স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী  (পর্ব-২)    

সেদিন যদি মেহের ভাই না থাকতেন সকল বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরকে ধরে ধরে জবাই করা হতো।” শহীদ মেহের আলী ছিলেন রাজনৈতিক জীবনে এক অসম সাহসী নেতা। তাঁর যেমন ছিলো দক্ষতা তেমনি ছিলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা

প্রকাশিত: ২:৫৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০২৩
প্রচ্ছদ: অসীম

নেজা ডেস্ক :
১৯৬২ সালে রেল  অবরোধ ও ভাংচুরের মামলায় মেহের আলী বেশ কিছুদিন জেল হাজতে ছিলেন। জেলখানায় বসে মেহের আলী পাকিস্থানি সামরিক নির্যাতন এর বিরুদ্ধে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কচি-কাঁচা মেলা নামে একটি শিশু-কিশোর সংগঠন গড়ে তোলার পরিকল্পণা করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৬৩ সনের জানুয়ারি মাসে মধুমাছি কচিকাঁচার মেলা গঠন করেন। তিনি ছিলেন মধুমাছি কচিকাঁচার মেলার প্রধান উদ্যেক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক । মেলার পরিচালক হিসেবে ছিলেন জনাব এডভোকেট একে ফজলুল কাদের, আর উপদেষ্টা মন্ডলীতে ছিলেন- সর্বজনাব এন আই খান,জনাব আব্দুল খালেক, জনাব খালেকদাদ চৌধুরী, ডা. জগদীশ দত্ত, এডভোকেট ফজলুর রহমান খান,মাওলানা ফজলুর রহমান খান,হাবিবুর রহমান খান  প্রমুখ।

জনাব মেহের আলী শামসুজ্জোহাকে আহ্ববায়ক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আয়েশা খানমকে আহ্ববায়িকা করে কমিটি গঠন করে দেন। এরই মধ্যে ডাকসু নির্বাচন চলে আসে। মেহের আলী   ডাকসু নির্বাচনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন পূর্বপাকিস্থান ছাত্রলীগের প্রার্থীদেরকে বিজয়ী করবার জন্যে। কিন্তু সে নির্বাচনে ৯০টি আসনের মধ্যে ৮০ টি আসনে র্পূর্বপাকিস্থান ছাত্র ইউনিয়ন জয় লাভ করে(হল ও কেন্দ্রীয় সংসদ মিলিয়ে)।

মেহের আলী  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন কেন্দ্রীয় কচিকাচার মেলার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং কবি সুফিয়া কামাল ও রোকনোজ্জামান  দাদা ভাইয়ের সাথে অত্যন্ত  সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন। ঢাকা বিশ্ববিদালয়  অর্নিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৯৬৪ সনে ১লা,২রে মে কবি সুফিয়া কমাল ও রোকনোজ্জামান দাদা ভাইসহ মেলার পরিচালকবৃন্দের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নেত্রকোণায় নিয়ে আসেন। উল্লেখ্য, তখন নেত্রকোণায় ঐ প্রথম দুদিনবাপী এতবড়  বিচিত্রানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে মেলার ভাইবোনদের একটি দল কুচ-কাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শন করে। দাদা ভাই খুশী হয়ে দলটির নাম দেন শেরে বাংলা বাহিনী। শেরে বাংলা বাহিনী এখনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে কুচ-কাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শন করে।

