নেজা ডেস্ক : গত পর্বের পর থেকে...
নেত্রকোণায় মেহের আলী সাহেবের ঐতিহাসিক স্মরণসভা :
১৯৯৪ সালের ২৪ ফেব্রয়ারি ‘শহীদ মেহের আলী স্মৃতি পরিষদ’-এর উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শামছুজ্জোহার সভাপতিত্বে “ষাটের দশকে নেত্রকোণার রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মেহের আলীর ভূমিকা’- শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী আওয়ামীলীগ নেতা জনাব আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রফিকুল ইসলাম, বীরবিক্রম, পিএসসি।
প্রধান বক্তা ছিলেন- জনাব সানাউল্লাহ নূরী, অতিথির মধ্যে ছিলেন- সর্বজনাব এড্ ফজলুর রহমান খান, এড্ কে এম ফজলুল কাদের, পৌর চেয়ারম্যান মো: মতিয়র রহমান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমান, শহীদ মেহের আলীর সুযোগ্য পুত্র এম. কে জামান এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। আমি(লেখক)উক্ত সভায় একজন শ্রোতা ছিলাম। উল্লেখ্য যে, যেহেতু ‘শহীদ মেহের আলী স্মৃতি পরিষদ’ সংগঠনটি সর্বদলীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতা কর্মীদেরকে নিয়ে গঠিত,তাই সর্বদলের নিকট গ্রহনযোগ্য একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ত্ব যিনি মেহের আলী সম্পর্কে ভাল জানেন এমন কাউকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।
যেহেতু মেহের আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কেন্দ্রীয় কচিকাচার মেলার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং কবি সুফিয়া কামাল ও রোকনোজ্জামান দাদাভাইয়ের সাথে খুবই সুম্পর্ক ছিল তাই সুফিয়া কামালকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। কবি সুফিয়া কামাল সময়ও দিয়েছিলেন কিন্তু নরওয়ে থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে মিটিং পড়ে যাওয়ায় তিনি আর আসতে পারেননি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, স্বাধীনতার তথা অতীতের ইতিহাসকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। মেহের আলীর স্মরণ সভার মাধ্যমে আজ দেশের সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে স্মরণ করতে হবে। তিনি ৮ই এপ্রিল বিকাল ৪টায় নেত্রকোণার স্থানীয় পাবলিক হলে শহীদ মেহের আলী স্মৃতি পরিষদ কর্তৃক মেহের আলীর ২৩তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। জনাব আব্দুল মোমেন বলেন, মেহের আলীর মত একজন সাহসী রাজনীতিবিদ আজকের সমাজে বিরল।
তিনি পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করতে যেয়ে শহীদ হয়েছেন। আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে স্বাধীনতার তথা অতীতের ইতিহাস জানাতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সকল পক্ষের শক্তিকে আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ̄স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, মেহের আলীর স্মরণ সভার মত আরো স্মরণ সভা করতে হবে। তিনি স্মরণ সভার উদ্যেক্তাদের ̄স্বাগত জানান এবং শহীদ মেহের আলীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
সভার প্রধান বক্তা জাতীয় পুরষ্কার “একুশে পদক” প্রাপ্ত সাহিত্ত্যিক এবং বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতাষ্ঠাতা সভাপতি প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক সাংবাদিক জনাব সানাউল্লাহ নূরী বলেন, আজ আমরা যে স্বাধীনদেশের মানচিত্রটি দেখতে পাচ্ছি তা ছাত্র সমাজের, যুব সমাজের তথা স্বাধীনতাকামী সকল মানুষের অবদান। বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি নেত্রকোণার রাজনীতির অতীতের ইতিহাসের চিত্র তুলে ধরেন।তিনি বলেন, “যারা গোটা জাতির উপর আক্রমন চালায়, নির্যাতন করে তারা বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না।স্বাধীনতার প্রাক্কালে আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ মেহের আলীকে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতকদের নেত্রকোণাবাসী কখনও ক্ষমা করেনি।
আমি নেত্রকোনায় থাকাকালীন সে আমার সাথে বিভিন্ন মিটিং মিছিলে অংশগ্রহন করত। মেহের আলী ঘাটের দশকের অন্যতম ছাত্র ও যুব নেতা ছিল। মেহের আলীই প্রখম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগ নেত্রকোণা শাখা প্রতিষ্ঠা করে(জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন)। ঐ সময়ে বঙ্গবন্ধু,ভাষানী প্রমুখ নেতাবৃন্দের মত বড় বড় নেতারাও নেত্রকোণাতে মিছিল মিটিং করতে পারতেন না স্থানীয় মুসলিম লীগের নেতাদের দাপটে।
১৯৫৪ সালে শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য নেত্রকোণাতে মিটিং করতে আসেন। কিন্ত তখনকার স্থানীয় সরকারী দলের নেতারা সে মিটিং করতে দেয় নাই এবং হক সাহেবকে বর্তমানের কৃষি ফার্মের নিকট পিটিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রেখে দেয় । পূর্বে কিন্ত আমাদের কোন নেতারই সাহস ছিলনা সে অবস্থার মোকাবিলা করার। তখন কিন্ত নেতা কর্মীর অভার ছিল না। ছিল সৎ সাহসের অভার। কিন্ত শহীদ মেহের আলী যখন নেত্রকোণার রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন তখন ঐ রকম সব অবস্থার পরিবর্তন ঘটল।
সবাই মেহের আলীকে ভিত্তি করে আন্দোলনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে, মেহের আলী নেত্রকোণার রাজনীতিতে একটি মাইল ফলক হিসাবে চিহিৃত হয়ে থাকবে। মেহের আলীর মত অমর ব্যক্তিত্ত যারা এ দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন তারা এ দেশ ও জাতির অহংকার। তাদের সে নাম ইতিহাসের পাতায় ̄স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। অথচ আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি কোন ব্যক্তিত্তকে আমরা বিস্মৃত হয়ে যাই। দেশ ও জাতিকে সুন্দর করে গড়ার জন্য অতীতের সূর্য সন্তানদেরকে স্মরণ করতে হবে। তাদের গৌরবময় দিনগুলির কথা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আর সে কাজটা আপনাদেরই করতে হবে। যদি না করেন ভবিষৎ প্রজন্ম আপনাদেরকে কোনদিন ক্ষমা করবে না।(দৈনিক দিনকাল ২৫/০৬/১৯৯৪)
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,জেলা গণফোরামের সভাপতি ভাষা সৈনিক একে ফজলুল কাদের বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলীর মত চারিত্রিক গুণাবলী ও নেতৃত্তের অধিকারী মানুষ আজকের সমাজে বিরল। মেহের আলী যাটের দশকে নেত্রকোণার রাজনীতিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছাত্র ও যুব নেতা ছিলেন।তিনি ছাত্রলীগের নেতা হয়েও অন্যান্যদলের নেতা কর্মীদেরকেও দিকনির্দেশনা দিতেন যা সমাজে বিরল।ষাটের দশক থেকে মুক্তিযুদ্ধ র্পযন্ত তার অবদান জাতির ইতিহাসে চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নেত্রকোণার পাশাপাশি সুনামগঞ্জজেলার মধ্যনগর থানার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন।
শত শত মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি মধ্যনগর থানার দুগনৈ গ্রামে তার শ্বশুর জনাব রহমত আলী তালুকদারের ( যিনি সুনামগঞ্জজেলার অত্যন্ত প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য।) বাড়ীতে থাকা খাওয়া ও নিরাপদে মহেশখলা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।তিনি মহেশখলা ক্যাম্পে শত শত মণ ধান চাল পাঠিয়েছেন।কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী মহেশখলা ক্যাম্পের পাশেই শহীদ হয়েছেন।তার অবদান জাতির ইতিহাসে চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক এমপি ভাষা সৈনিক এডভোকেট ফজলুর রহমান খান বলেন,মেহের আলীর নেতৃত্তে মহকুমা ছাত্রলীগ গঠনের পর তিনি সংগঠনটিকে তৃণমুল র্পযন্ত বিস্তৃত করেন এবং ছাত্রলীগকে সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠনে রুপান্তরতি করেন।পরবরতীতে তিনি শ্রমিকলীগ গঠন করেন এবং এটিকেও শক্তিশালী সংগঠনে পরিনত করেন।তিনি কচিকাচার মেলা ও যুবজাগরণ সমিতি গঠনেও প্রধান উদ্যেক্তার ভূমিকা পালন করেন।মূলতঃ৬০-৭১ র্পযন্ত প্রতিটি আন্দোলনে তিনি সফলভাবে নেতৃত্ত দিয়েছেন।তার শূন্যস্থান পূরণ হবার নয়।নিজের জীবনের বিনিময়ে তিনি আমাদেরকে স্বাধীনদেশ উপহার দিয়ে গেছেন।আমরা তার কাছে চিরঞ্চণী।
এ ছাড়াও ২০০৫ সালের ১৯ মে, মঙ্গলবার বিকাল ৪ ঘটিকায় শহীদ মেহের আলী স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে নেত্রকোণা প্রেসক্লাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শামছুজ্জোহার সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় চাকুরীগত কারণে আমি পাবনা থাকায় উক্ত অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারিনি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক এমপি ভাষা সৈনিক এডভোকেট সাদির উদ্দিন আহমেদ ।
এডভোকেট সাদির উদ্দিন আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “শহীদ মেহের আলী ছাত্রজীবনে ছিলেন নেত্রকোণা ছাত্রলীগের এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিলো অপরিসীম। তিনি তাঁর অসাধারণ রাজনৈতিক কৌশলে নেত্রকোণায় গড়ে তুলেছিলেন ছাত্রলীগের শক্তিশালী ভিত্তি।” তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলীছিলেন সৎ ও নির্ভিক ছাত্র ও যুব নেতা। যাটের দশকে নেত্রকোণার সরকার বিরোধী আন্দোলনের ভিত্তি ছিল মেহের আলী।ঐ সময় সরকারী দলের নেতা কর্মী ও প্রসাশন যে লোকটিকে সবচেয়ে বেশি ভয় পেত তিনি ছিলেন মেহের আলী।তার মত সদালাপী,ভদ্র,দূরদর্শী রাজনীতিবিদ আজকের সমাজে বিরল।তিনি ৬০-৭১ র্পযন্ত প্রতিটি আন্দোলনে সফলভাবে নেতৃত্ত দিয়েছেন।তিনি নিজের হাতে যেসকল নেতৃবন্দকে গড়ে তুলেছেন তারা হলেন - বীরমুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু, মোঃ শামছুজ্জোহা (সাবেক আওয়ামীলীগের সভাপতি), জনাব মতিউর রহমান খান, নুরুল আামিন তালুকদার সাবেক সাংসদ, জালাল উদ্দীন তালুকদার সাবেক সাংসদ, গোলাম এরশাদুর রহমান, সাফায়েত আহমেদ খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী মোশারফ হোসেন, জামাল উদ্দীন খান ,গাজী দেলোয়ার হোসেন, হায়দার জাহান চৌধুরী, আলাউদ্দিন খান, বাদল মজুমদার, প্রমুখ।স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তিনি তার সর্বোচচ সম্পদ জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।তার অবদান জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- এডভোকেট জিন্নাতুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমান, এডভোকেট রথীন্দ্রনাথ সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু (পরবর্তীকালের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী), বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসলাম উদ্দিন খান কালা মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাফায়েত আহমেদ খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনিসুর রহমান। এঁরা সকলেই শহীদ মেহের আলী-র নেতৃত্বে একদিন ছাত্র রাজনীতি করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কোম্পানী কমান্ডার সাফায়েত আহমেদ খান তাঁর বক্তব্যে বলেন,নেত্রকোণায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তÍতি লগ্নে শহীদ মেহের আলী’র নিপুণ সাংগঠনিক দক্ষতা ও ভুমিকার কথা উল্লেখ করেন। বস্তত: নেত্রকোণায় ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগ এবং শ্রমিকলীগের রাজনীতির ইতিহাসে শহীদ মেহের আলী ছিলেন এক প্রবাদ প্রতীম প্রাণপুরুষ ।তিনি অন্য একটি ঘটনার বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন,ষাটের দশকের শুরুতে কোন একদিন ঢাকা থেকে সর্বদলীয় নেতাদের একটি দল নেত্রকোনাতে আসেন।সেই দলে কমিউনিসট্ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনি সিং,আব্দুল মমিন ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছিলেন ।আয়ুবের সামরিক শাসন ও মুসলিমলীগের নেতাদের ভয়ে কেউ কারো বাসায় কেন্দ্রীয়নেতাদের নিয়ে সভা করতে রাজি হচ্ছিলেন না।তখন মেহের আলী ভাই মালনী রোডের তাদের পাটের গুদামের অফিসে সভাটি করার প্রস্তাব করেন। সেই সভায় ফজলুল কাদের,আব্দুল মজিদ তারা মিয়া,আব্বাস আলী খান,মেহের ভাই,সাদির উদ্দীন আহমেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।মেহের ভাই কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নীতি নির্ধারণী সভা করছিলেন।আর আমরা দরজায় দাড়িয়ে পাহাড়া দিচ্ছিলাম।আমাদের মতো নেতাদের তখন ভেতরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না।অন্যকে সম্মান দিলে নিজের সম্মান বাড়ে।মেহের ভাইকে সম্মান দিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের সম্মান বাড়বে বৈ কমবে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু,মাননীয় প্রতিমন্ত্রী,সমাজকল্যাণ মন্ত্রানালয়(বর্তমান) বলেন, মেহের আলী ভাই যাটের দশকের নেত্রকোণার রাজনীতিতে অন্যতম ছাত্র ও যুব নেতা ছিলেন।আমরা তার নেতৃত্তে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন এবং ছাত্রনেতা ছিলেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হয়। তিনি নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জোহা ভাই সহ আমাদেরকে নিয়ে তৃণমূল র্পযন্ত ছাত্রলীগকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিনত করেন।তিনি রাজনীতির পশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলেন। প্রধান উদ্যেক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক হিসেবে মেহের আলী ভাই জনাব এন আই খান,আলী ওসমান তালুকদার,খালেকদাদ চৌধুরী প্রমখদের নিয়ে গড়ে তুলেন মধুমাছি কচিকাচার মেলা।
৫৯-৭১ র্পযন্ত প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সফলভাবে নেতৃত্ত দিয়েছেন। জনাব খসরু বর্নণা করেন, কিভাবে তারা মেহের ভাইয়ের নেতৃত্তে মুসলিমলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে মুসলিমলীগের মহকুমা সম্মেলন ভন্ডুল করে দিয়েছিলেন।তিনি দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন ।তার অবদানের কথা জাতির ইতিহাসে স্বরণাক্ষরে লিখা থাকবে।মেহের আলী ভাইয়ের মতো গুণাবলী সম্পন্ন নেতা আজকের সমাজে বিরল। জনাব খসরু বলেন,অতীতের বীর সন্তানদরে কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে বলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমান এই স্মরণ সভায় তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তোলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মহেষখলা ক্যাম্পে মেহের আলী সাহেবের নেতৃত্ব ও দক্ষতার কথা বলে জনাব এরশাদুর রহমান- মেহের আলী সাহেবকে তাঁদের রাজনৈতিক গুরু বলে আখ্যায়িত করেন। উল্লেখ্য, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মহেষখলা ক্যাম্পে মেহের আলী সাহেবকে হত্যা করা হয়েছিলো- যা গোলাম এরশাদুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শামছুজ্জোহা বলেন, মেহের ভাইয়ের হাত ধরে আমি রাজনীতিতে পদার্পন করেছি। তিনি ,নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং আমি প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। আমরা মেহের ভাইয়ের নেতৃত্তে ছাত্রলীগকে তৃনমুল র্পযন্ত নিয়ে গেছি এবং সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠনে পরিনত করেছি।১৯৬০ সালে যখন সামরিক আইনের কারণে রাজনীত নিষিদ্ধ ছিল জনাব আব্দল খালেক, সত্যকিরনাদ্যিত্য প্রমুখদের তত্বধায়নে মেহের ভাই আমাদেরকে নিয়ে সর্বদলীয় গোপন ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংস্থা গড়ে তুলেন।তার মধ্যে অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল।সদা হাস্যময় সদালাপী নির্ভীক নেতা আজকের সমাজে বিরল।
১৯৬২ সালে তিনি জেলে থাকাকালীন পরিকল্পণা করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন করার।পরে জেল থেকে বেরিয়ে ১৯৬৩ সালের জানুয়ারী মাসে তার একক প্রচেষ্ঠায় অন্যান্যদের নিয়ে মধুমাছি কচিকাচার মেলা গঠন করেন। ১৯৬৪ সালের মে মাসে ঢাকা থেকে কবি সুফিয়া কামাল,রোকোন্জামান দাদাভাইদের ,নেত্রকোনাতে নিয়ে এসে অনেক বড় করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন।মেহের ভাই ৫৯,৬০,৬২,৬৪,৬৬,৬৯,৭০,৭১ তথা যাটের দশকের প্রতিটি রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সফলভাবে নেতৃত্ত দিয়েছেন।পরবরতীতে শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এই সংগঠনকটিকেও শক্তিশালী সংগঠনে পরিনত করেন।তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মহেষখলা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন।১৭/০৫/১৯৭১ তারিখে মেহের ভাইকে চক্রান্তকারীরা হত্যা করে।সেদিন তারা আমাকে ও আমিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছিল হত্যার জন্য কিন্ত সৌভাগ্যক্রমে আমরা বেচে যাই।মেহের ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন ।তার অবদান জাতির ইতিহাসে স্বরণাক্ষরে লিখা থাকবে।
এখানে স্মরণীয় যে, ২০০৫ সালের ১৭ মে নেত্রকোণা জেলা শ্রমিকলীগের উদ্যোগে মরহুম রহমত উল্লাহ চৌধুরী ও জেলা শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলীর ৩৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহ্ফিল ও এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। শহীদ মেহের আলী ছিলেন নেত্রকোণা জেলা শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। উক্ত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন- তৎকালীন জেলা শ্রমিকলীগের আহবায়ক জনাব আশরাফ আলী সরকার। উক্ত সভায় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং শ্রমিকলীগের নেতৃবৃন্দ শহীদ মেহের আলীর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আলোকপাত করেছিলেন।
২০১৫ সালে ‘মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী সড়ক’ ফলক উন্মোচনে বর্তমানে নেত্রকোণার মাননীয় সংসদ সদস্য জনাবা হাবিবা রহমান খান (শেফালী ) বলেন,মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। যাটের দশকের নেত্রকোণার রাজনীতির অগ্নপিুরুষ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা,নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,জেলা শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। "মুক্তিযোদ্ধারা তথা জাতির বীর সন্তানেরা কোন পরিবার বা গোষ্ঠীর নয় তারা পুরো বাঙ্গালী জাতির অহংকার" বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলীর কাছে বাংগালী জাতি চিরঞ্চীণী।তার অবদান জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।১৯৬০ থেকে ১৯৭১ সাল র্পযন্ত প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অনন্য ভুমিকা ও মুক্তিযুদ্ধে জীবন বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার স্বীকৃতি স্মরুপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকরের নির্দেশক্রমে নেত্রকোনা পৌরসভার অজহর রোডের মোড় থেকে ইসলামপুরের মোড় র্পযন্ত রাস্তার নাম মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী সড়ক করায় সাবেক মেয়র মতিয়ুর রহমান খান ও বর্তমান মেয়র প্রসান্ত কুমার রায়সহ সকল কমিশনার,স্থানীয় সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান। সেইসাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিশ্বশান্তির অগ্রদূত জননেত্রী শেখহাসিনার সরকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বান্ধব প্রকল্প গ্রহনের জন্য।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদইচ্ছা ছাড়া এ মহতী উদ্যেগ বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না।মিস শেফালী, সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় বীরদের নামে রাস্তাসহ সরকারী ও বেসরকারী স্থাপনার নামরণ করার জন্য আহবান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রবাংলা ও দৈনিক খবর-এর সাংবাদিক জনাব রুহুল চৌধুরীর লিখা থেকে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, রেইনব গ্রুপ অব ইনডাষ্টিজের মালিক,সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন তালুকদারের হল রুমে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তুলে ধরা হল।
“১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে জনাব তালুকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল,জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা কলেজ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নেত্রকোণার ছাত্রছাত্রীদেরকে আমন্ত্রণ জানান। সেই সভায় ডাকসু,জাকসু,ঢামেকুসহ সকল দলের ছাত্রনেতারা উপস্থিত ছিলেন। জনাব তালুকদার হলে আসার পর পরিচয় পর্ব শুরু হয়। পরিচয় পর্বের এক পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মেহের আলীর ছেলে এম কে জামান(বর্তমানে অস্ট্রেলীয়াতে সফল ইন্জিনীয়ার এবং অধ্যাপনায় নিযুক্ত আছেন) তার পরিচয় দেয়।তখন জনাব তালুকদার বলেন,”তার আরেকটা পরিচয় আছে।সে আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় মেহের আলী ভাইয়ের ছেলে।মেহের আলী ভাই নেত্রকোণার রাজনীতির এক উজ্জল নক্ষত্র।ষাটের দশকে যখন পুর্বপাকিস্থানে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তখন তিনি ছাত্র সংস্থা নামে একটি গোপন সংগঠন গড়ে তুলেন।এই সংগঠনে অন্যরা যারা ছিলেন- সর্বজনাব মো: শামছুজ্জোহা, গাজী মোশারফ হোসেন, জামাল উদ্দিন আহমেদ,বিপ¬ব চক্রবর্তী, নুরুল ইসলাম,লুৎফর রহমান খান,আব্দুস সাত্তার প্রমুখ ছাত্রনেতা।পরবর্তিতে তিনি জোহা ভাইকে নিয়ে জেলা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। মেহের আলী ভাইয়ের নেতৃত্তে আমরা সরকার বিরোধী তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলি। জনাব তালুকদার বলেন ,জনাব ফজলুর রহমান খান ছাড়া যত রাজনীতিবিদ নেত্রকোণায় আছে মেহের আলী ভাই সকলের রাজনৈতিক গুরু।তিনি আমাদেরকে রাজনীতি শিখিয়েছেন।শিখিয়েছেন কীভাবে অন্যদলের নেতাদের সাথে সৌর্হাদ্য ও ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়।তিনি ষাটের দশকের প্রতিটি আন্দোলনে নেতৃত্ত দিয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে সকল নেতার্কমী তার কাছে ছুটে যেত পরামর্শের জন্য। তার মত নেতা আজকের সমাজে বিরল।“
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও দৈনিক খবর-এর সাংবাদিক জনাব রুহুল চৌধুরীর লিখা থেকে সাবেক পুলিশের আইজি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাদীস ঊদদীনের একটি সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো। (সাক্ষাৎগ্রহনের সময় উপস্থিত ছিলেন গবেষক,প্রাবন্ধিক আকিম উদ্দীন যিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সংবাদ বিশ্লেষক, ভয়েস অব আমেরিকার ঢাকা সংবাদদাতা গিয়াস কামাল চৌধুরীর ভাগ্নীকে বিয়ে করেন। বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট):
“ঐ সময় সৎ অফিসার হিসেবে পুলিশ বিভাগে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাদীস ঊদদীনের বেশ সুনাম ছিল। সেজন্যই উনার সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়া।তিনি তখনও পুলিশের আইজি হননি।সবেমাত্র Minister of Bangladesh High Commission in India হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে শহীদ মেহের আলীর প্রসঙ্গ আসলে তিনি অকপটে স্বীকার করেন শহীদ মেহের আলীর পরিবারের অবদানের কথা। শহীদ মেহের আলীর বাবা জনাব আক্তার আলী আশ্রয়,অর্থ, লোকবল দিয়ে সহায়তা না করলে আমার মামা সাবেক এমপি আব্দুল খালেক নেত্রকোণার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন না।আমার মামা ১০-১২ বছর শহীদ মেহের আলীদের বাড়ীতে থেকে ছাত্র রাজনীতি হতে দলীয় রাজনীতিতে উঠে আসেন।ঐ বাড়ীটি তখন নেত্রকোণার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছিল।এখানে উল্লেখ্য যে, ঐ সময় জাতীয় পুরষ্কার “একুশে পদক” প্রাপ্ত সাহিত্তিক এবং বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক সাংবাদিক জনাব সানাউল্লাহ নূরী শহীদ মেহের আলীদের বাড়ীতে ছিলেন।তিনি ৮-১০ বছর শহীদ মেহের আলীদের বাড়ীতে ছিলেন। জনাব নূরী পরবর্তীতে জাতীয় অধ্যাপক আবূল কসেমের ভাগনীকে বিয়ে করেন।জাতীয় অধ্যাপক আবূল কাসেম ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক। জনাব নূরীও ভাষা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন । তার নাম জাতির ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লিখা আছে। জনাব নূরী ও আমার মামা সাবেক এমপি আব্দুল খালেক তারা দুজনে মিলে মেহের আলী ভাইকে যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে গড়ে তুলেন।১৭ ই মে ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী মহেষখলা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন কালে শহীদ হন । তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে প্রথম শহীদ। জনাব মেহের আলী ছিলেন যাটের দশকের নেত্রকোণার রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র,নেত্রকোনা মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা,নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি(বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন),জেলা শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,নেত্রকোনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের । ১৯৬৪ সালে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রথম শহীদ মিনারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি,মধুমাছি কচিকাঁচার মেলার প্রধান উদ্যেক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক , এবং জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম সম্পাদক'৭১। তিনি মেজর মোত্তালিব (পরবর্তীতে যিনি সাব সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন), ক্যাপ্টেন গণীসহ শত শত মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন তার শ্বশুর জনাব রহমত আলী তালকদারের বাড়ীতে দুগনৈ গ্রামে । আমার মামা সাবেক এমপি আব্দুল খালেকের কাছে জানতে পারি যে.জনাব মেহের আলী তাঁর শ্বশুড় জনাব রহমত আলী তাং এর নিকট থেকে ১৩০০ মন ধান, ১০০০ মন লাখড়ি ,৩০০ খাওয়ার থালা,৫টি বড় ডেগ ও ৫০টি চামচ মহেষখলা ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন যা কিনা মহেষখলা ক্যাম্প পরিচালনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনাব মেহের আলী ৫৯,৬০,৬২,৬৪,৬৬,৬৯,৭০,৭১ -এর প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সফলভাবে নেতৃত্ত দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে রাজনীতি শিখিয়েছেন।স্বাধীনতার এত বছর পরও তার মত নেতা গড়ে উঠেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও দৈনিক খবর-এর সাংবাদিক জনাব রুহুল চৌধুরীর লিখা থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ধর্মপাশা উপজেলার চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়ালের একটি সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো(সাক্ষাৎ কার গ্রহনের সময় উপস্থিত ছিলেন তৎকলীন ধর্মপাশা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা):
মেহের ভাই আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষক ছিলেন । উনার কাছেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। ১৯৬৫ সালে মেহের ভাই সুনামগন্জ জেলার মধ্যনগর থানার দুগনৈ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে করেন।উনার শ্বশুর জনাব রহমত আলী তালুকদার ছিলেন অত্র অঞ্চলের অত্যন্ত প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তি।সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে মেহের ভাই সরকার বিরোধী আন্দোলনে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করেন।বঙ্গবন্ধুর ৬দফার দাবীসহ ৬৯,৭০,৭১এর আন্দোলন গুলোকে নেত্রকোনার পাশাপাশি এই অঞ্চলেও জনপ্রিয় করে তোলেন।খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি এই অঞ্চলের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেন।তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকিকুর রেজা ভূইয়া ও আমাকে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে মধ্যনগর থানার মধ্যে প্রথম দুগনৈ গ্রামে মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ গঠন করে দেন। পরবর্তীতে তিনি মোঃ আকিকুর রেজা ভূইয়াকে সভাপতি ও আমাকে সহ-সভাপতি এবং বাদল চন্দ্র দাসকে সাধারণ সম্পাদক করে মধ্যনগর থানা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে দেন।
মেহের ভাইয়ের নেতৃত্তে মধ্যনগর থানার ছাত্র ও যুব সমাজকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত করতে থাকি।এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে মেজর জলিল(পরবর্তীতে যিনি সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন) ও ক্যাপ্টেন গণীর নেতৃত্তে কয়েকশ সামরিক কর্মকর্তা ও ই পি আর সদস্য দুগনৈ গ্রামে আসলে মেহের ভাইয়ের নেতৃত্তে উনার শ্বশুর বাড়ীতে কয়েকদিনের জন্য তাদের সকলের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করি এবং নিরাপদে ট্রেনিংয়ের জন্য ইন্ডিয়াতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেই।এছাড়াও মেহের ভাইয়ের নেতৃত্তে আমরা উনার শ্বশুর রহমত আলী তালুকদারের বাড়ী থেকে শত শত মণ ধান, চাল, অন্যান্য সামগ্রী মহেষখলা ক্যাম্পে পাঠাই যাহা ক্যাম্প পরিচালণায় অত্যন্ত গুরুত্ত্বর্প্ণূ ভুমিকা পালন করে। আমি ও আকিকুর রেজা ভূইয়া ২০০ যুবককে নিয়ে মহেষখলা যাওয়ার পথে জানতে পারি যে, মেহের ভাইকে চক্রান্তকারীরা হত্যা করেছে ।
এই সংবাদ শুনার পর, আমারা ভয়ে বাড়ী ফিরে যাই।কিন্তু আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকি এবং মেহের ভাইয়ের হত্যার বিচারের দাবী জানাতে থাকি। মেহের ভাইকে হত্যার পরপরই চক্রান্তকারীরা তার শ্বশুর বাড়ীটি দুই দুই বার লুট করে। লুটেরারা তাদের প্রায় সবকিছু নিয়ে যায়। বীরমুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি জানতে পেরে অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করেন। দ্রত সেসব উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন। যার বর্ণনা বাংলা একাডেমী ও একুশে পদক প্রাপ্ত জাতীয় সাহিত্যিক ও মহেষখলা ক্যাম্পের পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য জনাব খালেকদাদ চৌধুরী তার শতাব্দীর দুই দগিন্ত বইতে লখিছেনে। মেহের ভাই স্বাধীনতার জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। তার অবদান জাতির ইতিহাসে আজীবন লিখা থাকবে। চলবে…….
লেখক: অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার।
প্রান্ধিক, ঐপন্যাসিক, গল্পকার ও কবি। সভাপতি: রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি, সম্পাদক: বিজয় ৭১ (ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা)
এই লেখকের লেখা আরও পড়ুন…..
মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সংগঠক: ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ- অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার
স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী (পর্ব-১)
স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী (পর্ব-২)
আরও পড়ুন……
ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি ও ৭১’- র মুক্তিযুদ্ধ : বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
শহীদ মেহের আলী একটি নাম, একটি ইতিহাস : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধু: বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
নেত্রকোণার রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ মরহুম জননেতা আব্দুল খালেক এমপি
ইমেরিটাস এডিটরঃ দিলওয়ার খান
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মুহা. জহিরুল ইসলাম অসীম
বার্তা সম্পাদকঃ শরীফা অসীম বর্ষা
অস্থায়ী কার্যালয় : এআরএফবি ভবন, ময়মনসিংহ রোড, সাকুয়া বাজার, নেত্রকোণা সদর, ২৪০০
ফোনঃ ০১৭৩৫ ০৭ ৪৬ ০৪, বিজ্ঞাপন: ০১৬৪৫ ৮৮ ৪০ ৫০
ই-মেইলঃ netrokonajournal@gmail.com
©২০২০-২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত