সাত শহীদের মাজার
চারপাশে অগনিত মেহগনি গাছের সারির নির্জন সেই জায়গায় সমাহিত আছেন ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। এই জায়গা সাত শহীদের মাজার নামে পরিচিত
নেজা ডেস্কঃ
নেত্রকোণা জেলার কমলাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ফুলবাড়ি শান্ত এক গ্রাম। গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে গারো পাহাড়ের ভিতর দিয়ে বয়ে আসা গনেশ্বরী নদী। আমাদের সীমান্তের ভিতরেই রয়েছে বেশ কিছু পাহাড় ও টিলা, আর সীমান্তের বাইরে যতদূর চোখ যায় দেখা যায় মেঘালয়ের পাহাড় রাজ্য। চারপাশে অগনিত মেহগনি গাছের সারির নির্জন সেই জায়গায় সমাহিত আছেন ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। এই জায়গা সাত শহীদের মাজার নামে পরিচিত।
ইতিহাসঃ
২৬শে জুলাই, নেত্রকোণা জেলার বিরিশিরি থেকে কলমাকান্দায় পাকসেনাদের ক্যাম্পে রসদ যাবে এ সংবাদে পরিকল্পনা হয় দূর্গাপুর-কলমাকান্দা নদীপথের নাজিরপুর বাজারের কাছেই পাকহানাদারদের আক্রমণ করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নাজিরপুর বাজারের সবক’টি প্রবেশ পথে এ্যামবুস করেন মুক্তিযোদ্ধারা। যে সময় আসার কথা ছিলো তা অতিক্রান্ত হবার অনেক পর মুক্তিযোদ্ধারা একে একে তাদের এ্যাম্বুস তুলে নেয়ার সময় হঠাৎ হানাদার বাহিনীর মুখোমুখী হয়ে যায় তারা। গুলি, পাল্টা-গুলি উভয়পক্ষের তুমুল যুদ্ধ লেগে যায়। কিন্তু অতর্কিত হামলায় মুক্তিযোদ্ধারা অনেকাংশে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। পাকহানাদাররা ধীরে ধীরে মুক্তিযোদ্ধাদের এলাকায় ঢুকে পড়ে। তারপরেও মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়, যুদ্ধ চলতেই থাকে। বিকেল দিকে পাকবাহিনীর আক্রমণ আরো তীব্র আকার ধারণ করে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার আহত হলে যুদ্ধের গতি পালটে যায়। পাক হানাদাররা সশস্ত্র অবস্থায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে বন্দি করে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। সে যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন জামাল উদ্দিন, ডা. আব্দুল আজিজ, ফজলুল হক, ইয়ার মামুদ, ভবতোষ চন্দ্র দাস, নূরুজ্জামান, দ্বীজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস। ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় লেঙ্গুরার ফুলবাড়ি নামক স্থানে ভারত বাংলাদেশের সীমান্তে তাদের সমাহিত ও দাহ করা হয়।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে নেত্রকোনা জেলা শহরে এসে সেখান থেকে মোটরসাইকেল রিজার্ভ নিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে কমলাকান্দা উপজেলা হয়ে লেংগুরা বাজার পার হয়ে তারপর সাত শহীদের মাজারে যেতে পারবেন। নেত্রকোণা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ৪২ কিলোমিটার। অনেকেই নেত্রকোণার বিরিশিরি ভ্রমণে যান, সেই ক্ষেত্রে বিরিশিরি ঘুরে সেখান থেকেও লেঙ্গুরা যাওয়া যায়। বিরিশিরি থেকে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। অথবা ঢাকার মহাখালী থেকে কমলাকান্দা যাওয়ার সরাসরি নাইট কোচ বাস আছে। কলমাকান্দা থেকে মোটরসাইকেল রিজার্ভ করে লেংগুরা হয়ে মাজারে যাওয়া যায়।
আশেপাশে কী দেখবেনঃ
লেঙ্গুরা জায়গাটি বেশ সুন্দর। এখানে আছে আদিবাসী গারো হাজং সম্প্রদায়ের বসবাস। পুরো এলাকাটি ঘুরে দেখতে পারেন। গনেশ্বরীর নদীর সাথেই বেশ কিছু টিলা আছে, সেখানে ঘুরে দেখতে পারেন। টিলার উপর থেকে দূরে মেঘালয়ের পাহাড় সারি দেখতে বেশ ভাল লাগবে। এছাড়া এই লেঙ্গুরা বাজারের কাছে গনেশ্বরীর উপর একটি কাঠের ব্রিজ আছে, যা দেখতে বেশ সুন্দর।
কোথায় খাবেনঃ
খেতে চাইলে লেঙ্গুরা বাজারে মোটামুটি মানের দেশীয় খাবারের হোটেল পাবেন। কমলাকান্দা বাজারেও বেশ কিছু দেশীয় খাবারের হোটেল আছে।
থাকবেন কোথায়ঃ
এখানে ভাল থাকার কোন জায়গা নেই। তাই দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা ভালো। আর থাকতে চাইলে নেত্রকোণা সদরে চলে আসতে হবে। নেত্রকোণায় সদরে মোটামুটি মানের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে।