ে তোলা সেসময় এক দুঃসাহসিক কাজ ছিল। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের ছাত্র সমাজ সেই দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করে সফল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সফলকাম হয়েছিলো।

দীর্ঘচার বছর পর ৬২ তে এসে পূর্বপাকিস্তান ছাত্র সমাজ আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ জানিয়ে ছিল এবং দুর্বার ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সামরিক শাসনের ভয়ভীতি মোহ কেটে ছাত্র সংগঠনগুলো সংঘটিত হয়ে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলনের সূত্রপাত করে। ১৯৬০ সালে মার্শাল-ল’ বিরোধী আন্দোলনে তৎকালীন নেত্রকোণার ছাত্র সংস্থার ভূমিকা উল্লেখ করার মত। এই ছাত্র সংস্থার ব্যানারেই ‘ছাত্র ঐক্য জিন্দাবাদ’ শ্লোগানকে সামনে রেখে ও গোপণীয়তা বজায় রেখে মার্শাল-ল’ বিরোধী বিভিন্ন ভাষায় হাতের লেখা পোস্টার রাতের অন্ধকারে শহরে সাঁটিয়ে দিয়ে জনমনে যে আলোড়ন সৃষ্টি করে এক ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দিয়েছিল নেত্রকোণার এই ছাত্র সংস্থা নামে সংগঠনটি।

নেত্রকোণা ছাত্র আন্দোলনকে সামনে রেখে এই সংগঠনটি প্রাথমিক পর্যায়ে গোপনে, পরবর্তীতে প্রকাশ্যে ছাত্রদেরকে সংগঠিত করে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে শুরু করে। সেই সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের যেমন- সত্যকিরণ আদিত্য, আব্দুল খালেক, ওয়াজেদ আলীসহ প্রমুখ এই ধরনের প্রক্রিয়ার নেপথ্যে কাজ করছিলেন। কিংবদন্তী ছাত্রনেতা জনাব মেহের আলী সর্বজনাব জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো: শামছুজ্জোহা, গাজী মোশারফ হোসেন, টি.এ রহমত উল্লাহ, নুরুল ইসলাম, লুৎফর রহমান খান, আব্দুস সাত্তার প্রমুখ নেতাদের নিয়ে সংগঠনটি গড়ে তুলেন । এরপর ১৯৬২ সালে নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে   জনাব মেহের আলী ও জনাব শামসুজ্জোহাকে প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী করে কমিটি করে দেয়া হয়। ঐ কমিটির অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্যবৃন্দ যারা ছিলেন তারা হলেনঃসর্বজনাব জামাল উদ্দিন আহম্মেদ , বিপ্লব চক্রবর্তী, মতিয়র রহমান খান, শহিদ উদ্দিন আহমেদ, আ: মান্নান, আব্দুর রহমান, আলাউদ্দিন খান, আশরাফ আলী খান খসরু, হায়দার জাহান চৌধুরী (লেখক), ধীমান রঞ্জন বিশ্বাস (ভারত প্রবাসী)।

শুরু হয় নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন জেলা ছাত্রলীগের অভিযাত্রা।   আইয়ুব খানের মার্শাল-ল’ বিরোধী গোপণ আন্দোলনের সূত্র ধরেই ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৬২’র হামিদুর রহমান শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট বাতিলের দাবীতে দেশব্যাপী ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে শিক্ষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এরই পথ ধরে ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’র সর্বদলীয় ছাত্রসমাজের ১১ দফা আন্দোলন যাহা গণ আন্দোলনের রূপ নিয়ে পকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুবখানের পতন ঘটিয়ে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শেখ মুজিবসহ সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্ত করে। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ও সেইসাথে আরেক সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের আগমন ঘটে। সেই সামরিক শাসক ছাত্র গণআন্দোলনের মুখে ৭০’র জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়। ষাট দশকের ধারাবাহিক ছাত্র আন্দোলনের ফলশ্রুতিতেই ৭০’র জাতীয় নির্বাচন এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ এর প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে পূর্ব পকিস্তানের ছাত্র সমাজের ভূমিকাসহ ঐতিহাসিক অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ষাটের দশকে নেত্রকোণার ছাত্ররাজনীতি ছিল ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের এক নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের ইতিহাস। এই ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে আসে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ। উক্ত দু’টি ছাত্র সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও সাংগঠনিক বিকাশে পারস্পরিক প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের রাজনীতির গতি সঞ্চার করেছিল।