পরবর্তীতে  জনাব মতিয়ুর রহমান খানকে আহ্বায়ক ও চামেলী খুরশিদকে আহ্বায়িকা করে কমিটি গঠন করে দেয়া হয় ১৯৬৪ সালে।১৯৬৫ সালে দায়িত্বে আসেন জনাব হায়দার জাহান চৌধুরী ও খনা সেন রায় আহ্বায়ক ও আহ্বায়িকা হিসেবে । পরে আলাউদ্দীন খান ও রেজিয়া রহমান ছবি  আহ্বায়ক ও আহ্বায়িকা হিসেবে দায়িত্বে আসেন। এরপর যারা আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বে আসেন তারা হলেন-জনাব আনোয়ারুল হক ভূইয়া, জসিম উদ্দীন ভূইয়া,দিলুয়ারুল হক ভূইয়া,এ টি এম মন্জুরুল হক,বিপুল সাহা,সাকী,রবিন,ইমু। এই কচি-কাঁচার মেলার মাধ্যমে বিভিন্ন সাংস্কৃতিস্কৃ র্কমকান্ডরে আড়ালে রাজনৈতিক র্কমকান্ড চালানোর উদ্দ্যেশেই মেহের আলী  আইযুব বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগকে সুকৌশলে সম্পৃক্ত করেছিলেন।এরপর মেহের আলী   নেত্রকোনা শ্রমিকলীগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে এটিকে একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করেন। ১৯৬৪ সালে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রথম শহীদ মিনারের অন্যতম স্থপতিও ছিলেন তিনি। তিনি বিশ্বদ্যালয়ের পাশাপাশি নেত্রকোণার আন্দোলগুলোতেও নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।

বিশ্বদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে  তৎকালীন ডাকসু সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে ছিল।পাশাপাশি জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথেও উনার ভাল যোগাযোগ ছিল। স্বাভাবিকভাবেই তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্র আন্দোলন তথা জাতীয় আন্দোলনগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছেন ও গুরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন । আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা প্রসিডিয়াম মেম্বার এডভোকেট সৈয়দ আহমেদ ছিলেন মেহের আলীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অন্যকে সম্মান করলে নিজের সম্মান বাড়ে।মেহের আলীকে নিয়ে আরো গবেষনা করা প্রয়োজন। উনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের জাতীয় পর্যায়ের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে আনতে পরলে তা আমাদের নেত্রকোনার ইতিহাস ও ঐহিহ্যকে সম্মৃদ্ধ করবে। মনে রাখতে হবে যারা দেশের তথা জাতির জন্য কাজ করেছেন তারা কোন পরিবার বা গোষ্ঠীর সম্পদ নয় তারা পুরো বাংগালী জাতির অহংকার।

১৯৬৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালীর মুক্তিসনদ ৬ দফা প্রদান করলে, মেহের আলী ৬ দফা দাবী নিয়ে নেত্রকোণায় গ্রামে গঞ্জে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৬৯-এর গণঅভ্যুথানে তিনি অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নেতা কর্মীদের নিয়ে পুরো নেত্রকোণা চষে বেড়িয়েছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করবার জন্যে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের পর বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি নেত্রকোণায় গঠিত মহকুমা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে  মহেষখলা ইয়ুৎ ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য(ছাত্র ও যুবনেতাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত) হিসেবে দায়িত্ত পালন করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন মেহের আলী বঙ্গবন্ধুর সাথে একই মঞ্চে বহুবার বক্তব্য প্রদান করেছেন (জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ,জেলা শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে- ষাটের দশকে ছাত্রদের পর শ্রমিক ও কৃষক গোষ্ঠী সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। এই দুটি গোষ্ঠী নেত্রকোনায় স্বাধীকার আন্দোলন,সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে)। মেহের আলী ছিলেন ষাটের দশকের নেত্রকোনার রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র যিনি ৫৯,৬০, ৬২, ৬৪, ৬৬, ৬৯ থেকে ১৯৭১ এর প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সফল ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি যাঁদেরকে নিজ হাতে ছাত্রনেতা হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা হলেন– সর্বজনাব মো: শামছুজ্জোহা, মো: মতিয়র রহমান খান, সাফায়েত আহমেদ খান, গাজী মোশারফ হোসেন, জামাল উদ্দিন খান, আশরাফ আলী খান খসরু, গাজী দেলোয়ার হোসেন, গোলাম এরশাদুর রহমান, হায়দার জাহান চৌধুরী, আলাউদ্দিন খান, বাদল মজুমদার, দবির উদ্দিন খান প্রমুখ ছাত্রনেতা।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীরমুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী সম্পর্কে যে সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছেন তা নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
আমাদের রাজনীতির অগ্নিযুগ হলো ষাটের দশক। এ সময়ে রাজনীতির কেন্দ্রে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সমগ্র পূর্ব বাংলায় জেলা-মহকুমা-থানা পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। ষাট দশকের রাজনীতির এই অগ্নিলগ্নে নেত্রকোণার রাজনীতির আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন শহীদ মেহের আলী। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রবাংলা-র সাংবাদিক জনাব রুহুল চৌধুরী নেত্রকোণার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নেত্রকোনা চেম্বার অব কমার্সের সম্মানীত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ সাহেবের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘শহীদ মেহের আলী রাজনৈতিক অঙ্গনে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন’? উত্তরে ওয়াহেদ সাহেব বলেছিলেন,“মেহের ভাই সম্পর্কে বলার আগে আমি ষাট দশকের সময়টার কথা কিছু বলতে চাই।

এখনকার সময়ে রাজনীতি করা ও নেতা হওয়া খুব সহজ। কিন্তু আগে রাজনীতি করা মানে নিশ্চিত জেলে পচে মরা নতুবা মৃত্যু। কারণ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান তুললেই জেল-জুলুমহুলিয়া জারি হয়ে যেতো এবং কারফিউ দিয়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদেরকে ধরে নিয়ে হত্যা করতো…। আমরা সেই কঠিন দিনগুলিতে মেহের ভাইয়ের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি। একটা ঘটনা বললেই মেহের ভাইয়ের গুরুত্বটা বুঝা যাবে। সালটা সম্ভবত: ৬৬/৬৭ হবে। সঠিক তারিখটা মনে নেই। সেদিন ছিলো নেত্রকোণায় মুসলিমলীগের সম্মেলন। কেন্দ্রীয় নেতারা আসার কথা। সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিলো সরকার বিরোধী সকল রাজনৈতিক পার্টি ধ্বংস এবং কর্মীদেরকে হত্যা করা। আমরা মেহের ভাইয়ের নেতৃত্বে সেই মিটিং হতে দেইনি। সেদিন যদি মেহের ভাই না থাকতেন সকল বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরকে ধরে ধরে জবাই করা হতো।” শহীদ মেহের আলী ছিলেন রাজনৈতিক জীবনে এক অসম সাহসী নেতা। তাঁর যেমন ছিলো দক্ষতা তেমনি ছিলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। প্রশ্নকর্তা অপর এক প্রশ্নে বলেছিলেন, জনাব মেহের আলী নাকি নেত্রকোণা জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ? উত্তরে জনাব ওয়াহেদ সাহেব বলেছিলেন, “হ্যাঁ। ১৯৬২ সালে আমাদেরকে নিয়ে নেত্রকোণা জেলা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট। আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জনাব মো: শামছুজ্জোহা। সহজে মানুষের মন জয় করার মতো অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো মেহের আলী সাহেবের। ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সমগ্র পূর্ব বাংলার মধ্যে নেত্রকোণায় বিক্ষোভ হয়েছিলো সবচেয়ে বেশী। আর সেই বিক্ষোভটি হয়েছিলো মেহের আলী সাহেব, মো: শামছুজ্জোহা এবং মো: মতিয়র রহমান খানের নেতৃত্বে। সেই সংবাদটি তখন বেশ গুরুত্বের সাথে ভয়েস অব আমেরিকা থেকে প্রচার করা হয়েছিলো। এই বিক্ষোভের জন্য জনাব মেহের আলীসহ বেশ কিছু নেতা/ছাত্রনেতা ৯ দিন জেল হাজতে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, মেহের ভাইকে ভুলে যাচ্ছি কথাটা ঠিক নয়। স্বাধীনতার  পর আমরা তার নামে একটি রাস্তা ও স্মৃতি সংসদ করেছিলাম। কোন এক কারণে রাস্তাটি ধরে রাখতে পারিনি। এখন যত বিপদই আসুক না কেন আমরা মেহের ভাইকে তাঁর যোগ্য ̈স্থানে বসাবই। সাক্ষাতকার গ্রহণের সময় জনাব ওয়াহেদ সাহেবের পাশে ছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা বর্তমানে ন্যাপ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জনাব মোজাম্মেল হক। তিনি জনাব ওয়াহেদ সাহেবকে বলেন যে. আপনারা মেহের ভাইকে শুধু আওয়ামী লীগের মধ্যে সীমিত রাখবেন না। কারণ মেহের ভাই সেদিনগুলিতে সকলের নেতা ছিলেন। আমরা মেহের ভাইকে দলমত নির্বিশেষে সকলের র্অথাৎ নেত্রকোণাবাসীর নেতা হিসাবে ধরে রাখতে চাই। পরে উনার প্রস্তাব সমর্থন করেই সকল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ মিলে শহীদ মেহের আলী  ̄স্মৃতি পরিষদ গঠন করা হয়।

নেত্রকোনা ছাত্রলীগ গঠনের ইতিহাস সম্পর্কে(বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ত্বাধীন আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন-) বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মো: শামছুজ্জোহা একটি চমৎকার বিবরণ দিয়েছেন। জনাব জোহা ইতোপূর্বে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ করেছিলেন জনাব মেহের আলীর সাথে। তাঁরা দু’জন ট্রেনে চড়ে ঢাকা গেলেন এবং পরদিন বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ-এ বঙ্গবন্ধুর জীবনবীমার বিশাল অফিসে জীবনে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁদের কথা শুনে একটি চিরকুট লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুল হক হলে জনাব শেখ মনির নিকট পাঠিয়ে দেন। চিরকুটে লেখা ছিলো, ‘এরা নেত্রকোণা থেকে এসেছে, ছাত্রলীগ করতে চায়’। জনাব মনি তাদেরকে অতি গোপনীয়ভাবে ছাত্রলীগের উদ্দেশ্য-আদর্শ সংক্ষেপে বলে, কিছু হস্তলিখা প্যাম্পলিট তাদেরকে দিয়ে নেত্রকোণায় পাঠিয়ে দেন। সাথে সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছিলেন যে, যদি এগুলো রাস্তাঘাটে পুলিশের নজরে পড়ে তাহলে নির্ঘাত জেল !

এরপর ১৯৬২ সালে নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে   জনাব মেহের আলী ও আমাকে প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী করে কমিটি করে দেয়া হয়। ঐ কমিটির অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্যবৃন্দ যারা ছিলেন তারা হলেনঃ সর্বজনাব জামাল উদ্দিন আহম্মেদ, বিপ্লব চক্রবর্তী, মতিয়র রহমান খান, শহিদ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল ওয়াহেদ, আ: মান্নান, আব্দুর রহমান, আলাউদ্দিন খান, আশরাফ আলী খান খসরু, হায়দার জাহান চৌধুরী (লেখক), ধীমান রঞ্জন বিশ্বাস (ভারত প্রবাসী)। শুরু হয় নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন জেলা ছাত্রলীগের অভিযাত্রা। এই কমিটি বহাল থাকে ১৯৬৬ সালে আহ্ববায়ক কমিটি গঠন হওয়া পর্যন্ত। জনাব মেহের আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবার পর সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় জনাব জামাল উদ্দিন আহম্মেদকে। বস্তুত: নেত্রকোণায় ছাত্রলীগের সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রাণ পুরুষ ছিলেন শহীদ মেহের আলী। ক্রমে নেত্রকোণায় তাঁদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ একটি  শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছিলো। চলবে…….

লেখক: অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার।
প্রান্ধিক, ঐপন্যাসিক, গল্পকার ও কবি। সভাপতি: রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি, সম্পাদক: বিজয় ৭১ (ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা)

এই লেখকের লেখা আরও পড়ুন…..
মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সংগঠক: ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ- অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার
স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী  (পর্ব-১)

আরও পড়ুন……
ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি ও ৭১’- র মুক্তিযুদ্ধ : বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
শহীদ মেহের আলী একটি নাম, একটি ইতিহাস : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধু: বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
নেত্রকোণার রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ মরহুম জননেতা আব্দুল খালেক এমপি