২০২৫-২৬ সেশনে জামায়াতে’র নেত্রকোণা জেলা আমীর নির্বাচিত ছাদেক আহমাদ হারিছ

প্রকাশিত: ১১:২৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
আগামী ২০২৫-২৬ সেশনের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেত্রকোণা  জেলা শাখার  আমীর হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক মাওলানা ছাদেক আহমাদ হারিছ।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর মগবাজারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে এ নাম ঘোষণা করেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্যরা।

বৈঠকে ডা. শফিকুর রহমান ২০২৫-২০২৬ কার্যকালের জন্য নির্বাচিত জেলা ও মহানগরী আমীরদের নাম ঘোষণা করেন।

এর আগে গত ৪ অক্টোবর (শুক্রবার) সংগঠনটির নেত্রকোণা জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় ও আমির অধ্যাপক মাওলানা ছাদেক আহমাদ হারিছের সভাপতিত্বে নেত্রকোণা পাবলিক হলে অনুষ্ঠিত রুকন সম্মেলনে জেলার কর্মপরিষদ সদস্য, জেলা শুরা সদস্যবৃন্দ, উপজেলা আমির ও সেক্রেটারিবৃন্দ, মহিলা রোকনসহ সকলের উপস্থিতিতে গোপন ভোটে জেলা আমির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, ময়মনসিংহ অঞ্চল পরিচালক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া।

উল্লেখ যে, মাওলানা হারিছের গ্রামের বাড়ী নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার হোগলা ইউনিয়নের কালিহরকান্দা গ্রামে। রাজনৈতিক ও পেশাগত কাজের সুবিধার্তে তিনি পূর্বধলার রৌশনারা রোডে পরিবার নিয়ে নিজ বাসায় বসবাস করেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, জেল-জুলুম সহ্য করে তিনি এ পর্যন্ত এসেছেন। ছাত্র-জীবনে ১৯৮৮সালে পূর্বধলা হোছাইনীয়া মাদরাসায় অধ্যয়নকালে বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। পরে ১৯৯০সালে শিবিরে সাথী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং উপজেলা ছাত্রশিবিরের বায়তুল মাল সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে পূর্বধলা উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে মোমেনশাহীর কাতলাসেন মাদরাসায় আলীমে অধ্যয়নকালে সেখানে আলীম উপ-শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে ফাজিলে অধ্যয়ন কালে তিনি শিবিরের সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং সাথী শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৫-৯৭ পর্যন্ত নেত্রকোণা জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালের ২২ জানুয়ারী তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং একই বছরে তিনি রোকনের শপথ গ্রহণ করেন। ওই সময় তিনি জেলা কর্মপরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯সালে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পূর্বধলা উপজেলা শাখার সভাপতি ও আমীর নির্বাচিত হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০সালে জেলা জামায়াতের এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী এবং ২০১১ সালে সেক্রেটারী নির্বাচিত হন। তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত জেলা জামায়াতের সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০২০-২০২৩ সাল পর্যন্ত জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ছিলেন ও পরে ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪সালে তিনি প্রথম বারের মত নেত্রকোণা জেলা জামায়াতের আমির নির্বাচিত হন এবং কেন্দ্রীয় সুরার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সবশেষ গত ৪ অক্টোবর নেত্রকোণা জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে ২০২৫-২৬ সেশনের আমির নির্বাচনে গোপন ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষা জীবনে তিনি ১৯৯১ সালে দাখিল, ১৯৯৩ সালে আলিম, ১৯৯৫ সালে ফাজিল ও ১৯৯৭ সালে এন আকন্দ কামিল মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেন। সাধারণ শিক্ষায় তিনি নেত্রকোণা সরকারি কলেজ থেকে বিএ (প্রাইভেট) ও পরবর্তীতে আনন্দমোহন সরকারি কলেজ থেকে ২০০১ সালে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে মাষ্টার্স সম্পন্ন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি প্রথমে পূর্বধলা উপজেলার ধারা দাখিল মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত সুপার পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সেখান থেকে হিরন্নপট্টি ফাজিল মাদরাসায় আরবী বিষয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। বর্তমানে একই প্রতিষ্ঠানে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রতিপক্ষের অনেক মামলার শিকার হয়েছেন। এসব মামলায় জেলও কাটতে হয়েছে তাকে।

জেলা জামায়াতের আমির নির্বাচিত হওয়ায় তার অভিব্যক্তি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে জামায়াতের কোন পদে নির্বাচিত হওয়া কোন গৌরবের বিষয় নয়। আমি যে পদে নির্বাচিত হয়েছি সেই পদের যোগ্য আমি নই এর পরও দায়িত্ব যেহেতু এসেছে, আল্লাহর সাহায্য ও সকলের পরমর্শ এবং সহযোগিতায় নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকব। এ সময় তিনি জুলাই আগষ্টে জালিম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের আন্দোলনে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের শাহাদাতের মর্যাদা, সুস্থ্যতা ও পরিবারে প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

নেত্রকোণা জেলার সর্বস্তরের দায়িত্বশীল ও জনশক্তির প্রতি জেলা জামায়াতের আমিরের আহবান, সবাইকে আল্লাহর সন্তোষ্টি ও নিজের মান উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে। এছাড়া সংগঠনের সকলপর্যায়ে যোগ্যনেতৃত্ব তৈরী করে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী আগামী নির্বাচনে উপযোগী পরিবেশ তৈরীতে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে সচেষ্ট হতে হবে।