স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী শহীদ মেহের আলী  (পর্ব-১)

‘‘মেহের আলী আমাদের লোক। তিনি আওয়ামীলীগের একজন অত্যন্ত সৎ ও নির্ভীক কর্মী। মৃত্যুকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও নেত্রকোনা মু্ক্তিসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য,জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। যদি আগামীতে সময় ও সুযোগ পাই তবে তাকে অবলম্বন করে একটা উপন্যাস লেখার ইচছা রইল’’

প্রকাশিত: ২:৪৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০২৩
প্রচ্ছদ: অসীম

নেজা ডেস্ক :
বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ বিপ্লব হলো- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। আমি মনে করি বিংশ শতাব্দীর মানব ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম অর্জন হলো একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুর রহমান এঁর আহবানে দুই লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেছেন, অনেকে দিয়েছেন আত্মাহুতি, নির্যাতিতা হয়েছেন দু’লক্ষ মা-বোন, পুড়েছে ঘর-বাড়ী; শহীদ হয়েছেন ত্রিশ লক্ষ মানুষ! তাঁদেরই একজন শহীদ হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রদ্ধেয় মেহের আলী। একাধারে তিনি ছিলেন ছাত্রনেতা, সাংস্কৃতিক সংগঠক, আওয়ামীলীগের নেতা, বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সৈনিক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের নেত্রকোনার অহংকার জাতীয় সাহিত্যিক বাংলা একাডেমী ও একুশে পদক প্রাপ্ত লেখক জনাব খালেকদাদ চৌধুরী তার অমরগ্রন্থ “শতাব্দীর দুই দিগন্ত’’ বইটিতে জনাব মেহের আলী সম্পর্কে লিখেছেন: ‘‘মেহের আলী আমাদের লোক। তিনি আওয়ামীলীগের একজন অত্যন্ত সৎ ও নির্ভীক কর্মী। মৃত্যুকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও নেত্রকোনা মু্ক্তিসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য,জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। যদি আগামীতে সময় ও সুযোগ পাই তবে তাকে অবলম্বন করে একটা উপন্যাস লেখার ইচছা রইল’’

আমি জনাব খালেকদাদ চৌধুরীর লেখা থেকে অনুপ্রানীত হয়ে মেহের আলী সম্পর্কে আরো গভীরভাবে অনুসন্ধান করি। দীর্ঘ গবেষণার পর আজ আমি এই প্রবন্ধটি লিখতে বসেছি।

সংক্ষিপ্ত পরিচয় :  
তাঁর প্রকৃত নাম ছিলো মো: মেহের আলী, পিতা : মো: আক্তার আলী, মাতা:  মোছাম্মৎ তুলাজান বিবি। জনাব আক্তার আলী  অত্যন্ত ধার্মিক, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন। জনাব আক্তার আলী নেত্রকোনা শহরে অনেক মুল্যবান সম্পত্তি বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা স্থাপনরে(চক বাজার ও ইসলামপুর জামে মসজদি) জন্য দান করে গেছেন।দরীদ্র মেধাবী ছাত্রদের লেখাপড়ার সুবন্দোবস্ত করে দিয়েছেন যাদের অনেকেই জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। ১৯৪১ সালে(সত্যিকারের জন্ম তারিখ সম্ভবত ১৯৩৫ কারণ তিনি শামছজ্জোহার চেয়ে (১৯৩৮) ৪-৫ বছরের বড় ছিলেন) নেত্রকোণা মিউনিসিপ্যালিটির ইসলামপুরে মেহের আলীর জন্ম হয়। তাঁর যোগ্য সহধর্মিনী ছিলেন রওশন আরা চৌধুরী।

আমি শ্রদ্ধার সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই মহীয়সী নারীর কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধা  শহীদ মেহের আলীর ডায়েরীটিকে সংরক্ষণ করার জন্য। ডায়েরীটি নেত্রকোনার ইতিহাসে অমূল্য সম্পদ হিসেবে থাকবে। তিনি তাদের মালনী রোডের বাসায় থেকে  তার সফল ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক জীবন গড়ে তোলেন। শহীদ মেহের আলীর সুযোগ্য পুত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মেধাবী ছাত্রনেতা ইন্জনিীয়ার জামান ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের Computer Science and Engineering বিভাগ হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে  সেখানে শিক্ষকতা শুরূ করেন।ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ে থাকাকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বশান্তির অগ্রদূত জননেত্রী শেখ হাসিনার computer Village গড়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার নেতৃত্তে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে প্রতিটি হলে হলে কম্পিউটার ল্যাব এবং ২০০ শ কম্পিউটার নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় ল্যাব স্থাপন করা হয়। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০০০ ছাত্র-ছাত্রীকে আর্ন্তজাতকি মানের বিভিন্ন  professional computer programing–এ প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা দেশ বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানীতে সুনামের সাথে কাজ করছে।এই প্রতিষ্ঠানটির সফলতা নিয়ে তখন প্রায় প্রতিটি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক(বিটিভি,একুশে টিভি,অঞঘ বাংলা) মিডিয়াতে প্রতিবেদন ছাপা হয়।

South East Asia Journalist Association -এর তৎকালীন সভাপতি অষ্ট্রেলীয়ান সাংবাদিক  ইন্জিনীয়ার জামানের সাক্ষাৎকার  গ্রহন করেন । সেই সময় উপস্থিত ছিলেন বাসসের প্রখ্যাত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান চৌধুরী। এই প্রতিষ্ঠানটির অনুকরনে তখন বিভিন্ন বিশ্বদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। ঐসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্যরা বিভিন্ন সভা সেমিনারে প্রতিষ্ঠানটির উদাহরণ প্রদান করতেন। বাংলাদেশে কম্পিউটার শিক্ষা আন্দোলনে তার অবদান চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে। বর্তমানে জনাব জামান অস্ট্রেলীয়াতে সফল ইন্জিনীয়ার  এবং অধ্যাপনায় নিযুক্ত আছেন । বিশ্বমানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় আর্ন্তজাতকি সংস্থা  Amnesty International ও Green Peace -এর সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। “Bangladesh Martyrs Memorial Research Center” and “Bangladesh Muktijudho Research Institute” প্রতিষ্ঠান দুটির মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিয্দ্ধ বিষয়ক গবেষণা, জাতির বীর সন্তানদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে সহায়তা ও তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে কাজ করে যাচ্ছেন। ইন্জিনীয়ার  জামান বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ইন্সটিটিউট পদক নামে একটি পদক চালু করেন।পাশাপাশি বাংলাদেশে সমাজসেবা ও সমাজ সংস্কারে ভুমিকা পালন করছেন। আরেক সন্তান এডভোকেট ।

শিক্ষাজীবন : মেহের আলী  Anjuman Adarsha Government High School -এ শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে  তিনি স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দত্ত উচচ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। অতপর নেত্রকোণা কলেজ থেকে উচচ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি.এস.সি সমাপ্ত করার পর এমএসসি-র ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কিংবদন্তী ছাত্রনেতা শহীদ মেহের আলী সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. ফজলুর রহমানের ছাত্র ছিলেন।একই এলাকায় বাড়ী হওয়ায় তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। মেহের আলীর সাথে তিনি প্রথমে গোপনে ও পরে প্রকাশ্যে স্বাধীকার আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেন।

রাজনীতি  ও সংস্কৃতি : মেহের আলী  ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। মেহের আলীর   বাড়ীটি রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি ঐতিহবাহী বাড়ী। এ বাড়ী থেকেই নেত্রকোনা তেভাগা আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ত দিয়েছেন  তমদ্দুন মজলিসের নেত্রকোনা শাখার সভাপতি, “একুশে পদক” প্রাপ্ত সাহিত্যিক এবং বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতাষ্ঠাতা সভাপতি ভাষা সৈনিক সাংবাদিক জনাব  সানাউল্লাহ নূরী। এই বাড়ীতে তিনি ৮-১০ বছর ছিলেন।তিনি আঞ্জুমান স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। জনাব নূরী পরবর্তীতে জাতীয় অধ্যাপক আবূল কসেমের ভাগনীকে বিয়ে করেন।জাতীয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবূল কাসেম ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক। জনাব নূরীও ভাষা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন । তার নাম জাতির ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লিখা আছে। মেহের আলীর সাথে জনাব নুরীর সম্পর্কটা ছিল বড় ভাইয়ের মতো।জনাব নুরী ঢাকায় চলে যাবার পরও মেহের আলীর সাথে গভীর যোগযোগ ছিল। মেহের আলী স্কুল কলেজে পড়াকালীন ঢাকায় গেলে জনাব নুরীর বাসায় থাকত।  পরবর্তীতে মেহের আলী জনাব নুরীর বাসায় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। জনাব নুরীর মাধ্যমে মেহের আলী যে সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যে আসেন তারা হলেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবূল কাসেম(ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক -জনাব নুরীর মামা শ্বশুর), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কবি জসীমউদ্দীন, আর্টিষ্ট কামর“ল হাসান,সওগাত সম্পাদক মো নাছির উদ্দীন,ইত্তেফাক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া,শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেন,ডঃ কুদরত-ই-খুদা, লাঠিবাহিনীর সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক চৌধুরী, শিক্ষাবিদ সেলিনা বাণু প্রমুখ। ঐ সকল জাতীয় ব্যক্তিদের দ্বারা মেহের আলী সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয় । তার ডায়েরীর উদ্ধারকৃত কয়েকটি পাতায় লিখিত কবিতা ও গল্প  থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে অনেক প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক নেত্রকোনা সফরের সময় এই বাড়ীতে এসেছেন।

নেত্রকোণা  মুসলিমলীগ ছাত্রলীগের সভাপতি, নেত্রকোণা  জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী সাবেক এম.পি আব্দুল খালেক সাহেবও দীর্ঘ ১০/১২ বছর এই বাড়ীতে ছিলেন এবং আঞ্জুমান স্কুল ও নেত্রকোনা কলেজে পড়াশোনা করেছেন। এখান থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতি হতে দলীয় রাজনীতির নেতৃত্বে উঠে আসেন। মুসলিমলীগ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক, আওয়ামীলীগের দীর্ঘ সময়ের  সভাপতি সাবেক এম.পি জনাব ফজলুর রহমান খানসহ বিরোধী দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এ বাড়ী থেকে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। ভাষা সংগ্রামের জন্যে রাষ্ট্রিকিট হওয়া একমাত্র বাংগালী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ভাষা সৈনিক আজিম উদ্দীন আহমেদও দীর্ঘ ২১/২২ বছর (১৯৪৭-১৯৬৯ র্পযন্ত)  এই বাড়ীতে ছিলেন । এরপর তিনি জারিয়ায় চলে যান এবং জারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। ঐ বাড়ীটি তখন নেত্রকোণা  জেলার  রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছিল। জনাব নূরী ও সাবেক এমপি আব্দুল খালেক তারা দুজনে মিলে মেহের আলীকে যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে গড়ে তুলেন।ছোটবেলা থেকেই মেহের আলী   মেধাবী ছাত্র বলে পরিচিত ছিলেন। তাঁর ছিলো সাংগঠনিক দক্ষতা এবং নেতৃত্বের গুণ। মেহের আলী ঐ সকল বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিকট রাজনৈতিক তালিম নিয়েছেন। জ্ঞান নিয়েছেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, স্বাধীকার ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা সমসাময়িক অন্যান্যদের চেয়ে বাংগালীর স্বাধীকার ও রাজনীতি বিষয়ে একটু বেশিই সচেতন ছিলেন তিনি। তাই স্কুলে পড়া অবস্থায়ই  স্বাধীকার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।  দত্ত উচচ বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে মেহের আলী তমদ্দুন মজলিসের নেত্রকোনা শাখার সভাপতি জনাব নূরী, সাবেক এম.পি আব্দুল খালেক ও আজিম উদ্দীন আহমেদর সাথে বাংলা ভাষার দাবীতে বিভিন্ন মিছিলে অংশগ্রহন করেন।১৯৫২ সালে ভাষার দাবীতে আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন শহীদ মেহের আলী দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ২২ ও ২৩ শে ফেব্রুয়ারী নেত্রকোণায় দত্ত উচচ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মিছিলে অংশ গ্রহণ করেন ।“রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই “ শ্লোগানে রাজপথ কাপিয়েছেন।  যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে সাবেক এম.পি আব্দুল খালেক ও ভাষা সৈনিক আজিম উদ্দীন আহমেদের সাথে  তিনি প্রচারভিযানে অংশ গ্রহন করেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে,৫০-এর দশকে  নেত্রকোনায়  স্বাধীকার আন্দোলনে ভাষা সৈনিক জনাব  সানাউল্লাহ নূরী ও মেহের আলীর অবদানের কথা ইতিহাসে অনুচ্চারিত রয়ে গেছে। অথচ এরা দুজনেই সর্বজনাব এন আই খান, এডভোকেট ফজলুর রহমান খান, জনাব আব্দুল খালেক, জনাব খালেকদাদ চৌধুরী, ডা. জগদীশ দত্ত, এডভোকেট একে ফজলুল কাদের, মাওলানা ফজলুর রহমান খান,হাবিবুর রহমান খান, সত্যকিরণ আদিত্য,ওয়াজেদ আলী প্রমুখদের সাথে রাজনীতি করেছেন।  ভাষা সৈনিক জনাব  সানাউল্লাহ নূরী ও মেহের আলী দুজনেই জাতীয় পর্যায়ে স্বাধীকার আন্দোলনে অবদান রেখেছেন।( কিন্তু মেহের আলীর সমসাময়িক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্র নেতা নেত্রকোনার রাজনীতিতে জড়িত না থাকায় বা কেউ এই বিষয়টি নিয়ে গবেষনা না করায়  মেহের আলীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্পর্কে বিশদ জানা যায়নি। তবে গবেষনা চলছে একদিন সে ইতিহাস প্রকাশিত হবে এবং তা আমাদের নেত্রকোনার ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করবে।) ১৯৫৯-৬০ সালে মার্শাল’‘ল’ বিরোধী আন্দোলনের সময় কিংবদন্তী ছাত্রনেতা জনাব মেহের আলী সর্বজনাব জামাল উদ্দিন আহমেদ, গাজী মোশারফ হোসেন, টি.এ রহমত উল্লাহ, নুরুল ইসলাম, লুৎফর রহমান খান, আব্দুস সাত্তার প্রমুখ নেতাদের নিয়ে ছাত্র সংস্থা নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেন । তৎকালীন নেত্রকোণার ছাত্র সংস্থার ভূমিকা উল্লেখ করার মত।

এই ছাত্র সংস্থার ব্যানারেই ‘ছাত্র ঐক্য জিন্দাবাদ’ শ্লোগানকে সামনে রেখে ও গোপণীয়তা বজায় রেখে মার্শাল’‘ল’ বিরোধী বিভিন্ন ভাষার হাতের লেখা পোস্টার রাতের অন্ধকারে শহরে সাঁটিয়ে দিয়ে জনমনে আলোড়ন সৃষ্টি করে এক ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে নেত্রকোণার ছাত্র সংস্থা নামে এই সংগঠনটি। নেত্রকোণা ছাত্র আন্দোলনকে সামনে রেখে এই সংগঠনটি প্রাথমিক পর্যায়ে গোপনে, পরবর্তীতে প্রকাশ্যে ছাত্রদেরকে সংগঠিত করে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে শুরু করে। সেই সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা যেমন- আব্দুল খালেক, সত্যকিরণ আদিত্য,ওয়াজেদ আলীসহ প্রমুখ এই ধরনের প্রক্রিয়ার নেপথ্যে কাজ করেছিলেন। এরপর ১৯৬২ সালে নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে   জনাব মেহের আলী ও জনাব শামসুজ্জোহাকে প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী করে কমিটি করে দেয়া হয়(জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন)। ঐ কমিটির অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্যবৃন্দ যারা ছিলেন তারা হলেনঃ সর্বজনাব জামাল উদ্দিন আহম্মেদ, বিপ্লব চক্রবর্তী, মতিয়র রহমান খান, শহিদ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল ওয়াহেদ, আ: মান্নান, আব্দুর রহমান, আলাউদ্দিন খান, আশরাফ আলী খান খসরু, হায়দার জাহান চৌধুরী (লেখক), ধীমান রঞ্জন বিশ্বাস (ভারত প্রবাসী)।  শুরু হয় নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন জেলা ছাত্রলীগের অভিযাত্রা। এই কমিটি বহাল থাকে ১৯৬৬ সালে আহ্ববায়ক কমিটি গঠন হওয়া পর্যন্ত। জনাব মেহের আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবার পর সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় জনাব জামাল উদ্দিন আহম্মেদকে। চলবে…….

লেখক: অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার।
প্রান্ধিক, ঐপন্যাসিক, গল্পকার ও কবি। সভাপতি: রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি, সম্পাদক: বিজয় ৭১ (ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা)

এই লেখকের লেখা আরও পড়ুন…..
মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সংগঠক: ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ- অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার

আরও পড়ুন……
ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি ও ৭১’- র মুক্তিযুদ্ধ : বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
শহীদ মেহের আলী একটি নাম, একটি ইতিহাস : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
নেত্রকোণায় বঙ্গবন্ধু: বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক : বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী
নেত্রকোণার রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ মরহুম জননেতা আব্দুল খালেক এমপি