সচিবের তদবিরে বদলে গেল মোহনগঞ্জের সেতুর স্থান, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

প্রকাশিত: ৪:২৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫

মোঃ কামরুল ইসলাম রতন:
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে তেতুলিয়া ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে বেতাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর গুরুত্ব অনুধাবন করে সেতু তৈরির প্রস্তাবনাও পাঠায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।

সেতুটি যখন অনুমোদনের অপেক্ষায় তখন নির্ধারিত স্থান পরিবর্তন করে নিয়ম বহির্ভুতভাবে অন্য স্হানে সেতু নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ স্হানান্তরের কাজে স্থানীয় বাসিন্দা এক যুগ্ন সচিবের হাত রয়েছে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন। এ নিয়ে মোহনপুর সহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সেতু নির্ধারিত স্থানে করার জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছে। এ বিষয়ে যুগ্ম সচিব মাহবুব হাসান মুঠোফোনে বলেন, একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া ব্রীজ আমার বদল করার ক্ষমতা আছে কি ? যারা আমাকে জড়িয়ে এসব কথা বলছে তা সঠিক নয়।

এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার মোহনপুর গ্রামে বেতাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। সেতু না থাকায় মোহনপুর, পূর্ব ফাগুয়া, হানবীর, ভাটাপাড়া,আব্দুল্লাহপুর, নাপিতপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা বাঁশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যায়। বর্ষাকালে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না। ঝুঁকি নিয়ে শিশু ও বয়স্করা নদী পার হতে হয়। এছাড়া বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাওয়া ও হাওরের ধান পরিবহনে বিরাট সমস্যা হয়। এসব কারনে এ সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সেতুটি তৈরির জন্য ২০১৯ সালে এলজিইডিতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সে লক্ষে সেতুর আইডি তৈরি করে এলজিইডি। পরে সেটি নিয়মানুযায়ী প্রকল্প তৈরির করে গুরুত্ব বিবেচনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালে আবারও সেতুটির চাহিদা চেয়ে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরে আবেদন করে উপজেলা এলজিইডি। কিন্তু সেতুর বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। কিন্তু সম্প্রতি একই এলাকায় দেড় কিলোমিটার দূরে নতুন একটি সেতুর অনুমোদন হয়। যার টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নতুন সেতুটি অনুমোদনে স্থানীয় বাসিন্দা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্ন সচিব মাহবুব হাসান শাহীন এর তদবির রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। তবে পূর্ব নির্ধারিত স্থান বাদ দিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে শুনে মোহনপুর সহ কয়েক গ্রামের মানুষ ক্ষোদ্ধ হয়েছেন। এ নিয়ে তারা এলজিইডি অফিসে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

মোহনপুর গ্রামের শেখ মোহাম্মদ সুলতান বলেন, নদী ওপারে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। শুকনো মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়। আর বর্ষায় নৌকায় দিয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে যায়। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। এছাড়া বয়স্ক-রোগীদের নিয়ে চিকিৎকের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় না। হাওরের ধান পরিবহন না করতে পারায় কম দামে বিক্রি করতে হয়। এলাকাবাসী জানায়,একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার তদবিরে নিয়ম বহির্ভুতভাবে সেতুটি নির্ধারিতস্হানে না হয়ে অন্য এ হবে। এতে আমরা মর্মাহত হয়েছি।

মোহনপুর গ্রামের কাইয়ুম বলেন, দীর্ঘদিনের প্রস্তাবিত সেতু বাদ দিয়ে ক্ষমতাবান কারো তদবিরে ভুল জায়গায় সেতু করলে মানুষের কোন উপকারে আসবে না। যেখানে সেতুটি করতে যাচ্ছে ওই জায়গায় তেমন কোন মানুষজন নেই গুরুত্বপূর্ণ স্কুল নেই। পূর্বনির্ধারিত স্থানে সেতুটি করা হোক।
একই কথা বলেন পাশের কেন্দুয়া গ্রামের সুকুমার করসহ অনেকে। তাদের দাবি- সেতুটি মোহনপুর গ্রামের ওপর দিয়েই করা হোক। এতে ৭-৮ গ্রামের কৃষকসহ হাজার হাজার মানুষের উপকার হবে। দীর্ঘ বছর ওইসব গ্রামের মানুষ একটি সেতুর স্বপ্ন লালন করে আসছে।

তেতুলিয়া ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুজন কর বলেন, নদীর পশ্চিম পাশের অনেকগুলো গ্রামের কৃষক হাওরে ফসল উৎপাদন করেন। সেতুর কারণে সেসব ফসল সঠিক সময়ে ঘরে তুললে পারেন না। কম দামে জমিতে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করব দ্রুত সেতুটি বাস্তবায়নের।

এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী সোয়েব ইমরান বলেন, মোহনপুর গ্রামের সেতুটি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি হলে এলাকার বেশ কয়েক গ্রামের মানুষের উপকার হবে। বাচ্চাদের স্কুলে যাতায়াত-ধান পরিবহন সহ নানা সুবিধা হবে। আমরা এর আগে সেতুটির প্রস্তাবনা পাঠিয়েঠিলাম। কিন্তু বরাদ্দ পাইনি। অন্য যে সেতুটি হচ্ছে সেটি এর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে হচ্ছে, এটিও গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি ওই সেতুটিও হবে। এ বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সাথে কথা বলব।
ছবি-মোহনপুর গ্রামে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ।