স্মৃতিতে অম্লান ডাঃ আখ্লাকুল হোসাইন আহমেদ
৫২ এর প্রসব বেদনা থেকে জাতির পিতার সুযোগ্য নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে যে ফুটফুটে নবজাতক বাংলাদেশের জন্ম সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন মহান সংগঠক ছিলেন প্রয়াত জননেতা ডাঃ আখ্লাকুল হোসাইন।
আমার বাবা (প্রফুল্ল সরকার) ছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তির সংগ্রামে অবদান রাখতে গিয়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কতৃক রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় ৩ মাস জেল খেটেছেন সহ্য করেছেন অমানুষিক নির্যাতন,পাক হানাদারদের গুলির আঘাত কিংবা হত্যা চেষ্টা আমার বাবাকে আদর্শচ্যুত করতে পারেনি। পরম প্রাপ্তি হিসেবে জীবন-দশায় মিলেছে বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃতি আর সমবেদনা যা নিয়ে আজও গর্ববোধ করেন।
তাই সে সময়কার গল্প গুলো শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। বাবার মুখে প্রায়শই দেশমাতৃকার তরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহান মুক্তিসংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়া অকুতোভয় সৈনিকদের গল্পগুলো শুনতে পাই । তেমনি এক বীর সন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত জননেতা ডাঃ আখ্লাকুল হোসাইন আহমেদ।
প্রয়াত শ্রদ্ধেয় জননেতা ডাঃ আখ্লাকুল হোসাইন আহমেদ ১৫ অক্টোবর ১৯২৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং মৃত্যুবরণ করেন ২৮ আগস্ট ২০১২ সাল।
ডাঃ আখ্লাকুল হোসাইন আহমেদ নেত্রকোণা জেলার একজন সুচিকিৎসক ছিলেন, ছিলেন একজন শুদ্ধ রাজনীতিবিদ । যিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করে তুলতে উনার যে অবদান তা কখনো ভুলবার মতো নয়।
তিনি ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তিনি বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ৫২ এর প্রসব বেদনা থেকে জাতির পিতার সুযোগ্য নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে যে ফুটফুটে নবজাতক বাংলাদেশের জন্ম সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন মহান সংগঠক ছিলেন প্রয়াত জননেতা ডাঃ আখ্লাকুল হোসাইন। স্বাক্ষর রেখেছেন পবিত্র সংবিধানে।
নেত্রকোণা জেলার পূর্বাঞ্চলের এই মহান মানুষটিকে ধনী- গরিব,জোয়ান -বৃদ্ধ, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ এক নামে চিনতেন, জানতেন এবং তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হিসেবে সর্বদা তাদের প্রিয় আখ্লাক ভাইকে পাশে পেতেন। আমার বাবাও উঁনাকে ডাকতেন আখ্লাক ভাই এবং উঁনি বাবাকেও বেশ স্নেহ করতেন, উঁনার সাথে বিভিন্ন সুখ-স্মৃতি মনে হলে এখনো বাবা’র দু’চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে । ডাঃ আখ্লাকুল হোসাইন আহমেদ এঁর মতো মানুষদের আত্মার মৃত্যু হয় কিন্তু উদার এবং নৈতিক কর্মগুণে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকেন যুগে-যুগে। ডাঃ আখ্লাকুল হোসাইন সর্বোপরি ছিলেন একজন উচ্চ আদর্শ সম্পন্ন পরিচ্ছন্ন ইমেজের শুদ্ধ রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব।
আজ ২৮ আগস্ট তাঁর ১১ তম মৃত্যুবার্ষিকী । পরম শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করছি জাতির শ্রেষ্ট সন্তানকে, উঁনার অমর স্মৃতির প্রতি অতল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
বেদনাস্নাত এই দিনে আজকের তরুণ প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ থাকবে আমরা যেন লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে বঙ্গবন্ধু কন্যার সুপরিকল্পিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মানের দিপ্ত শপথে বলিয়ান হই এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামে লিপ্ত অকুতোভয় বীর সৈনিকদের আদর্শ মুখে নয় বুকে ধারণ করি।
লেখকঃ
শুভ সরকার
সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
নেত্রকোণা জেলা শাখা।