
জাকির আহমেদ :
বাতাসে দুলছে হলুদ ফুল। ফুলে ফুলে মধু আহরণে ভিড়ছে মৌমাছি। শীতের হিমেল হাওয়া নাড়া দিয়ে যাচ্ছে হলুদ সেই সৌন্দর্যকে। নেত্রকোণার মদন উপজেলার ফসলের মাঠজুড়ে এখন হলুদের বাগিচা।
বিগত বছরের চেয়ে এ বছর বেড়েছে সরিষার আবাদ। অন্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে লাভ বেশী পাওয়ায় দিন দিন আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। ভাল ফলনে খুশি উপজেলার সরিষা চাষীরা। তবে লোকজন ছবি তুলতে এসে সরিষা ক্ষেত নষ্ট করে ফেলায় দিনভর চাষীদের পাহারায় থাকতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গেলো মৌসুমে মদন উপজেলায় মাত্র হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছিল। এ বছর ৫১০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এতে উৎপাদন হবে ১ হাজান ৩০০ মেট্রিকটন সরিষা। যার বাজার মূল্য হবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৯০০ সরিষা চাষীকে প্রণোদনার আওতায় আনে উপজেলা কৃষি অফিস। প্রত্যেক চাষীকে ১ কেজি করে সরিষা বীজ ও ২০ কেজি করে সার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সরিষা চাষের পদ্ধতি বিষয়ে চাষীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এতে একমাত্র ধান নির্ভরশীল উপজেলার চাষীরা বিনা খরচে লাভের মুখ দেখবে বলে আশাবাদী।
চানগাও গ্রামের কৃষক স্বপন মিয়া, শাহপুর গ্রামের ইয়াসিন আরাফাত, মড়লপাড়া গ্রামের মিনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যে জমিতে শুধু পাট চাষ হতো সেই জমিতে এখন ৩ টি ফসল উৎপাদন করতে পারছি। আমন ধান কাটার পরপরই সরিষার চাষ করেছি। কৃষি অফিস বিনা মূল্যে বীজ সার দেওয়ায় আমরা উৎসাহিত হয়েছি। ধানের তুলনায় সরিষা চাষে এ বছর অধিক লাভবান হবো।’
তারা আরো বলেন, ‘এক কাটা (১০ শতাংশ) জমিতে ধান হয় ৭/৮ মন। বাজার মূল্যে যা বিক্রি করে পাওয়া যায় ৫ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিলে তেমন লাভ থাকে না। কিন্তু এক কাটা (১০ শতাংশ) জমিতে সরিষা পাওয়া যায় ১ থেকে দেড় মন । যার বাজার মূল্য ৬/৭ হাজার টাকা। ধানের তুলনায় উৎপাদন খরচ কম থাকায় অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন,‘হাওর বেষ্টিত মদন উপজেলা ধান নির্ভর হলেও এ বছর এর ব্যতিক্রম। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল সরিষার উৎপাদন বাড়ানোর। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাস্টার আকারে সরিষার চাষ করতে কৃষকদের সহায়তা করেছি। উপজেলার ১ হাজার ৯০০ কৃষদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ দিয়েছি। ধানের তুলনায় সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষরা এ বছর লাভবান হবে।