সুইডেনে ওয়ার্ল্ড পিস অ্যাওয়ার্ড পেলেন নেত্রকোণার কৃতিসন্তান শহীদুল্লাহ
নেজা ডেস্ক রিপোর্টঃ
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও একবার সম্মানিত হলেন ইসলামিক স্কলার ও ইন্টারফেইথ লিডার মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। সুইডেনের স্টকহোমে ওয়ার্ল্ড পিস অ্যাওয়ার্ড কমিটি কর্তৃক আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল পিস কনফারেন্সে সম্মানসূচক ওয়ার্ল্ড পিস অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছেন তিনি।
গত ২৭ আগস্ট মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় সুইডেনের স্টকহোমের পার্লামেন্ট এলাকা সংলগ্ন কোয়ালিটি হোটেল গ্লোবের ঐতিহাসিক কনসার্ট হলে, যেখানে নোবেল বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
৫ দিনব্যাপী এই পিস কনফারেন্স শুরু হয়েছে গত ২৬ আগস্ট। এতে বিশ্বশান্তি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা, মতবিনিময় এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শুধু পুরস্কার গ্রহণ নয়, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞ হিসেবে ‘ইউনিভার্সাল হিউম্যান ভ্যালুজ থ্রো ইন্টারফেইথ ডায়ালগ’ বিষয়ের ওপর বক্তব্য প্রদান করেন ইউএনএ-ইউএসএ-এর কো চেয়ার মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
ওয়ার্ল্ড পিস অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করার পর এক বার্তায় মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ওয়ার্ল্ড পিস অ্যাওয়ার্ড কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করায়। আন্তর্জাতিক এই শান্তি পুরস্কার আমার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে যেন বিশ্বশান্তি রক্ষায় আরও বেশি কাজ করতে পারি সেজন্য সবার সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছাড়াও আরও যারা ওয়ার্ল্ড পিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, তারা হলেন-আফগানিস্তানের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কালচারাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক নার্গিস হাসানজাই, যুক্তরাজ্যের হেল্পিং লাইভস অর্গানাইজেশনের সভাপতি জাভিদ আকতার।
এই তালিকায় আরও আছেন ব্রুনাইয়ের রয়েল হাউজ অব সুলতান আবদুল মোমিন-৩ এর প্রেসিডেন্ট সুলতান আবদুল মোমিন-৩, ইন্দোনেশিয়ার সানি ওয়াইজায়া নাতাকুসুমা, মায়ানমারের ভ্যান কুন্ডেলা, ব্রাজিলের সিলিয়া ক্রিস্টিনা সোয়ারেস রুবিনি, ফ্রান্সের ড. জাকারিয়া হামিদ, সুইজারল্যান্ডের সেরেইডারিস লিসান্দ্রে এবং মালয়েশিয়ার ড. মেরিয়েট্টা আরগুইডো রিফরমাডো।
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, ধর্মীয় আলোচক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও অ্যাক্টিভিস্ট। বর্তমানে তিনি দেশ পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে আলো ছড়াচ্ছেন।মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ গ্লোবাল দাওয়াহ টেলিভিশন আইটিভি ইউএসএ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। এ ছাড়া তার পরিচালনায় চলছে আরও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে অন্যতম হলো- চ্যানেল ৭৮৬, মাদানী হজ গ্রুপ ইউএসএ এবং সাদাকাহ ফাউন্ডেশন অব ইউএসএ।
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র জন্ম নেত্রকোনায়। বাবা ভাষাসৈনিক ও জেলা রেজিস্ট্রার ওসমান আলী এবং মা জোবেদা খাতুন। শিক্ষার প্রতি বাবা ওসমান আলীর প্রচন্ড অনুরাগই যেন পেয়েছেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তাই শিক্ষাজীবনের সকল স্তরে তার ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয়। শহীদুল্লাহর বাল্যশিক্ষা শুরু হয় নেত্রকোনার আঞ্জুমান সরকারি স্কুলে। এরপর ভর্তি হন নেত্রকোনার মিফতাহুল উলুম মাদরাসায়। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন ছারছীনা আলিয়া মাদরাসা থেকে। বোর্ড পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১০তম স্থান অধিকার করেন তিনি। এরপর আলিম পরীক্ষাতেও সারা দেশে ১৮তম স্থান অর্জন করেন তিনি। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৩ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি।
খুব অল্প বয়সেই সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই তিনি ছিলেন সাপ্তাহিক খেলাফতের স্থানীয় সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক আমার দেশের সহ-সম্পাদক এবং পাঠকমেলার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১-১২ সাল পর্যন্ত দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ইসলামিক ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের আজীবন সদস্য। এ ছাড়া ডেভেলপমেন্ট ফোরাম, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, বাংলাদেশ ইউনেস্কো ক্লাব, জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার অরগানাইজেশন, সাব-এডিটরস কাউন্সিল, ঢাকা জার্নালিস্ট ইউনিয়ন, হিস্ট্রি একাডেমি, বুক রিভিউ কমিটি অব বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৯৩ সালে ছারছীনা মাদরাসার স্মারকগ্রন্থে একটি লেখা ছাপা হওয়ার মধ্য দিয়ে লেখালেখির যে যাত্রা শুরু হয়েছিল মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর, সেটা আর থামেনি। সাংবাদিকতায় অবদান রাখার জন্য ২০০১ সালে বিশেষ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ দিয়ে দিয়ে শুরু, তারপর দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন।