হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু : বাম্পার ফলনের আশা
নেজা ডেস্ক রিপোর্টঃ
নেত্রকোনায় এবার আগাম জাতের বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। বোরো জমি গুলো এখন সোনালী রঙ ধারণ করেছে। জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের মখে হাসির ঝিলিক।
নেত্রকোনা জেলায় আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবং প্রয়োজনমত রোদ এবং বৃষ্টির পানি পাওয়াতে বোরো জমিগুলো যেমন দ্রুত সতেজ হয়েছে, তেমনি দ্রুত ধান পেকেছে। তবে যে কৃষকরা আগে ব্রি-২৮ লাগিয়েছিলেন, তাদের খেতের বোরো ধান আগাম পেকেছে এবং তারা এখন সেই ধান কাটছেন এবং মাঠেই বিক্রয় করছেন। তবে এবার ব্রি-২৮ এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ ধান আবাদ হয়েছে বেশী। কারণ ব্রি-২৮ এর কার্যকারিতা আগের মত নেই বলে কৃষিবিদরা জানিয়েছেন। সেই ব্রি-৮৮ ধানও কাটা হচ্ছে অল্প অল্প করে।
নেত্রকোনার হাওর উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরীতে এরই মধ্যে কোন কোন এলাকায় এই আগাম পাকা বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। সামগ্রিকভাবে ধান কাটা শুরু হবে আরও ১০ থেকে ১৫দিন পর। আর এই সময়ের মধ্যেই হাওর এলাকাসহ জেলার সকল উপজেলায় বোরো জমির ধান পেকে যাবে। জেলার সব উপজেলায় বিশেষ করে হাওর এলাকায় এরই মধ্যে দ্রুত ধান কাটার জন্য কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিনও গ্রামে গ্রামে চলে যাচ্ছে। হাওরের ধান কাটার জন্য প্রস্তুত ৭৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন। এই সমস্ত হারভেস্টার মেশিন ধান কাটায় লেগে পড়বে।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রস্রাণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা- ৪০ হাজার ৯শ ৭০ হেক্টর, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮১ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন চাল। আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার ৭০ হেক্টরে। সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ধান। সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ৮শ ৪৬ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৭ ভাগ ধান কাটা হয়েছে।
নেত্রকোনার বড় হাওর মোহনগঞ্জের ডিঙাপোতা ও খালিয়াজুরীর রসুলপুর হাওর সরেজমিনে ঘিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। হাওরেই কৃষকরা উৎপাদিত ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। ধামও ভাল পাচ্ছেন তারা। কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সাথে। মোহনগঞ্রে বেথাম গ্রামের কৃষক জাহেদ মিয়া বলেন, আমার ৮ কাটা জমিতে ৮০মন ধান হয়েছে। ১০০০/- টাকা মন ধরে ধান বিক্রি করেছি। একই গ্রামের দুলাল মিয়া বলেন, ১০ কাটা জমিতে ধান লাগাইছিলাম। ধামও খুব ভাল পাইছি। আর কয়েকদিন আবহাওয়া ভাল থাকলে সুন্দরমত ধান ঘরে তুলতে পারবে এলাকার কৃষকরা।
খালিয়াজুরীর রসুলপুরের কৃষক আবদুল খালেক এবং আলফাজ উদ্দিন বলেন বলেন, এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। এরই মধ্যে ধান পাইক্যা গেছে। কাটাও শুরু হয়ে গেছে। আগামী ৮- ১০ দিনের মধ্যে হাওরের বোরো ধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে হাওরগুলোর বোরো ফসল এবার ভালো হবে বলে তারা মন্তব্য করেন।
বেলার নেটওয়ার্ক সদস্য দিলওয়ার খান বলেন, এ বছর প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হওয়ায় বোর ধানেম্ভাল ফলন হয়েছে। বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় কৃষকের মূখে হাসি ফুটেছে। এবার জেলার হাওরে ফসলের দামও ভাল পেয়েছেন কৃষকরা।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, আগাম জাতের বোরো ধান কাটা প্রাথমিক ভাবে শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ৭ শতাংশের মত ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে পুরো দমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। এখন তেমন বৃষ্টির দরকার নাই। কারণ, ঝড় বৃষ্টি হলে ধান গাছ মাটিতে পড়ে যাবে এবং ক্ষতি হবে। জেলায় এবার সর্বোচ্চ ৭৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা সহবে। এই সমস্ত মেশিনের অধিকাংশ এলাকায় পৌছে গেছে এবং পুরো ধান কাটার সময় সকল মেশিন জমিতে পৌছে যাবে। এছাড়া ধান কাটার জন্য নিয়মিত, অনিয়মিত এবং বহিরাগত মিলে প্রায় ১৬ হাজার ৭শত ধান কাটা শ্রমিক নেত্রকোনায় বোরো কাটবে।
নেত্রকোনা জেলা পানি উন্নয়ন রেবার্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, নেত্রকোনা জেলায় এবার সকল ডুবন্ত ফসল রক্ষা বাঁধ যথাসময়ে সংস্কার করা হয়েছে। তাই এবার আগাম বন্য্যায় বোরো ফসলের আর ক্ষতির সম্ভবনা নাইা।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক, জেলা বীজ ও সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি শাহেদ পারভেজ জানান, নেত্রকোনায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এরমধ্যে হাওর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। যথাসময়ের মধ্যে যাতে কৃষকরা ধান কাটতে পারে ব্যবস্থা নিতে সকল প্রকার সহায়তার জন্য সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন। এখন বড় ধরনের দুর্যোগ না হলে জেলায় বোরো বাম্পার ফলন হবে।