জাতীয় রাজনৈতিক আন্দোলন এককভাবে কোন ছাত্র সংগঠন করেনি। সম্মেলিতভাবে ছাত্র সংগঠনগুলো আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্ধারিত ও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচীর আলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনকে গতিশীল করেছে। তাই জনমনে ছাত্র সমাজের প্রতি একটি স্বতন্ত্র মর্যাদা ও সহানুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল। প্রকৃত অর্থে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের এই ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়া ছিল তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের হাতিয়ার। জাতীয়তাবাদের ধারক-বাহক ছাত্রলীগ এবং শ্রেণি সংগ্রামের পতাকাবাহী ছাত্র ইউনিয়নের উভয় গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনের মহা মিলন সত্যিই একটি আদর্শিক চেতনার অকল্পনীয় দৃষ্টান্ত। এই আদর্শিক চেতনায় পাকিস্তানের বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ববাংলার জনগণকে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

১৯৫০ ও ‘৬০-এর দশকে তৎকালীন পূর্ববাংলার রাজনীতি ছিল প্রধানত আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের দাবীকে কেন্দ্র করে, যার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছিল শেখ মুজিবের ছয় দফা দাবীকে কেন্দ্র করে। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবের ছয় দফা দাবীগুলোকে পূর্ববাংলার মানুষ তাদের মুক্তি সনদ ও বাঁচার দাবী হিসেবে গ্রহণ করে। ৭০’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিব ও আওয়ামীলীগের প্রতীক নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে ছয় দফা দাবী আদায়ের জন্য পূর্ববাংলার জনগণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান। বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে পূর্ববাংলার জনগণ সেদিন নৌকায় ভোট দিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্টতা এনে দিয়েছিলেন। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৯টি আসন নিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। পার্লামেন্টারী রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা। কিন্তু পাকিস্তানীরা বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নিকট পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এবং সরকার গঠন করতে রাজি ছিলনা এমনকি মেনে নিতে পারছিল না। তাই তালবাহানা শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে ৭ই মাচর্ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক ভাষণে বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের আহবান জানিয়ে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।

ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর অনুসারী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীকে ‘ছয় দফা মানতে হবে/ নইলে বাংলা স্বাধীন হবে’। এ ধরনের শ্লোগানের মাধ্যমে আল্টিমেটাম দিতে শুরু করে। সেইসাথে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। ছাত্রলীগ মূলত ১লা মার্চথেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে নেয়। ঐদিন পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণায় বাংলার মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে আগ্নেয়গিরির মতই জ্বলে এই স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে। এইদিকে বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার ঘোষণার প্রতিবাদে সারা বাংলায় অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সারা বাংলায় শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন, সেইসাথে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্র সমাজ স্বাধীনতাকামী জনগণকে সাথে নিয়ে। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতিসহ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে নেয়। ১লা মার্চথেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্র সমাজ ও স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতা এই আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করে তুলে। কেবল সেনানিবাসগুলো ব্যতীত সর্বত্রই উড়ছিল স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকা।

৭১’র মার্চমাসেই সারা দেশেই ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিকসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও স্বাধীনতাকামী জনগণ যার যার অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধে শরিক হতে প্রস্তুতি নিতে থাকে। ২রা মার্চ ডাকসুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ৩রা মার্চস্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম কর্তৃক পল্টনে বিশাল ছাত্র-জন সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ ও দেশব্যাপী এই ইশতেহার বিতরণের কর্মসূচী গ্রহণসহ সরকারি- বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামে একাত্মতা প্রকাশ করার আহবান জানানো হয়।

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তির মিছিলে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠনসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এই মুক্তির মিছিলে একাত্মতা প্রকাশ করে। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে শহর-বন্দর সর্বত্রই মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিসহ ব্যাপক মহড়া দিতে শুরু করেছে। স্বাধীনতার প্রশ্নে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ১লা মার্চথেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে স্বাধীনতার আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। ২৫ শে মার্চকালো রাতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর মাধ্যমে ঢাকায় নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্মম গণহত্যা শুরু করে। সেইসাথে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা, ইপিআর হেড কোয়ার্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রাবাসসমূহের উপর অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করে আক্রমণ শুরু করে। এমনকি ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানরত বাঙালি সৈনিকদের উপরও হামলা শুরু করে এবং ঐ রাতেই পাক হানাদার বাহিনী ৩২নং ধানমন্ডি বাড়ী থেকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। শুরু হয় ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ। এরই ধারাবাহিকতায় নয় মাসে বাংলাদেশের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার সোনালী সূর্যটা ছিনিয়ে আনে বাংলার স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী ছাত্র-জনগণ। অগণিত মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা।

এই লেখকের লেখা আরও পড়ুন……
শহীদ মেহের আলী একটি নাম, একটি ইতিহাস : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধু: বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী

বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী :
নেত্রকোনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি, সাবসেক্টর কমান্ডার,মুজিব বাহিনী বা বাংলাদেশ মুক্তিফৌজ বা বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স সংক্ষেপে (বি এল এফ), নেত্রকোনা প্রেস ক্লাবের সহ সভাপতি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১, নেত্রকোণা জেলা-এর সহ সভাপতি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট